গোদাগাড়ীতে কারাম উৎসবে মাতোয়ারা ওঁরাও জনজাতি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২০; সময়: ৭:৩৯ অপরাহ্ণ |
গোদাগাড়ীতে কারাম উৎসবে মাতোয়ারা ওঁরাও জনজাতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, গোদাগাড়ী : আদিবাসীদের স্বতন্ত্র ভাষা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আদিবাসী জাতির আত্মপরিচয়” এই স্লোগানকে ধারণ করে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যাহী ‘কারাম’ উৎসবে মেতে উঠেছিলো। শুক্রবার (২ অক্টোবর) উপজেলার দিঘরী রাজা পরিষদের আয়োজনে ও সিসিবিভিও-রাজশাহী, কিরণ সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সংস্থা ও রক্ষাগোলা সমাজ সংগঠনের আর্থিক সহায়তায় তিনদিন ব্যাপি এই উৎসব পালন করা হয়। এই উৎসবকে ঘিরে পুজা আর্চনা, সাংস্কৃতিক অনূষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উৎসবে গোদাগাড়ী উপজেলার ৪৮ ওঁরাও জনজাতির গ্রাম অংশগ্রহণ করেঐতিহ্যবাহী “কারাম” উৎসবের উদ্বোধন করেন দিঘরী রাজা পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা ও গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চিত্তরঞ্জন সরদার। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন দিঘরী রাজা পরিষদের রাজা নিরেন চন্দ্র খালকো।

প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলমগীর হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন গাদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলহাজ্ব আবুল কালাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক মো: আব্দুর রশিদ, গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান, সিসিবিভিওর সমন্বয়কারী আরিফ, কিরণ সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক নবদ্বীপ লাকড়া ।

তিনদিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানে ছিল নিশি পালন, পূজার্চনা, কারাম বিনতি, কারাম কাহিনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও কারাম ডাল বিসর্জন। যে কারণে ওঁরাও সম্প্রদায় কারাম পূজা করে তা হলো বর্ষায় খাল-বিল ও নদী নালায় পূর্ণতা আসে। গাঢ় সবুজ রং নিয়ে প্রকৃতিতে আসে তারুণ্য খাল-বিলে ফোটে শাপলা-শালুক। ধান রোপণের পর ক্ষ্রদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের অফরন্ত অবসর। ঠিক সেই ভাদ্র মাসে আসে ওঁরাও সম্প্রদায়ের অন্যতম বার্ষিক উৎসব কারাম। বৃক্ষের পূজার উৎসব। উৎসবে ওঁরাও কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী নাচে-গানে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন।

কামনা-বাসনা করেন, আর চেষ্টা করেন একটু ভালোবাসার। কারাম উৎসব উদ্যাপনের জন্য ওঁরাও নর-নারী সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পূজার ১ম দিন উপোস থাকেন। সৃষ্টিকর্তার প্রতি উৎসর্গ করার পর সেগুলো আমন্ত্রিত অতিথি ও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। উপোসের মধ্য দিয়ে কারাম পূজা শুরু করেন ওঁরাও নারীরা।

পরে মাদল, ঢোল, করতাল ও ঝুমকির বাজনার তালে তালে নেচে-গেয়ে এলাকা থেকে কারামগাছের (খিল কদম) ডাল তুলে আনেন। এরপর তাঁরা একটি পূজার বেদি নির্মাণ করেন। সূর্যের আলো পশ্চিমে হেলে গেলে সেই কারামগাছের ডালটি পূজার বেদিতে রোপণ করা হয়। পুরোহিত উৎসবের আলোকে ধর্মীয় কাহিনি শোনান। সেই সঙ্গে চলে কাহিনির অস্তর্নিহিত ব্যাখ্যা। ব্যাখ্যা শেষ হলে বেদির চারধারে ঘুরে ঘুরে যুবক-যুবতীরা নাচতে থাকেন।

 

  • 112
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে