কারাগারে ফাদার, ন্যায় বিচার চায় পরিবার

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২০; সময়: ৬:০৭ অপরাহ্ণ |
কারাগারে ফাদার, ন্যায় বিচার চায় পরিবার

আসাদুজ্জামান মিঠু, তানোর : রাজশাহীর তানোর উপজেলায় গির্জায় তিন দিন এক কিশোরীকে (১৪) আটকে রেখে ধর্ষণের ঘটনায় সেখানকার ফাদার প্রদীপ গ্যা গরীকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী নগরীর আমচত্বর সংলগ্ন বিশপ হাউজ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে রাত ৯টার দিকে তানোর থানায় তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও অপহরণের মামলা দায়ের করেন কিশোরীর ভাই।

র‌্যাব-৫ এর রাজশাহীর কোম্পানি অধিনায়ক এটিএম মাইনুল ইসলাম জানান, ধর্ষণের খবর জানতে পারার পর থেকেই পলাতক প্রদীপ গ্যা গরীকে আটকের জন্য তারা প্রচেষ্টা শুরু করেন। পরে রাতেই তাকে বিশপ হাউজ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাকে তানোর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

বুধবার সকালে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মুন্ডুমালা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে এসআই সাইফুল ইসলাম আটকৃত ফাদার প্রদিপ গ্যা গরীকে রাজশাহী জুডিসিয়াল ম্যাজেস্ট্রের আদলতে হাজির করলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নিদের্শ প্রদান করেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সাইফুল ইসলাম বলেন,আদিবাসি কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় আদালতে ফাদার প্রদিপ গ্যা গরীর রিমান্ড চাওয়া বিষয়টি প্রকৃয়াধীন। রিমান্ড এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এদিকে মঙ্গলবার ও বুধবার সারাদিন মিশনপাড়াই থমথমে অবস্থান বিরাজ করছেন। মিডিয়া কর্মীদের সাথে মিশনের কেউ কথা বলছেনা। তবে মাহালিপাড়া গ্রামের অনেক খ্রিষ্টান সম্পাদায়ের লোকজন এঘটনায় ধর্মের নামে প্রতারণা বলে অভিহিত করে ফাদারে বিচারে দাবি করেছেন।

আর ধর্ষণের শিকার কিশোরীর পরিবার ও স্বজনেরা তাদের ধর্ষণের শিকার মেয়ের ন্যায় বিচার চেয়েছে। তারা বলছেন হয় তার মেয়েকে ফাদার বিয়ে করুক, নয়তো তার ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত করা হোক।

উল্লেখ্য, তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা মাহালীপাড়া এলাকার সাধুজন মেরী ভিয়ান্নী গির্জার ফাদার প্রদীপ। এলাকার আদিবাসী খ্রিস্ট্রান সম্প্রদায়ের ওই কিশোরী গত শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে বাড়ির পাশে ওই গির্জার পাশে ঘাস কাটতে গিয়ে নিখোঁজ হয়।

অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে না পেয়ে পরদিন রোববার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার ভাই। এরপর সোমবার দুপুরের পর জানা যায়, নিখোঁজ কিশোরী গির্জার ফাদার প্রদীপের ঘরে বন্দি অবস্থায় আছে। পরে কিশোরীর পরিবারের সদস্য এবং এলাকার লোকজন ওই কিশোরীকে উদ্ধার করেন। এরপর সন্ধ্যায় গির্জার ভেতরেই শালিসি বৈঠক বসে।

সেখানে দোষ প্রমাণিত হওয়ায় ফাদার প্রদীপকে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত হয়। আর ভুক্তভোগী ওই কিশোরীকে পরিবারের কাছে না দিয়ে গির্জার ভেতরে সিস্টারদের কাছেই রাখা হয়। তখন বলা হয়, ওই কিশোরীর পরিবারের সদস্যরা থানা থেকে নিখোঁজের জিডি প্রত্যাহার করে নিলে তাকে পরিবারের কাছে পাঠানো হবে। এছাড়া সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত ওই কিশোরীর খরচ বহন করবে গির্জা কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার দুপুরে ওই কিশোরীর ভাই থানায় গিয়ে জানান তার বোনকে পাওয়া গেছে। কিন্তুু তারপরও ওই কিশোরীকে পরিবারের কাছে দেয়া হয়নি। গির্জার প্রধান ফাদার প্যাট্রিক গমেজ ও শালিসি বৈঠকের প্রধান কামেল মার্ডি তাকে আটকে রেখেছিলেন।

খবর পেয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুল হাসান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো গির্জা থেকে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় রাতে থানায় একটি ধর্ষণের মামলা করেন ওই কিশোরী ভাই।

ওসি রাকিবুল হাসান জানান, শারীরিক পরীক্ষার জন্য ওই কিশোরীকে বুধবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার ফাদার প্রদীপকেও আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

  • 1
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে