চারঘাটে পোল্ট্রি ব্যবসায় ধসে লোকসানের মুখে খামারীরা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০; সময়: ৮:২৮ অপরাহ্ণ |
চারঘাটে পোল্ট্রি ব্যবসায় ধসে লোকসানের মুখে খামারীরা

নজরুল ইসলাম বাচ্চু, চারঘাট : দেশব্যাপি করোনা ভাইরাসের প্রার্দূভাবে পোল্ট্রির চাহিদা দিন দিন কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার পোল্ট্রি খামারীরা।

স্থানীয়ভাবে বিক্রয় কমে যাওয়া ও জীবনযাত্রার চাকা পুরোপুরি সচল না হওয়ার কারনে পাইকারী পর্যাপ্ত চাহিদা না থাকায় চরম লোকসানের মুখে পড়ছেন পোল্ট্রি খামার ব্যবসায়ীরা। উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ থেকে প্রেরিত তথ্যানুযায়ী ৫৩টি ফার্মের তালিকা থাকলেও সরেজমিনে গিয়ে ২৫-৩০টি ফার্মে মুরগীর উৎপাদন করতে দেখা গেছে। তবে পর্যাপ্ত উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও লোকসানের ভয়ে স্বল্প পরিমানে মুরগী চাষ করতে দেখা গেছে।

গত ছয় মাসে উপজেলার খামারগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী হাঁস-মুরগীর উৎপাদন হলেও চাহিদা কমে যাওয়ায় খামারীরা তাদের উৎপাদিত হাঁস-মুরগীর ঠিকমতো বাজারজাত করতে পারছেন না। লকডাউন শীথিল হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান সামায়িকভাবে বন্ধ ঘোষনা করায় মুরগীর চাহিদা আগের তুলনায় কমে আসে।

ফলে মুরগীর দাম পূর্বের চেয়ে কেজি প্রতি ৪০-৫০ টাকা কমে, কখনও কখনও পাইকারী ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা কেজি বিক্রয় করছে। চাহিদা কম হওয়ায় দিনের পর দিন খামারে মুরগীগুলো পালতে হচ্ছে। এতে করে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে বেশিদিন মুরগী খামারে পালন করতে হচ্ছে ফলে গুণতে হচ্ছে খামারীদের বাড়তি খাবারের টাকাসহ অন্যান্য ব্যয়। মুরগী উৎপাদনে খাদ্যের দামসহ খামারের আনুষঙ্গিক দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গুণতে হচ্ছে দিগুন লোকসান।

উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের শলুয়া গ্রামের তৌহিদ জানান পেশায় একজন মুরগীর খামারী। গত মার্চ মাসে আমার খামারে প্রায় ৩ হাজার ব্রয়লার মুরগীর উৎপাদন শুরু করি যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। করোনা ভাইরাসের কারনে এই ৩ হাজার মুরগী ৪ লক্ষ টাকায় বিক্রয় করতে হয়। এতে আমার লোকসান হয় প্রায় একলক্ষ টাকা। একই কথা বলেন ইউনিয়নের মুরগী খামারী পিয়ারী বেগম। তিনি আরও বলেন, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে খাদ্যের প্রথমদিকের তালিকাতে মুরগীর মাংশ থাকে, ফলে খামারে উৎপাদিত মুরগী দ্রুত বিক্রয় করতে পারে। কিন্তুু অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় চাহিদা অনুযায়ী দাম না পাওয়ায় খামারীরা ব্যবসায়ে লাভ করতে পারে। সর্বনাসী করোনার থাবায় আমাদের মুরগী বিক্রয় অর্ধেকে নেমে আসে।

উপজেলার পোল্ট্রি খামার ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন প্রাং বলেন, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া ও নির্ধারিত দামের চেয়ে স্বল্প মূল্যে বিক্রয় করায় অধিকাংশ খামারীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। বেশিরভাগ খামারীরা ব্যাংক, এনজিও অথবা যুব উন্নয়ন থেকে ঋণ নিয়ে খামারে মুরগী উৎপাদন করছে। ব্যবসা মন্দা হওয়ায় অধিকাংশ খামার ব্যবসায়ীরা মুলধন হারাতে বসেছে। ফলে ঋণের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পোল্ট্রি খামারীরা। এক্ষেত্রে আমরা খামারীরা খুবই আতংকিত ও বিপদগ্রস্ত, প্রয়োজন সরকারী সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও অন্যান্য কৃষির মত প্রণোদনা যা খামারীদের ক্ষতি থেকে কিছুটা রক্ষা করবে বলে তিনি জানান ।।
উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মিজানুর রহমান বলেন, খামারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সময় খামারীদের প্রশিক্ষন দেয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে হাঁসমুরগীর চিকিৎসাসহ সরকারী বরাদ্দ ঔষুধ দেয়া হয়ে থাকে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারীদের নামের তালিকা তৈরি করে সরকারী ঘোষিত প্রণোদনায় আওতায় নেয়ার উদ্যেগ গ্রহন করা হয়েছে।

যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোখলেচুর রহমান বলেন, অধিকাংশ পোল্ট্রি খামারীরা আমাদের এখান থেকে লোন নিয়ে মুরগীর খামার তৈরি করেছেন। তাদের লোনের কিস্তি চালু আছে কিন্তুু সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের কাছ থেকে কোন লোন আদায় করা হয়নি এবং কাউকে লোন আদায়ে ফোর্স করা হয়নি। সব মিলে চারঘাটের পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে বলে জানান।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে