তানোরে চক্ষু সেবার নামে রোগী ধরার ফাঁদ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০; সময়: ৪:০১ অপরাহ্ণ |
তানোরে চক্ষু সেবার নামে রোগী ধরার ফাঁদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর : তানোরে স্বল্প মুল্যে চক্ষু সেবার নামে তালন্দ আনন্দ মোহন উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে রোগী ধরার ফাঁদ পেতেছে রাজশাহী আমানা ক্লিনিকের ডাক্তার আমিনুর রশিদ আকন্দ। তবে, একদিনের এই চক্ষু সেবার নামে রোগী দেখার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে কোন ধরনের অনুমতি নেয়া হয়নি।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তিনি তালন্দ আনন্দ মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ক্লাশ রুমে ৫০ টাকা ফি নিয়ে রোগী দেখছেন এবং ঔষুধসহ অপারেশন ও চিকিৎসার জন্য রাজশাহীর লক্ষীপুর ঝাউতলা মোড়ের আমানা ক্লিনিকে আসার জন্য রোগীদের কাছ থেকে অগ্রীম টাকা নিয়ে ভর্তির রশিদ ধরিয়ে দিচ্ছেন।

এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষর্শি সুত্রে জানা গেছে, দৃষ্টি চক্ষু সেবা কেন্দ্রের উদ্যোগে মাত্র ৫০টাকায় চক্ষু ও মাথা ব্যথা রোগীদের তালন্দ আনন্দ মোহন উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে চিকিৎসা দেয়ার ঘোষনা দিয়ে কয়েকদিন আগে থেকে এলাকায় মাইকিং ও লিপলেট বিতরণ করা হয়।

লিপলেটে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজশাহীর প্রখ্যাত চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন, পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (এম,বি,বি,এস/বি,সি,এস (স্বাস্থ্য) এম,এস, চক্ষু) ডাক্তার মোঃ আমিনুর রশিদ আকন্দ ২০ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত চক্ষু সেবা প্রদান করবেন।

লিপলেটে এমন বাহারী ও আকর্ষনীয় ঘোষনা দিয়ে এলাকার দরিদ্র শ্রেনীর সাধারণ রোগীদের কাছ থেকে ৫০টাকা নিয়ে রোগীর চোখ দেখে কারো হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন আমানা ক্লিনিকের ভর্তি হয়ে অপারেশনের স্লিপ কারো হাতে নামি দামি ঔষুধের পেশক্রিপশন। এসব রোগীরা আমানা ক্লিনিক ছাড়া অন্য কোথাও চিকিৎসা নিতে পারবেনা এমন কথা বলা হচ্ছে রোগীদের।

এক্ষেত্রে যেসব রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন তাদের কাছ থেকে ভর্তির জন্য অগ্রিম টাকাও নেয়া হচ্ছে। লিপলেটে সার্বিক সহযোগীতায় তথ্য ও যোগাযোগের ঠিকানায় তালন্দ আনন্দ মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাব হোসেনের নামও উল্লেখ করা হয়েছে।
খবর পেয়ে সরেজমিন বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তালন্দ আনন্দ মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, তালন্দ আনন্দ মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ে ঢুকতেই চোখ পড়ে পুর্ব দিকের ভবনের সামনে ব্যানারে তার পার্শে¦ই বারান্দায় অপেক্ষা করছেন বিভিন্ন বয়সী বেশ কিছু নারী-পুরুষ রোগী।

বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক আলতাব হোসেন নিজ অফিস কক্ষেই বসে আছেন এবং এবিষয়ে তিনি বলেন, এবিষয়ে আমি তেমন কিছুই জানিনা, বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি’র নির্দেশে তাদেরকে এখানে চিকিৎসা সেবার প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি সভাপতি মোহাম্মদ আলী বাবুকে ফোনে ডেকে নেন।

এবিষয়ে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বাবু বলেন, তারা এলাকার দরিদ্র রোগীদের অল্প খরচে চিকিৎসা সেবা দিবেন এমন কথায় তাদেরকে স্কুল ঘর ব্যবহার করতে দেয়া হয়েছে মাত্র এছাড়া কিছুই জানিনা। পরে বারান্দায় দাড়িয়ে থাকা রোগীদের কাছে গিয়ে দেখা যায় একজন সিরিয়ার লিখছেন তিনি তার পরিচয়ে বলেন রাজশাহীর আমানা ক্লিনিকের প্রোগ্রামার সাহিন আলম।

কক্ষের ভেতরে ডাক্তার পরিচয় দানকারী ব্যাক্তি একজন যুবতীর গাঁ ঘেসে তার সাথে কথা বলছেন। পার্শে¦ আরো ৪জন যুবতী নারী অপেক্ষা করছেন চিকিৎসা পাওয়ার আসায়। এসময় ডাক্তার পরিচয় দানকারী ব্যাক্তি কোন কথা বলতে চাননি। পরে সাহিন আলম বলেন, এনি রাজশাহীর আমানা ক্লিনিকের প্রোগ্রামার মেহেদী হাসান।

এসময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয় ডাক্তার আমিনুর রশিদ আকন্দ’র পরিচয় দিয়ে লিপলেট ও ব্যানার লাগিয়েছেন তিনি নেই তার পরিবর্তে ইনি কেন ?। এসব প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন আমরা বিভিন্ন এলাকায় প্রোগ্রাম ঠিক করে ক্যাম্পে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগীকে আমানা ক্লিনিকে এসে চিকিৎসা অপারেশন করার রশিদ দিয়ে থাকি জানিয়ে এড়িয়ে যান তিনি।

এলাকার সচেতন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তালন্দ আনন্দ মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাব হোসেনের নাম ও বিদ্যালয় ব্যবহার করে প্রতারক চক্র স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে এলাকার দরিদ্র মানুষকে ঠকিয়ে অর্থ হানিয়ে নিচ্ছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, এর বেশ কয়েকদিন আগে এই চক্রটি মাদারীপুর বাজারেও এমন সেবা প্রদানের কথা বলে দরিদ্র রোগীদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

  • 14
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে