রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমির ষড়যন্ত্রের শেষ কোথায়?

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০; সময়: ৫:৫৬ অপরাহ্ণ |
রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমির ষড়যন্ত্রের শেষ কোথায়?

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে নতুন জেলা প্রশাসক এলেই তার কাছে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে কর্মরত সংস্কৃতিকর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ এনে বেনামে চিঠি দেওয়া হয়। গত ১৩ বছরে এর কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। এর শিকার হয়ে রাজশাহী থেকে ছয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারী অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন।

তদন্তে ধরা পড়েছে রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমির একজন কর্মচারী নিজের অপকর্ম ঢাকতে এই ষড়যন্ত্রন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। পরে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি। তারপরেও ষড়যন্ত্রমূলক চিঠি দেওয়া বন্ধ হয়নি। সম্প্রতি রাজশাহীর নতুন জেলা প্রশাসক যোগদান করেছেন। যথারীতি তার দপ্তরে সেই বেনামি চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই একই অভিযোগ শুধু নাম ও তারিখ পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) বেনামি চিঠির বিষয়টির তদন্ত চেয়ে রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমির বর্তমান সংস্কৃতিকর্মকর্তা আসাদুজ্জামান রাজশাহী জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন। এতে তিনি বলেছেন, অতীতের কোনো দরখাস্তকারীরই অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

আগের একাধিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমির সেই কর্মচারীর নাম শহীদুল ইসলাম। তিনি স্থানীয়ভাবে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে ‘অফিস সহাকারী কাম হিসাবরক্ষক’ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন। যদিও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে এই নামে কোনো পদই নেই।

রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে এবং পরের বছর ২০১৬ সালে অপর দুটি পৃথক তদন্তে তার বিরুদ্ধে নানারকম ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকান্ডের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রথম তদন্তটি করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্ম সচিব মঞ্জুরুর রহমান (উন্নয়ন ও পরিকল্পনা)। এই তদন্তে তিনি শহীদুল ইসলামকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেন। পরের তদন্তটি করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব (যগ্ম সচিব) জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী। ২০১৬ সালের ২৬ অক্টোবর দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি শহীদুল ইসলামের বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও দাপ্তরিক কাজে অসহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন।

ষড়ন্ত্রের শিকার হয়ে সর্বশেষ রাজশাহী থেকে বদলি হয়েছেন জেলা সাংস্কৃতিককর্মকর্তা ফারুকুর রহমান ওরফে ফয়সল। বর্তমানে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে কর্মরত রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি বলেন, তার আগেও রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমীর চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারী একইভাবে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে রাজশাহী ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। যেই রাজশাহী শিল্পকলায় যোগদান করেন তাকেই শহীদুলের ষড়যন্ত্রের শিকার হতেই হবে।

তিনি বলেন, প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই নামে-বেনামে একই ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। সবকিছুর মূলেই থাকেন এই শহীদুল। শুনেছেন তার পরে রাজশাহীতে যে নতুন জেলা সংস্কৃতিকর্মকর্তা যোগদান করেছেন তার বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে বিষয়টির সত্যতা জানা গেছে।

সচিব জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরীর তদন্ত প্রতিবেদনে একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ‘এখানে যে কোনো কালচারাল অফিসার দেওয়া হোক না কেন, আল্লাহর ফেরেস্তাও যদি হয়, শহীদুলের অত্যাচারে জাহান্নামে যাবে। ’

অবশেষে ২০১৭ সালের ফব্রুয়ারিতে তাঁর স্থানীয় নিয়োগ বাতিল করা হয় এবং তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। তার বিরুদ্ধের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করে দুদক। গত বছর ২১ নভেম্বর এই মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন তারপরেও তার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে।

রাজশাহীর নতুন জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল সম্প্রতি যোগদান করেছেন। এরই মধ্যে রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমির বর্তমান সংস্কৃতিকর্মকর্তা আসাদুজ্জামান সরকারের বিরুদ্ধে একইভাবে একই অভিযোগ এনে দরখাস্ত দেওয়া হয়েছে। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আগেও একাধিকবার অভিযোগ করা করা হয়েছে। তদন্তে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। অভিযোগকারীরও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তিনি রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। এতে তিনি বলেছেন, জেলা প্রশাসক পরিবর্তন হলেই বেনামে চিঠি আসে, তিনি ঘটনার তদন্তপূর্বক এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির শাস্তি দাবি করেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, এরকম একটি আবেদন পেয়েছেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষার) এর সঙ্গে বসে এর একটা স্থায়ী সমাধান করার চেষ্টা করবেন।

  • 77
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে