১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহীর চরাঞ্চলে জ্বলবে আলোর বাতি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০; সময়: ৪:২২ অপরাহ্ণ |
১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহীর চরাঞ্চলে জ্বলবে আলোর বাতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী বিভাগের চরাঞ্চলে বিদ্যুতের আলো ছড়াতে এবার সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন করবে বিদ্যুৎ বিভাগ। এজন্য ওই এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) মাধ্যমে ৬ হাজার ২৪০ গ্রাহকের বাড়িতে সোলার হোম সিস্টেম চালু করা হচ্ছে। এতে প্রাক্কলিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার ৪৮০টাকা।

সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) মুজিববর্ষে শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে রাজশাহীর অফগ্রিড চরে নেসকোর নিজস্ব অর্থায়নে সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়।

অনলাইনে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এমপি। রাজশাহী জেলার পবার হরিপুর ইউনিয়নের চরমাঝারদিয়াড়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। অতিরিক্ত সচিব এবং নেসকোর চেয়ারম্যান এ. কে. এম. হুমায়ূন কবীরের সভাপতিত্বে অনলাইনে যুক্ত থেকে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন। বক্তব্য রাখেন বিদ্যুৎ সচিব ড. সুলতান আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নেসকো’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম।

রাজশাহীর চর আসাড়িয়াদহ, চর মাজারদিয়া, চর খিদিরপুর এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের চর আলাতুলির মোট ৩৮ হাজার মানুষের মধ্যে ৬ হাজার ২৪০ গ্রাহক এই বিদ্যুৎ সুবিধা পাবেন। নিজস্ব অর্থায়নে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির (ইডকল) মাধ্যমে নেসকো এই সোলার দেবে। সোমবার ২৫ বাড়িতে সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে কাজ শুরু করেছে ইডকল। আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে এই চার চরের ৬ হাজার ২৪০ গ্রাহক এই বিদ্যুতের আওতায় আসবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে আমরা এই কাজ করে যাচ্ছি। আজকের এই উদ্যোগ শুধু বিদ্যুৎ বিভাগের অবদান নয়। বিদ্যুৎ যত দ্রুত যাবে তত দেশের উন্নতি হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গ্রামে, চরের দুর্গম এলাকায় বিদ্যুৎ দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা। এসব দুর্গম এলাকার মানুষ এখন বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত হবে।’

সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘চর এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি আজ পূরণ হতে চলেছে। চরে এই বিদ্যুতের আলো ছড়িয়ে দিলে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষির উন্নয়ন ঘটবে। যা মূলত দেশেরই উন্নয়ন। চরের মানুষের সঙ্গে সঙ্গে সবাই আজ খুব খুশি। তিনি বলেন চরবাসীর মধ্যে জাগরণ শুরু হয়েছে। প্রান্তিক জনগণের কাছে বিদ্যুৎ পৌছে দিতে পেরে আমাকে ভাল লাগছে। এটি এই এলাকার জন্য অনেক বড় কাজ। এর মাধ্যমে চরাঞ্চলে আলোর বাতি জ্বললো। এই কাজের জন্য তিনি বিদ্যুৎ বিভাগসহ সব বিদ্যুৎকর্মীদের ধন্যবাদ দেন।’

বিদ্যুৎ সচিব বলেন, রাজশাহীবাসীর জন্য আজ অনেক আনন্দের দিন। ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু দেশের ঘরে ঘরে বিদ্যুতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সেই লক্ষ্যেই শতভাগ বিদ্যুতায়ন কাজ করে যাচ্ছি। গ্রিডের প্রায় বেশিরভাগ এলাকায় এখন বিদ্যুৎ গেছে।
হুমায়ুন কবির বলেন, এই ৬ হাজার সোলার হোম সিস্টেম আগামী নভেম্বরের মধ্যে হস্তান্তর করবে ইডকল। চরে তার টেনে অথবা সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে আমরা বিদ্যুৎ নেওয়া যায় কিনা সেই আলোচনা করেছিলাম। কিন্তু তা বাস্তবসম্মত না হওয়ায় আমরা গ্রিন এনার্জির কথা চিন্তা করি। এরপর ইডকলকে দায়িত্ব দেই। আগামীতে সব চরেই এই সিস্টেম করা হবে। তিস্তার চরেও সোলার করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এদিকে চরমাঝারদিয়াড়ের আজাদ ও হাবিব বলেন, সোলারের আলোতে ছেলে -মেয়েরা লেখাপড়া করতে পারবে। চরাঞ্চল লেখাপড়ায় অনেক পিছিয়ে। এখন থেকে এরাও শিক্ষিত হবে। ভাল লাগছে গ্রামের প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুতের মতই আলো জ¦লবে।

এই সোলার সিস্টেমে আছে ৬৫ ওয়াট পিক শক্তি। যা দিয়ে চারটি লাইট জ¦লবে, দুইটি ফ্যান ও একটি টেলিভিশন চলবে। প্রতিটি বাল্ব ৪ ওয়াট করে, ৯ ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি ফ্যান ও ১৮ ওয়াটের টিভি।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, নেসকো’র নির্বাহী পরিচালক (কারিগরি) প্রকৌশলী মো. আব্দুল আজিজ, প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ, তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ক্রয়) মিজানুর রহমান, প্রকল্প পরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল, নির্বাহী প্রকৌশলী (পরিকল্পনা ও প্রকল্প) ইয়াসির আরাফাত, পরামর্শক এএইচএম কামাল, ইউনিট হেড সোলার হোম সিস্টেম (ইডকল) সিরাজুল হোসাইন, হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বজলে রেজবি আল হাসান মুঞ্জিল, হরিয়ান ইউনিয়নের মফিদুল ইসলাম বাচ্চু, পবা উপজেলা এলজিইডি সহকারি প্রকৌশলী সাদরুল ইসলাম প্রমুখ।

  • 1.1K
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে