রাজশাহীতে ব্যাংক কর্মকর্তা হত্যা মামলায় গৃহকর্মীকে গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২০; সময়: ১১:১০ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে ব্যাংক কর্মকর্তা হত্যা মামলায় গৃহকর্মীকে গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বছর ৯ মার্চ গেন্ডারিয়ার ২৮/বি সতীশ সরকার রোডের তৃতীয় তলার একটি বাসায় ‘জান্নাতের মা’ পরিচয়ে গৃহকর্মী হিসেবে কাজে ঢোকেন বিউটি বেগম। পরের দিনই বাড়ির সদস্যদের চেতনানাশক খাইয়ে ২৫ ভরি স্বর্ণালংকার ও ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যান ওই গৃহকর্মী। এরপরে পুলিশের অভিযানে ধরা পড়েন বিউটি বেগম।

এরপরেই সংবাদপত্রে বিউটি বেগমের প্রকাশিত ছবি দেখেই চিনতে পরে রাজশাহী শহরের রাজপাড়া এলাকার নিহত অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানের স্বজনরা। বিউটি বেগম রাজশাহী শহরের রাজপাড়া এলাকার অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানের বাড়িতে ২০১৬ সালে কাজ নেন ‘শান্তি’ নামে। সেখানেও চেতনানাশক দ্রব্য মিশিয়ে আব্দুল হান্নান ও তার স্ত্রীকে অচেতন করে মালামাল লুঠ করে পালিয়ে যায় বিউটি বেগম ওরফে শান্তি। ওই ঘটনায় মারা যান ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান।

এবার সেই রাজশাহী শহরের রাজপাড়া এলাকার বাসিন্দা অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিউটি বেগম ওরফে শান্তিকে। গ্রেপ্তার বিউটি বেগম ওরফে শান্তির বিরুদ্ধে ঢাকার আরো কয়েকটি থানায় মামলা আছে বলেও পুলিশ জানান।

গত ৯ মার্চ গেন্ডারিয়ার ২৮/বি সতীশ সরকার রোডের তৃতীয় তলার একটি বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজে ঢোকেন বিউটি বেগম। বাসার দারোয়ানদের মাধ্যমে ওই বাসায় কাজে নেন তিনি। পরদিন দুপুরের খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক ট্যাবলেট মেশান ওই গৃহকর্মী। এরপর ওই বাসার বাসিন্দা ফয়জুন্নেছা, ফরিদা ইয়াসমিন ও গোলাম মাওলা দুলাল অজ্ঞান হয়ে পড়লে ২৫ ভরি স্বর্ণালংকার ও ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যান ওই গৃহকর্মী। এরপর পুলিশ তদন্ত শুরু করে।

‘জান্নাতের মায়ের’ আসল নাম ও ঠিকানা কিছুই বাড়ির বাসিন্দাদের কাছে ছিল না। শুধু তারা মোবাইলে ওই গৃহকর্মীর একটি ছবি তুলে রেখেছিলেন। পরে পুলিশ একাধিক সোর্সের মাধ্যমে তথ্য পায় গেন্ডারিয়ার বাসায় যে গৃহকর্মীর ছবি তোলা হয় তার মতো একজন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া এলাকায় বসবাস করেন। এরপর ১৪ মার্চ ইকুরিয়ায় অভিযান চালিয়ে ওই গৃহকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিউটি বেগম স্বীকার করেন গেন্ডারিয়ার বাসায় তিনি স্বর্ণালংকার ও টাকা লুট করেছিলেন। দেশব্যাপী তারা কয়েকজন মিলে একটি চক্র হয়ে কাজ করে। তারা হলেন বিউটির স্বামী খোরশেদ আলম ওরফে মোরশেদ, বিউটির প্রতিবেশী রিপনা বেগম ও তার স্বামী ফারুক আহমেদ।

রাজশাহী শহরের রাজপাড়া এলাকার খুন হওয়া অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানের জামাই আজাদ জানান, চলতি বছর ১৪ মার্চ পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হয় বিউটি বেগম ওরফে শান্তি। এরপরে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও অনলাইনে ছবি দেখে বিউটি বেগম ওরফে শান্তিকে চিনতে পারেন তারা। সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় গেন্ডারিয়া থানায়। সেখানে বিষয়টি জানানো হয়। পরে গৃহকর্মী সেজে ব্যাংকের কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান হত্যার ঘটনাও স্বীকার করেন বিউটি বেগম ওরফে শান্তি। এরপরে রবিবার ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান হত্যা মামলায় বিউটি বেগম ওরফে শান্তিকে।

অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানের জামাই আজাদ আরো জানান, ২০১৬ সালের মামলার পরে আসামীর কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। মামলাটির তদন্ত করছিলেন সিআইডি।

খুন হওয়া ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানের ছেলে ইমন আলী জানান, ২০১৬ সালে হঠাৎ একদিন তাদের বাসার গেটে এসে ‘শান্তি’ পরিচয়দানকারী এক মধ্যবয়সী নারী কাজের জন্য কান্নাকাটি করছিলেন। এতে তার বাবা আব্দুল হান্নানের দয়া হয়। তিনি ওই নারীকে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেন। তার ভোটার আইডি ও অন্যান্য পরিচয়পত্র চাইলে কয়েকদিনের মধ্যে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। কাজে যোগ দেয়ার মাত্র চার দিনের মাথায় সকালের নাশতার সঙ্গে চেতনানাশক দ্রব্য মিশিয়ে হান্নান ও তার স্ত্রী সেলিনা হান্নানকে অজ্ঞান করে স্বর্ণালংকার ও টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। পরে হাসপাতালে দু’দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর হান্নান মারা যান।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের আগস্টে রাজশাহী শহরের রাজপাড়া এলাকার বাসিন্দা অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান মারা যান। তার বাসায় কাজ করতেন ‘শান্তি’ নামে এক গৃহকর্মী। ওই গৃহকর্মী খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক দ্রব্য মিশিয়ে হান্নান ও তার স্ত্রী সেলিনা হান্নানকে অচেতন করেছিলেন। এরপর ওই বাসা থেকে প্রায় ৩০ ভরি স্বর্ণালংকার ও টাকা নিয়ে তিনি চম্পট দেন।

হাসপাতালে দু’দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে না ফেরার দেশে চলে যান হান্নান। ওই যাত্রায় বেঁচে যান তার স্ত্রী। একই বছরে তিন মাসের ব্যবধানে রাজশাহীতে আরও তিনটি বাসায় একই ধরনের ঘটনা ঘটে। সব বাসায় গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রীর খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক দ্রব্য মিশিয়ে অজ্ঞান করে জিনিসপত্র হাতিয়ে নেয়া হয়। অবশেষে ওইসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ভয়ঙ্কর গৃহকর্মী বিউটি বেগম ওরফে শান্তি ধরা পড়েছে পুলিশের হাতে।

  • 174
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে