বরেন্দ্রে নকল ও ভেজাল কীটনাশকের রমরমা ব্যবসা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২০; সময়: ৫:৫৪ অপরাহ্ণ |
বরেন্দ্রে নকল ও ভেজাল কীটনাশকের রমরমা ব্যবসা

আসাদুজ্জামান মিঠু : বরেন্দ্র অঞ্চলে চলছে আমনের ভরা মৌসুম। ক্ষেতের ফসলে রোগ-বালাই দমনে নানা পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম কীটনাশক। ফসলের মোট খরচের বেশি অর্ধেকটাই যাই কীটনাশক প্রয়োগে। বর্তমানে বাজারে বেশির ভাগ কীটনাশক প্রয়োগ করে পোকা দমন হচ্ছে বলে কৃষকদের অভিযোগ।

কীটনাশক উৎপাদনকারী বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানী নকল ব্র্যান্ডের ভেজাল কীটনাশক বিক্রি হচ্ছে অবাধে। এতে শুধু যে কৃষক ঠকছে ও কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল রাজস্ব থেকে। মূলত বাজারে তুলনামূলকভাবে দাম কিছুটা কম ও মোড়ক দেখে আসল না নকল চেনতে না পারাই কীটনাশকের কেনে থাকেন কৃষকেরা। যার ফলে রাজশাহী অঞ্চলের বাজার এখন ভেজাল কীটনাশকের ব্যবস্যা রমরমা।

আর এসব ভেজাল কীটনাশকের একাধিক কারখানা ও সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে জেলার মোহনপুর উপজেলার কেশরহাটে। তবে মাঠ পর্যায়ের একাধিক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা স্বীকার করছেন, কোম্পানীর কর্তৃতপত্র ছাড়াই যততত্র কীটনাশক বিক্রি করছেন অনেক অসাধু ডিলার। আর ভেজাল ও নকল কীটনাশক গুলো পরীক্ষা করা ল্যাব উপজেলা পর্যায়ে না থাকায় ও তাদের হাতে ভেজাল বিরোধী অভিযানের কোন ক্ষমতা না থাকায় সহজে ধরা যাচ্ছে না বলে তারা দাবি করেছেন।

রাজশাহী জেলা কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে সব চেয়ে বেশি নকল ও ভেজাল কীটনাশক সিনজেন্টা এমিস্টর টপ। এ কীটনাশক ধানের পচন রোগ সারাতে বেশ কার্যকারী। তাই কৃষকদের চাহিদা ও বেশি। আর এ সুুযোগে প্রায় কীটনাশক ডিলার সিনজেন্টা কোম্পানীর মোড়কে ভেজাল কীটনাশক বিক্রি করতে শুরু করেছেন।

সরকারের কাছে কৃষকদের দাবি, বিশেষ করে ভেজাল ও নকল কীটনাশকের বিষয়ে যেন নিয়মিত মাঠ পর্যায়ের কীটনাশকের বাজার মনিটরিং করা হয়।

ভেজাল কীটনাশ বিক্রি করেন এমন কয়েকজন দোকানী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট, মান্দার সাবাইহাট ভেজাল কারখানায় প্রতিনিয়ত সিনজেন্টা, অটোসহ দেশের নামিদামি কীটনাশ কোম্পানী ব্যান্ডের মোড়কের বোতলে ভরা এসব ভেজার কীটনাশক দেদারসে বাজারে বিক্রি হচ্ছে অর্ধেক দামে। এখান থেকে জেলায় বিভিন্ন প্রান্তে ছোট বড় ডিলারদের কাছে পৌচ্ছে দেয়া হচ্ছে ভেজাল ও নকল কীটনাশক।

এসব ভেজাল কীটনাশক চেনার কোন উপায় থাকেনা কৃষকের। তারা ক্ষেতে প্রয়োগ করে পোকা দমন হচ্ছে না। যার কারণে কৃষকেরা আর্থিক ভাবে ক্ষতির মধ্যে পড়ছে।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা বাজারে প্রায় ১০টির মত কীটনাশক দোকান রয়েছে। মঙ্গলবার ৭ টি কীটনাশক দোকানে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সাতটি দোকানের মধ্যে মেসার্স জামান ট্রেডার্স,মেসার্স শিবলী ট্রেডার্স, মেসার্স হাফিজ ট্রেডার্স ও মেসার্স মাসুম ট্রেডাসে সিনজেন্টা কোম্পানীর ভেজাল ও নকল ইমিস্টর টপ বিক্রি অনেকটা প্রকার্শে। এ চারটি দোকানের সিনজেন্টা কোম্পানীর এজেন্ট বা কর্তিতপত্র নেই।

তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর এলাকার গোরাঙ্গাপুর গ্রামের কৃষক মাসুদ রানা বলেন, তার আমন ক্ষেতে পচন রোগ দেখা দেয়। মুণ্ডুমালা বাজারে মেসার্স জামান ট্রেডার্স এর মালিক বাবুর কাছে গিয়ে ক্ষেতে পচনের কথা জানালে তিনি এমিস্টর টপ নামের একটি বড় কীটনাশক বোতল নিই। বোতলের গায়ে ১৬৫০ টাকা মুল্য থাকলেও দোকানী তাকে ১২০০ টাকায় দেন। কম দামে পাওয়া নিয়ে গিয়ে ক্ষেতে প্রয়োগ করি। কিন্ত এক সপ্তহের বেশি সময় পর হলেও পচন কোন প্রকার দমন করতে পারিনি।

এমন ভেজাল কীটনাশেক সিকার শুধু তানোর উপজেলার কৃষকেরাই নয়, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, মোহপুর, বাগমারা, দুর্গাপুরসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের হাজারা হাজার কৃষক এসব ভেজার ও নকল কীটনাশক কেনে প্রতিনিয়ত ঠকছে।

তানোর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সমশের আলী, বাজারে নকল ও ভেজার কীটনাশক পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এসব ভেজার কীটনাশক গুলো পরীক্ষা করা কোন ল্যাব উপজেলা পর্যায়ে নেই। এমন ভাবে এগুলো প্যাকেটজাত হয়ে থাকে, ব্যান্ডের মোড়ক দেখে চেনার উপায় থাকে না এগুলো নকল না আসল। তবে কৃষকেরা এসব কীটনাশক ব্যাবহার করে কোন কাজে আসছেনা বলে ভরি ভরি অভিযোগ রয়েছে। আমরা বিষয়গুলো উর্দ্ধত কর্মকর্তাদের কাছে জানায়ছি।

রাজশাহীর তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সামিউল ইসলাম বলেন বাজারে ভেজাল ও নকল কীটনাশক ও বীজ পাওয়া যাচ্ছে এমন সংবাদের কথা শোনা যাচ্ছে। তবে কৃষকদের কীটনাশক কেনার সময় অবশ্যই সে কীটনাশক ডিলালের কাছে মেমু সংগ্রহ করতে হবে। কারণ কীটনাশক ব্যবহার করে কোন কাজ হচ্ছেনা পরে তথ্য প্রমান পাওয়া যাইনা। আর মেমু নেওয়ার পরে যদি কাজ না হয় সে ক্ষেত্রে আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে পারবো। সে ক্ষেতে কৃষকদের সহযোগিতা করতে হবে।

  • 17
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে