রাজশাহী হাসপাতালের ইন্টার্ণ চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২০; সময়: ১০:৪৪ অপরাহ্ণ |
রাজশাহী হাসপাতালের ইন্টার্ণ চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক : চিকিৎসা অবহেলায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় নগরীর সাগরপাড়ার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা ইসাহাক আলীর (৭২) স্ত্রী পারুল বেগমের। শোকার্ত ছেলে রাকিবুল ইসলাম লিটন চিকিৎসা ব্যবস্থা ও ডাক্তারদের অবহেলার বিষয়গুলো তুলে ধরে কান্না করতে থাকেন, আর তাতেই ক্ষেপে যান ইন্টার্ণ চিকিৎসকরা। অমানবিকভাবে মারধর করেন বাপ-ছেলেকে।

এ ঘটনায় ওই ইন্টার্ণ চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ইসাহাক আলী। শনিবার মহানগর পুলিশের রাজপাড়া থানায় মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলা নং ৭, তারিখ ০৫/০৯/২০ইং। মামলার আসামীরা হলেন- ইন্টার্ণ চিকিৎসক ডাঃ শোভন সাহা (২৪), ডাঃ আঃ রহিম (২৫) ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোক্তার হোসেন (৫৮)। মামলায় আরেক কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে।

মামলার আরজিতে বলা হয়, গত ২ সেপ্টেম্বর আনুমানিক সকাল সোয়া ৭টার সময় স্ত্রী পারুল বেগম অসুস্থ হওয়ায় ছেলে মুক্তিযোদ্ধা ইসাহাক আলী ও ছেলে রাকিবুল ইসলাম লিটন চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যান। হাসপাতালের জরুরী বিভাগ থেকে তাকে ৪৫ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেটি পুরুষ ওয়ার্ড হওয়ায় তাকে আবার ৪৬ নং ওয়ার্ডে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু নার্সদের নির্দেশনা মতে স্ত্রীকে ৪৬ এর পরিবর্তে ৪৯ নং ওয়ার্ডে রেখে আসা হয়।

পরবর্তীতে ওয়ার্ড ভুল হওয়ায় সেখান থেকে চিকিৎসার জন্য পুনরায় ৪৬ নং ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। ওয়ার্ডে নিয়ে আসার পরে প্রায় ১ ঘন্টা সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও ইসাহাক আলী ও তার ছেলে চিকিৎসক ও নার্সদেরকে ডাকাডাকি করার পরেও কোন চিকিৎসা দেয়া হয়না। রোগীর অবস্থা গুরুত্বর সংকটাপন্ন হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা কান্নাকাটি শুরু করে। তাদের কান্নাকাটির শব্দ পেয়ে ডাক্তার ও নার্স আসেন।

সকাল পৌনে ৯টায় রোগীকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় ছেলে রাকিবুল ইসলাম লিটন মায়ের মৃত্যুকষ্ট ও বেদনার অভিঘাতে কান্নাকাটি মাধ্যমে চিকিৎসার এহেন বেহাল দশার কথা উচ্চস্বরে বলার অপরাধে ৪৬ নং ওয়ার্ডের সামনে এসে কর্তব্যরত ইন্টার্নী চিকিৎসক ডাঃ শোভন সাহা, ডাঃ আঃ রহিম (২৫) ও প্রশাসনিক অফিসার মোক্তার হোসেন (৫৮) মুক্তিযোদ্ধার ছেলেকে বেধড়ক কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে।

মুক্তিযোদ্ধা ইসাহাক তাদেরকে শান্ত করতে গেলে তার দাড়ি ধরে টানাটানি করে ও কিল ঘুষি মেরে মেঝেতে ফেলে দিয়ে বুকে লাথি মারে ঐ চিকিৎসকরা। এছাড়াও পাঞ্জাবীর ডান পকেটে থাকা চিকিৎসা ব্যয়ের নগদ দশ হাজার টাকা নিয়ে নেয় বলে মামলার আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়।

আবেদনপত্রে আরও বলা হয়, ইসাহাক আলী বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দিলে ও সঙ্গে থাকা মহিউদ্দিন হায়দার বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ও নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও ঐ সময় বিবাদীগন ফোন করে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের ইন্টার্নী চিকিৎসকদের ঘটনাস্থলে ডাকে। ছেলে লিটন মুক্তিযোদ্ধা ইসাহাককে রক্ষা করতে এগিয়ে আসলে বিবাদীদ্বয়সহ অজ্ঞাত ২০ থেকে ২৫ জন ইন্টার্নী চিকিৎসক পূনরায় ছেলেকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে এবং ৪৬ নং ওয়ার্ডের ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে অবরোধ করে রাখে।

সে সময় কর্তব্যরত আনসার সদস্যগণ তাদেরকে থামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। বিবাদীদের মারপিটে মুক্তিযোদ্ধা ইসাহাক ও তার ছেলে গুরুত্বর আঘাতপ্রাপ্ত হন। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে থানা পুলিশ উপস্থিত হয়ে ইন্টার্নী চিকিৎসকদের হাত থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে।

এখানেই শেষ নয়, প্রায় ৫ ঘন্টা স্ত্রীর লাশ আটকে রেখে মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারকে জোরপূর্বক ক্ষমা চাওয়ানো হয় এবং সেই দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয় তারা। কিন্তু তবুও তারা ক্ষান্ত না হলে তাদের দাবীর মুখে ছেলে রাকিবুল ইসলাম লিটনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহাদত হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে থানায় মুক্তিযোদ্ধা ইসাহাক আলী একটি মামলা করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

  • 183
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে