সমতল আদিবাসীদের জন্য মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠনের দাবি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২০; সময়: ৫:০৮ অপরাহ্ণ |
সমতল আদিবাসীদের জন্য মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠনের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : সংগ্রাম ও গৌরবের ২৭ বছর। জাতীয় আদিবাসী পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সমতল আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন সহ ৯ দফা দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজশাহীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য খ্রিস্টিনা বিশ্বাস, উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য দেবাশীষ প্রামানিক দেবু, রফিকুল ইসলাম পিয়ারুল, সহ-সাধারণ সম্পাদক গণেশ মার্ডি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজেয়াড়, দপ্তর সম্পাদক সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মানিক সরেন, সদস্য রাজকুমার শাঁও, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের সভাপতি নকুল পাহান প্রমূখ।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিভূতী ভূষণ মাহাতো, বাংলাদেশ রবিদাস উন্নয়ন পরিষদের রাজশাহী জেলা সভাপতি রঘুনাথ রবিদাস, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের সহ-সভাপতি সাবিত্রী হেমব্রম, সাধারণ সম্পাদক তরুন মুন্ডা, কোষাধ্যক্ষ অনিল রবিদাস, আদিবাসী যুব পরিষদের সদস্য উত্তম কুমার মাহাতো, আদিবাসী নারী পরিষদের নেত্রী কল্পনা তির্কী প্রমূখ।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান, সমতল আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন, আদিবাসীদের নিরাপত্তা বিধান, সকল আদিবাসী জাতিসত্তার শিশুদের নিজ মাতৃভাষায় প্রাথমিক স্তরে শিক্ষাদান, সরকারি চাকরিতে কোটা পূনর্বহাল, বাজেটে সমতল আদিবাসীদের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ, আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমিগুলোতে আদিবাসী উপ-পরিচালক ও জনবল নিয়োগ সহ আদিবাসীদের উপর সকল প্রকার নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, মিথ্যা মামলা, জবরদখল উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, ১৯৯৩ সালে তৎকালিন সরকার আদিবাসীদের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছিল এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারও বাংলাদেশে আদিবাসী নেই বলে আদিবাসীদের অস্তিত্ব অস্বীকার করছে। ক্ষমতায় যাবার জন্য বিভিন্ন সময় আদিবাসীদের ব্যবহার করছে। আদিবাসীদের অধিকারের প্রশ্নে তৎকালিন সরকার ও বর্তমান সরকারকে একই রেখায় অবস্থান করছে।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট, রংপুর সহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সভা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সাল। জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপি আদিবাসী বর্ষ ঘোষণা করলে বাংলাদেশের তৎকালিন বিএনপি সরকার ঘোষণা দেয় যে, “বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী নেই।” একই সময়ে রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাবইলডাইং গ্রাম গুড়িয়ে দেয় ভূমিদস্যু ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা। এতে প্রায় ৫০ টি আদিবাসী সাঁওতাল পরিবারের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়। এতে আদিবাসীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং জোরদার আন্দোলনের ফলে রাষ্ট্র সেখাকার আদিবাসীদের নিজ জমিতে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়।

১৯৯৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সরকারের আদিবাসী বিরোধী বক্তব্য ও তানোরে সাঁওতাল গ্রাম উচ্ছেদের প্রতিবাদে ৯ দফা দাবির ভিত্তিতে রাজশাহীর এক আদিবাসী গ্রাম থেকে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ নামে আদিবাসীদের নিজস্ব সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। আদিবাসীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও রুটি রুজির স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখতে সংগ্রাম অব্যাহত রাখাই এই সংগঠনের উদ্দেশ্য। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই আদিবাসীদের শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তি, ভূমি ও আত্মপরিচয়ের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রেখেই চলেছে।

  • 12
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে