বৃক্ষ মেলা না হওয়ায় নার্সারী খাতে লোকসান আড়াই কোটি টাকা

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২০; সময়: ৪:৪৭ অপরাহ্ণ |
বৃক্ষ মেলা না হওয়ায় নার্সারী খাতে লোকসান আড়াই কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রতিবছরের মতো এ বছরও ২৫ লাখ টাকা খরচ করে নিজের নার্সারির কয়েক লাখ গাছের চারা তৈরি করেছে পুঠিয়া উপজেলার অলস্কায়ার নার্সরির মালিক মফিজুল ইসলাম ডলার। নার্সারিতে কচি কচি তরতাজা বিভিন্ন ফলজ, বনজ, ওষুধি ও ফুলের হাজার হাজার গাছে কয়েক বিঘা জমির উপরে এখন সবুজের সমারাহ নিয়ে প্রকৃতির আসল রূপ চেনাচ্ছে। কিন্তু মনে শান্তি নেই! গতবছর বৃক্ষ মেলায় তার গাছের চারা বিক্রি হয় সাড়ে চার লাখ টাকা। কিন্তু এবার কৃষি মেলা না থাকায় তাকে প্রায় মোট ৪ লক্ষ টাকা লোকশান গুনতে হবে!

এমন অবস্থা রাজশাহীর প্রায় সকল নার্সরি মালিকদের।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, নগরী ও জেলাতে মোট নার্সারি আছে ১৪১টি। এই বর্ষা মৌসুমেই এখন তাদের মূল ব্যবসা। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও বৃক্ষ মেলা না থাকায় কারণে রাজশাহীতে নার্সারি খাতে এখন ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মোট আড়াই কোটি টাকা। নগরী ও জেলার কয়েকজন নার্সারি মালিকদের সাথে কথা হলে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। নগরী ও জেলার ৯ টি উপজেলায় প্রায় আড়াই কোটি টাকার গাছের চারা বিক্রি হয়। বৃক্ষ মেলায় নগরীতে কোটি টাকা ও একেকটি উপজেলায় ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা গাছ বিক্রি হয়ে থাকে।

নার্সারি মালিকরা জানাচ্ছেন, কিছু দিন আগে লকডাউনে ব্যবসা বাণিজ্য কম ও এখন বৃক্ষ মেলা হচ্ছে না তাই সংকটে পড়েছে নার্সারি খাত। প্রথম থেকেই যেকোনো দুর্যোগ কিংবা সংকটে রাজশাহীর সকল জেলায় গাছের চারা পূরণে মানুষের পাশে আছে নার্সারি মালিকরা। তবে এখন মোটামুটি ব্যবসা হলেও অনেককে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

পুঠিয়া উপজেলার অলস্কায়ার নার্সারির মালিক মফিজুল ইসলাম ডলার জানান, প্রতি বছর আমার ২৩ বিঘার দুই নার্সারিতে প্রায় ২৫ লাখ টাকার ব্যবসা হয়। আর খরচ হয় ১৫ লাখ টাকা। এই বর্ষা মৌসুমের ৫ মাস ১৫ লাখ টাকার ব্যবসা হয়। তার মাঝে সবচেয়ে বড় ব্যবসা বৃক্ষ মেলার ৩ দিনে হয়ে থাকে। সেই সময় চার লাখ টাকার বেশি গাছের চারা বিক্রি করি। কিন্তু এবার সেই ব্যবসা নেই! তবে গাছ বিক্রি থেমে নেই। এখন ফলজ গাছ বেশি বিক্রি চলছে।

নগরীর আমচত্বর এলাকার সোনার বাংলা নার্সারির মালিক রফিক জানান,নার্সারির ব্যবসার মূল সময় বর্ষা মৌসুম। আর তার মাঝে বৃক্ষ মেলায় প্রধান। কারণ বৃক্ষ মেলায় ক্রেতাদের চাহিদা মত সকল রকমের গাছ থাকে। ছোট বড় সকল মানুষ কিছু হলেও গাছ কিনে। কিন্তু এবার মেলা নেই! তবে গাছ বিক্রি হচ্ছে। তা দিয়ে কোনমতে মানিয়ে নিচ্ছি। এই করোনার সময় অনেক মানুষ বাসায় গাছ লাগিয়ে সময় কাটাচ্ছে। এখন যা বিক্রি হচ্ছে তা আশানুরূপ না!

তিনি আরো জানান, ইন্ডিয়া থেকে অনেক গাছ আসে তা আসা বন্ধ আছে। আর প্রতিবছর সিটি কপোরেশনের সামনে মেলা হয়। সেখানে দেশের বিভিন্ন জেলার গাছ আসে। আমাদেরও বিক্রির একটা টার্গেট থাকে। এই সময় এখানে কোটি টাকা বেশি ব্যবসা হয়। আমারও কয়েক লক্ষ টাকার বেচা কেনা হয় যা এ বছর হচ্ছে না।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল হক জানান, সরকার প্রতিবছর বৃক্ষ মেলা করে তবে এবার করোনার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। ৩০ জুনের মধ্যেই সকল উপজেলা বরাদ্দ পায় এবার বরাদ্দ আসেনি। মেলা করার সিদ্ধান্ত হয়নি। মেলা হলে জনসমাগম হবে তাই। তবে আমরা সকল উপজেলার সকল ইউনিয়নে ৮০০ থেকে ৯০০ গাছের চারা লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছি। উপজেলার সকল উপ-সহকারি এই দায়িত্বে থাকবে।

তিনি জানান, রাজশাহীর মোট ৩০ হেক্টর জমিতে ১৪১ টি নার্সরি আছে। একেকটি উপজেলায় বৃক্ষ মেলায় কয়েক লক্ষ টাকার ব্যবসা হয়। নগরীর সিটি কপোরেশন ভবনের পাশেই গতবার কোটি টাকার চারা বিক্রি হয়েছে। এবার মেলা নেই বিক্রি নেই। তবে নার্সারি মালিকদের বিক্রি থেকে নেই। যার যার অবস্থানে গাছ লাগাচ্ছে তারা বিক্রি করছে আমরাও সরকারি ভাবে তাদের কাছে থেকে গাছ কিনে কিছুটা হলেও লোকসান পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে