রাজশাহীতে মাছ চাষে ২ লাখ ৮৮ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২০; সময়: ৪:৩০ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে মাছ চাষে ২ লাখ ৮৮ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে কয়েক বছর থেকেই মাছ চাষে রিতিমতো বিপ্লব ঘটে গেছে। আর নতুন করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাজা মাছ সরবরাহে প্রথম স্থানেও এখন রাজশাহী বিভাগ। প্রতিদিন রাজশাহী জেলা থেকে ১৪০ থেকে ১৫০ ট্রাকে করে দুই কোটি টাকার তাজা মাছ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হচ্ছে। এর ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজন ফরমালিন মুক্ত মাছ পাচ্ছেন। রাজশাহীতেও নতুন করে তৈরি হচ্ছে বেকারদের কর্মস্থান।

রাজশাহী বিভাগীয় মৎস অফিস সূত্রে জানা যায়, তাজা মাছের বাইরে পাঠানোর উৎদ্যোগটি প্রথমে রাজশাহী জেলা থেকে শুরু হয়। জেলার পুঠিয়া, পবা, মোহপুর, দুর্গাপুর, বাগমারা, তানোর এবং নাটোর জেলার সিংড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রামে সবচেয়ে বেশি মাছ ঢাকাতে যাচ্ছে। রাজশাহী জেলা থেকে প্রতিদিন ১৫০ ট্রাকে মাছ যাচ্ছে। আর একটি ট্রাকে মাছ থাকে ৭০০ থেকে ৯০০ কেজি।

বর্তমানে জেলার ১২ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এই মাছ চাষে। প্রায় দুই লক্ষ ৮৮ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান এখন মাছ চাষে। আর বছরে আয় হচ্ছে কয়েক হাজার কোটি টাকা।

জেলায় বর্তমানে ১৩ হাজার ৫০ হেক্টর জমির কয়েক হাজার পুকুরে প্রতিবছর ৮৪ হাজার মে.টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে। তবে তথ্যমতে গত ৫ বছরে জেলায় আরো নতুন করে আরো কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। যা মৎস্য অফিসের অন্তর্ভুক্ত নয়।

রাজধানীতে উত্তরাঞ্চলে তাজা মাছের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এখানে প্রতিনিয়ত নতুন পুকুরের পাশাপাশি বাড়ছে চাষিদের সংখ্যা। তথ্যমতে এই জেলায় সব মিলে প্রতিবছর ৮৪ হাজার মে.টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা। আর মৎস্যজীবিদের মাঝে নতুন করে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার বেকার যুবকদের।

জেলার উপজেলার কয়েকজন মাছ চাষি ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হলে জানা যায়, রাজধানীসহ সারাদেশে রাজশাহী অঞ্চলের উৎপাদিত বিভিন্ন প্রকার মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর মাছে ফরমালিন আতঙ্কের কারণে ক্রেতারা গত কয়েক বছর থেকে বড় আকারের তাজা মাছ কিনতে বেশী আগ্রহী হয়েছে। তাদের চাহিদা মোতাবেক প্রতিদিন শত শত ট্রাকে বিশেষ ব্যবস্থায় তাজা মাছ সরবরাহ করছেন চাষিরা। বর্তমানে বড় ও তাজা মাছগুলো প্রকারভেদে প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে করোনাকালীন সময়ে বাজার একটু কমেছে।

চাষী ও ব্যবসায়ীরা আরো জানান, তাজা মাছের জন্য প্রথমে পলেথিন বিছিয়ে সেখানে পানি দিয়ে তাজা মাছগুলো ছাড়া হয়। সারা রাস্তায় পলিথিনে অক্সিজেন বাড়াতে একজন পা দিয়ে পানি নাড়াতে থাকে। আর ট্রাকের পানি পরিষ্কার রাখতে পথে একবার পানি পাল্টাতে হয়। এজন্য সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুরের কয়েক জায়গায় রাস্তার পাশে পানির মেশিনের ব্যবস্থা করা আছে। মরা মাছের চেয়ে তাজা মাছের চাহিদা ও দাম বেশি থাকায় এখন শুধু মৎস্য ব্যবসায় নয় অনেক শ্রেণীর পেশার মানুষ মাছ চাষ করছে।

পবা উপজেলার মৎস্য বাবসায়ী সাদিকুল ইসলাম জানান, আমি ২০০৭ সালে সামান্য কয়েক কাঠা পুকুর দিয়ে মাছ চাষ শুরু করি। ১৩ বছরে এখন প্রায় ১৮০ বিঘার পুকুর হয়েছে তার। তিনি বলেন, মাছ চাষ লাভ জনক ব্যবসা তবে তাজা মাছ আরো বেশি লাভজনক। মরা মাছ যেখাতে ১০০ টাকা কেজি সেখানে তাজা মাছ ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হয়। তিনি জানান, করোনায় চাষী ও আড়তদারা দাম পাচ্ছে না। ঢাকায় পাইকারীরা বাড়ি বাড়ি মাছ দিয়ে ডবল লাভ করছে। আমার এখানে প্রায় সকল মাছ তাজা অবস্থায় ঢাকাতে পাঠাই।

পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের মাছ চাষী এরশাদ আলী জানান, গত কয়েক বছর থেকে বাজার ভালো হওয়ায় বর্তমানে এই এলাকায় অনেকেই এখন মাছ চাষে আগ্রহ হচ্ছেন। অনেক কৃষক তাদের নিচু জমি গুলোতে এখন পুকুর খনন করছেন। আবার কেউ তাদের জমি গুলো পুকুর খনন করতে আগ্রহী হয়ে মৎস্য চাষিদের কাছে লীজ দিচ্ছেন।

তিনি জানান, বর্তমানে এই এলাকায় প্রতি বিঘা পুকুর বছরে ইজারা মূল্য ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আর আধুনকি প্রযুক্তিতে প্রতিবছর এক বিঘা পুকুরে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। লাভ বেশি হওয়ায় মাছ চাষ করা হচ্ছে।

রাজশাহী বিভাগের এখন ৮৪ হাজার মেট্রিকটন টন মাছে উৎপাদন করে চাহিদা পূরণে হচ্ছে ৫২ হাজার মেট্রিক টন, করার পর উদ্বৃত্ত থাকছে ৩২ হাজার মেট্রিক টন। তবে রাজশাহীর বিভিন্ন জায়গায় অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খননের ফলে এখন দেখা দিয়েছে পরিবেশ বিপর্যয়। দিনে দিনে ফসলি জমিতে পুকুর খুড়ে বিল জলাশয়ে পানি জমে ফসল নষ্ট হচ্ছে। রাস্তাঘাটে পানি জমে যাচ্ছে।

নাম না প্রকাশে জেলার এক মৎস্য অফিসের কর্মরত একজন জানান, পুকুর করা অনেক লাভ ফলে তা প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। কৃষক পুকুরের জন্য বছরে যে টাকা পাচ্ছেন তা ফসলে পাচ্ছেন না। তাই অনেকে লিজ দিয়ে দিচ্ছে। এতে নতুন করে রাজশাহীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে পকুর খননের বিষয়েও প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।

রাজশাহী বিভাগীয় মৎস অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অলোক কুমার জানান, মাছ চাষের জন্য রাজশাহী আগে থেকেই উপযুক্ত জায়গা। তবে কয়েক বছরে জেলা পার্শবর্তী জেলায় এই মাছ চাষে বিপুল মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষায় ধান ক্ষেতে মাছ চাষ, খাঁচায় মাছ চাষ অনেক লাভজনক। এখন নদীর অনেক মাঝ পুকুরে মাছ চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষে এখন স্বাবলম্বী রাজশাহী।

  • 50
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে