দুর্গাপুরে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষে পবায় জলাবদ্ধতা

প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২০; সময়: ৬:৪৭ অপরাহ্ণ |
দুর্গাপুরে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষে পবায় জলাবদ্ধতা

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় সরকারি খাল দখল করে মাছ চাষ করায় স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম। পানি নিস্কাশনে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে বারবার আবেদন দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসি।

পবার পূর্বাঞ্চলের মাঠের পানি নিস্কাশনের জন্য বৈরাগির খালের মুখে বাঁধ দিয়ে পুকুর বানিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছে দুর্গাপুরের কিছু প্রভাবশালী। ফলে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে ফসলের ক্ষেতসহ ঘরবাড়ি। পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় উপজেলার কাটাখালি, হরিয়ান, পারিলা ও বড়গাছি এলাকার সহশ্রাধিক হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। ভেসে গেছে অনেক পুকুরের মাছ। এনিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে ভুক্তভোগিদের মাঝে। জরুরী ভাবে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করতে এলাকার তিন শতাধিক মানুষের স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি রোববার জেলা প্রশাসক ও পবা ইউএনওকে দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, পবার পূর্বাঞ্চলের পানি দুটি খাল বেয়ে অর্থাৎ কাটাখালি, হরিয়ান, মল্লিকপুর, তেবাড়িয়া কাঠালপাড়া, সারাংপুর হয়ে একটি খাল বেয়ে এবং অপরটি কৃষ্টগঞ্জ, কালুমেড়, ঘোলহাড়িয়া হয়ে শিরোলিয়া মৌজার ভিতর দিয়ে দুটি খাল দুর্গাপুর উপজেলার পলাশবাড়ি মৌজার মধ্যে বৈরাগির খাল বেয়ে হোজা নদীতে পড়ে। হোজা নদী গিয়ে মিলিত হয়েছে বারনই নদীতে। কিন্তু দুর্গাপুরের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি পলাশবাড়ি মৌজার বৈরাগির খাল দখল করে সেখানে বাঁধ দিয়ে পুকুর বানিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছে। এতে পবার পুর্বাঞ্চলের পানি নিস্কাশনের পথ বন্ধ হওয়ায় সহশ্রাধিক হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল তলিয়ে আছে। শুধু তাই নয় পানি উঠেছে কয়েকশো বাড়িতে।

ভূক্তভোগিরা জানান, প্রকৃত তথ্য গোপন রেখে ভূয়া কাগজ তৈরী করে দুর্গাপুর উপজেলার পলাশবাড়ি মৌজায় বৈরাগি খালের কিছু কিছু অংশ দখল করে স্থায়ী বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করে চলেছে ওই এলাকার প্রভাবশালীমহল।

পারিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল বারি ভুলু বলেন, পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বাড়িঘরে পানি উঠে তার ইউনিয়নের শতশত মানষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। পানিতে ডুবেছে বিভিন্ন বিলের জমির ফসল। এছাড়া গবাদিপশু নিয়ে মানুষ বেকায়দায় পড়েছে। তিনি জরুরীভাবে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এদিকে গত শুক্রবার বিকালে এসব নিমজ্জিত ঝুঁকিপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করেন রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন। এ সময় তার সাথে ছিলেন পবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুনসুর রহমান। ভুক্তভোগিরা জানান দূর্গাপুরের উপজেলার পলাশবাড়িতে বৈরাগির খালে পানি নিস্কাশন পথ বন্ধ করে মাছচাষ করার কারণে পবা উপজেলার কাটাখালি, হরিয়ান ও পারিলা ইউনিয়নের ফলিয়ার বিলসহ অনেক স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

গত শুক্রবার রাতেই পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করার লক্ষে পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী-৫ (দুর্গাপুর-পুঠিয়া) আসনের সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমান, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল, পবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুনসুর রহমান, দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিমুল আকতার, দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহসীন মৃধা ও রাজশাহী জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সানিউল হক প্রমুখ। সভায় পানি নিস্কাসন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত পানি নিস্কাশনের কোন ব্যবস্থা না হওয়ায় এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। যেকোন সময় সংঘর্ষের আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অপরদিকে সচেতনমহল মনে করেন, রাজনৈতিক জবাবদিহিতা ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া এই দুর্গাপুরের প্রভাবশালীদের মাছ চাষে নির্মিত বাঁধ কেটে পানি নিস্কাশন কখনোই সম্ভব নয়। এছাড়াও জনসচেতনতা বৃদ্ধি খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। পুকুর খননে মাছের লাভের চেয়ে অনেক বেশী ক্ষতি হচ্ছে কৃষিজীবী ও পরিবেশের। স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের মদদেই অপরিকল্পিত পুকুর খননের মহোৎসব চলেছে বলে জানিয়েছেন সচেতনমহল, পরিবেশবাদি ও ভুক্তভোগিরা।

  • 112
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে