রাজশাহীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বসন্তবরণ ও ভালবাসার পসরা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০; সময়: ৩:৫৯ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বসন্তবরণ ও ভালবাসার পসরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : শিক্ষানগরী রাজশাহীতে বসন্তবরণ ও ভালবাসা দিবসে মেতে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি শিক্ষকগণও বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই দিবসে অংশ নিতে ভুলেননি। এদিন হলুদ-কমলা রঙে বসন্তের সাজে প্রতিষ্ঠান চত্তর যেন অন্যরকম মাত্রা পেয়েছে। আর এই বসন্তবরণের মাঝে চলছে ভাললাগা ভালথাকা ও ভালবাসার প্রত্যাশা ও আকুতি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের ঐতিহ্যবাহী ও উত্তরবঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী কলেজে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বসন্ত বরণ উৎসব পালিত হচ্ছে। বসন্তকে বরণ করতে শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) সাড়ে ৯ টায় রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাস থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি কলেজ ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়ে নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার, কুমারপাড়া, জিরো পয়েন্টে প্রদক্ষিণ শেষে আবার কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হয়।

বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান, উপাধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল খালেক সহ অন্যান্য বিভাগীয় প্রধান শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা। বসন্ত বরণ উৎসব উপলক্ষে গত কয়েকদিন ধরেই রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন আলপনার রঙ্গে রাঙ্গিয়ে দেয়া হয়। এ উপলক্ষে শোভাযাত্রা শেষে কলেজ ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও বিকেলে বাউল সংগীত অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মহ. হবিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। প্রত্যেকটির সমান গুরুত্ব। বসন্তে নতুন উদ্যমে নতুন ভাবে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

এরপর শুরু হয় সকাল সাড়ে থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কলেজ প্রাঙ্গণে শুরু হয় বসন্ত কথন অনুষ্ঠানে গান, নৃত্য ও বাউল সঙ্গীত। কলেজ শিল্পীদের পাশাপাশি কুষ্টিয়া থেকে আগত বাউল শিল্পীরা গান বাউল গান পরিবেশন করেন।

নতুন সংশোধিত বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বসন্তের প্রথম দিনেই হচ্ছে ভালোবাসা দিবস। ইংরেজি বর্ষপঞ্জির ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভালোবাসা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। আর বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বসন্তের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা ফাল্গুন ছিলো ১৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের পর একই দিনে পড়ছে বসন্ত উৎসব আর ভালোবাসা দিবস।

শুধু এই দিন নয়, ১৯৭১ সালের কয়েকটি ঐতিহাসিক দিনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয়েছে নতুন বাংলা বর্ষপঞ্জি। যার ফলে ইংরেজি দিন ঠিক থাকলেও কিছুটা এদিক সেদিক হয়েছে বাংলা মাসের তারিখ। নতুন এই বর্ষপঞ্জিতে জাতীয় দিবসের বাংলা তারিখ এখন থেকে একই থাকবে প্রতিবছর।

ঋতুরাজ বসন্ত প্রকৃতিতে ফিরে আসায় যে আনন্দ, তা পালন করা হয় অনেক দেশেই। মজার বিষয় হলো আমরা রঙিন পোশাকে বসন্ত বরণ করি, পাশের দেশ ভারতে সাদা পোশাকে বসন্ত বরণ হয়।

কারণ, এদিন সবাই মেতে ওঠে রঙ খেলায়। রঙ ছোড়াছুড়ির মাধ্যমেই একে অন্যকে রাঙিয়ে তোলেন। বুলগেরিয়ায় মার্চের ১ তারিখে বসন্ত ফিরে আসার দিনটি পালন করা হয়। এ দিন সে দেশে পরিচিত গ্র্যান্ডমা মার্চ ডে নামে। লাল ও সাদা সুতায় তৈরি ছোট দুটি পুতুল বানিয়ে পরে থাকে প্রায় মাসজুড়ে, অনুষঙ্গ হিসেবে।

বসন্তের প্রথম আভাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফলের গাছে ঝুলিয়ে দেয়া হয় শুভকামনা হিসেবে। হানামি বা চেরি ব্লসম ফেস্টিভ্যাল জাপানের বসন্ত উৎসব। ফুলে ভরে থাকা চেরিগাছের নিচে সবাই জড়ো হয়। সঙ্গে থাকে খাওয়া, পানীয় আর গান।

ভালোবাসা দিবস কিভাবে এসেছে তা নিয়ে নানান বিতর্ক রয়েছে। কথিত আছে, ‘ভ্যালেন্টাইন’ নামে এক কিংবদন্তি তৃতীয় শতাব্দীর সময় রোমের একজন যাজক ছিলো। সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস সিদ্ধান্ত নেয় যে বিবাহিত পুরুষদের তুলনায় অবিবাহিত পুরুষ, সৈন্য হিসেবে বেশি ভালো। তাই তিনি তরুণ পুরুষদের জন্য বিবাহ নিষিদ্ধ করেন।

‘ভ্যালেন্টাইন’ রাজার অবিচার বুঝতে পেরে গোপনে তরুণ প্রেমিক ও প্রেমিকাদের বিয়ে দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিষয়টি রাজা জানতে পারেন এবং ক্ষুদ্ধ হয়ে ভ্যালেন্টাইনকে হত্যার নির্দেশ দেন। তার মৃত্যু কার্যকর হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি। আর এরপর থেকে ‘ভ্যালেন্টাইনের’ প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন’স ডে বা ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে।

এদিকে ঘিরে এ বছর ভালোবাসা দিবস ও প্রথম বসন্ত একই দিন। আর তাই ভালোবাসা দিবস ও বসন্তবরণে বর্ণিল আয়োজন চলছে রাজশাহী জুড়ে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, শুক্রবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্তবরণ উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্ততি নেয়া হয়েছে রাজধানীজুড়ে। শাহবাগের ফুলের দোকানগুলোতে পর্যাপ্ত ফুল মজুদ করেছে বিক্রেতারা। ফুল আর উপহারের দোকানে বেড়েছে ভিড়ও।

বিশেষ এই দিনটিকে ভালোবাসার সম্পর্কগুলোর আরেকটু যত্ন নেবার উপলক্ষ হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ। আবার কারো কারো মতে ভালোবাসার নেই কোনো সীমানা, নেই বিশেষ কোনো দিন।

ভালোবাসার মানুষের সাথে চুটিয়ে সারা জীবন সংসার বাদ-বিবাদ তাও সই। তবু বিশেষ দিবস বিশেষই। আর বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আবেদন ভালোবাসার মানুষের কাছে একদম আলাদা।

বিশেষ এ দিবসে প্রিয়জনকে উপহারে বরণ করে নেয়ার প্রস্তুতি শেষ। তবু ভিন্ন সুর ব্যবসায়ীদের। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বিশ্ব ভালোবাসা দিবস কে ঘিরে আয়োজনের নেই কমতি।

তরুণ তরুণীদের এ দিনকে ঘিরে আবেদন এবং উদযাপনকে সহজাত হিসেবেই দেখছেন সমাজবিজ্ঞানী। ফাগুনের নবীন আনন্দ এ ভালোবাসাকে ছড়িয়ে দিক মানুষ থেকে মানুষ, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম, জাগুক বিশ্ব মানবতা- এমনটাই প্রত্যাশা সমাজবিদদের।

  • 1
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে