রাজশাহীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আবর্জনার স্তূপে পরিপূর্ণ

প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২০; সময়: ১১:২০ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আবর্জনার স্তূপে পরিপূর্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীকে মূলত শিক্ষা নগরী বলা হয়। রাজশাহীতে ভারি কলকারখানা নেই। শুধুমাত্র শিক্ষার উপর নির্ভর করে রাজশাহীর সার্বিক বিষয়। কিন্তু করোনার কারণে রাজশাহীর শিক্ষা ব্যবস্থায় পড়েছে ভাটা। স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ সাড়ে তিন মাস। এ দীর্ঘ সময় রাজশাহীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ রয়েছে। এতে সরকারী স্কুল কলেজের শিক্ষক কর্মচারিরা চলতে পারলেও পথে বসার উপক্রম হয়েছে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারিদের। রাজশাহীর সরকারী বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। বন্ধ থাকা প্রতিটি স্কুল, কলেজের প্রাঙ্গণে জন্মেছে বড় বড় ঘাস ও আবর্জনার স্তুপ। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালা খোলা হয়নি তিন মাস। কলেজের হোস্টেলগুলোতে ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করছে। এছাড়াও বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরটা দেখলে বোঝার উপায় থাকে না যে সেখানে এক সময় শিক্ষার্থীদের বিচরণ ছিল।

সরেজমিন নগরীর সরকারী চার উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় এসব চিত্র। বেলা ১০টা বাজলেও এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই কোনো শিক্ষক বা কর্মচারি। স্কুলগুলোর ভেতরে দৃশ্য একেবারে উল্টা। দেখলে মনে হবে এসব স্কুলে দীর্ঘ সময় কেউ কখনো প্রবেশ করেনি। এমনকি ঝাড়ু দেয়া হয়নি বছরের পর বছর। ময়লা আবর্জনার স্তুপ পড়ে আছে পুরো স্কুলের মধ্যে। ভেতরে গাছের পাতা, আগাছার ও ঘাস জন্ম হয়েছে। এগুলো পরিস্কার না করায় হাটু পর্যন্ত লম্বা হয়েছে। স্কুলে ঠিকমত শিক্ষক কর্মচারিরা আসেন না। আসলেও পরিস্কার হয় না।

রাজশাহী সরকারী পিএন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের গেটের সাথে বসে থাকা পিয়ন বলছেন, করোনার কারণে প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে কেউ স্কুলে আসে না। মাঝে মাঝে তিনি এসে স্কুলের বারান্দা ঝাড়ু দিয়ে যান। কিন্তু স্কুলের মধ্যে আগাছা বিভিন্ন ধরনের জঙ্গল তৈরি হয়েছে যা পরিস্কার করা হয়নি। লক্ষীপুরের সরকারী ল্যাবটারি স্কুলের দৃশ্য দেখা যায় আরো করুন। গেট দিয়ে ঢোকার পরই চোখে পড়ে ছোট মাঠে বিভিন্ন ধরনের ঘাস হাঁটু পর্যন্ত লম্বা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্কুলের ভেতরে গিয়েও একই দৃশ্য দেখা যায়। রাজশাহী কোর্ট মহাবিদ্যালয়েও দেখা মিলেছে একই দৃশ্য। শুধু নগরীতেই নয়, জেলার উপজেলা পর্যায়ের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে শুধু উচ্চ বিদ্যালয় নয়, নগরীর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর অবস্থা আরও খারাপ। উচ্চ বিদ্যালয়গুলো তাও দু’একদিন খোলা হয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয় করোনার মধ্যে খোলা হয়নি। না খোলার জন্য পরিস্কার করাও হয়নি। প্রায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে বড় বড় ঘাস, পাতা আবর্জনার স্তুপ জমে গেছে। উপজেলা পর্যায়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলেজ, উচ্চ বিদ্যালয়গুলোর একই অবস্থা বিরাজ করছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম জানান, মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ছুটির শুরুর দিকে শিক্ষক কর্মচারিদের বিষয়গুলো দেখা শোনার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু করোনার কারণে শিক্ষকরা তা করেনি। অতিদ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য শিক্ষকদের নিদের্শনা দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

অপরদিকে জেলা শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন জানান, ছুটি ও শিক্ষার্থী না থাকার কারণে সব স্কুলে অবর্জনার স্তুপ পড়ে গেছে। এক মাস আগে জেলা প্রশাসক ও জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাথে আলাদাভাবে সভা হয়েছে। সেখানে প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অফিস করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু শিক্ষকরা অফিস করলেও বেশিরভাগই করেননি। এতে বিদ্যালয়ে দুরাবস্থা তৈরি হয়েছে। তিনি জানান, ক্লাস শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে সব পরিস্কার করে শিক্ষার্থীর পড়ালেখার উপযোগি করে তোলা হবে।

  • 311
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে