তানোরে অবাধে চলছে কারেন্ট জালে মা মাছ ও পোনা নিধন

প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০২০; সময়: ৮:২৮ অপরাহ্ণ |
তানোরে অবাধে চলছে কারেন্ট জালে মা মাছ ও পোনা নিধন

নিজস্ব প্রতিবেদক : মহামারী করোনা সংক্রমণের এই সময়েও সরকারি আইন লঙ্ঘন করে রাজশাহীর তানোর উপজেলায় শিবনদীর বিলকুমারীসহ বিভিন্ন খাল-বিল ও জলাশয়ে কারেন্ট জাল অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে জাটকা, ডিমওয়ালা, পোনা মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী অকালে মারা যাওয়ায় জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে উপজেলায় শিবনদীর বিলকুমারীসহ বিভিন্ন এলাকার খাল-বিল ও জলাশয়ে পানি বাড়ছে। বৃষ্টির পানিতে বিভিন্ন গ্রামের খাল-বিল ও নিচু এলাকা ধীরে ধীরে ভরে উঠছে। নতুন পানিতে স্থানীয় বিভিন্ন জাতের ছোট-বড় ডিমওয়ালা মাছ আসছে। মাছ-শিকারিরা কারেন্ট জাল দিয়ে অবাধে ডিমওয়ালা পুঁটি, ট্যাংরা, কই, শিং, মাগুর, চেলা মাছ ধরছেন। এর সঙ্গে ব্যাঙ, সাপ, কুচিয়াসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী কারেন্ট জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে নদীতে জেলেদের কারেন্ট জালে বড় মাছের পাশাপাশি ধরা পড়ছে পাঙাশ, রুই, কাতলসহ বিভিন্ন মাছের পোনা।

বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) বিকেলে শিব নদীর কুঠিপাড়া-গোল্লাপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা নৌকায় করে কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশির ভাগ জেলে রাতে মাছ শিকার করে সকালে বাজারে বিক্রি করেন। কেউ কেউ শখের বসে দিনের বেলায় মাছ শিকার করেন। এ ছাড়া শিব নদীর বিলকুমারী বিলের বিভিন্ন স্থানে আড়াআড়িভাবে কারেন্ট জাল ফেলে মাছ শিকার করা হচ্ছে। চাঁন্দুড়িয়া, কালিগঞ্জ, কাশিমবাজার, গোল্লাপাড়া, কুঠিপাড়া, চাপড়া, গোকুল, তালন্দ, কামারগাঁর বিলকুমারি বিল সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে একই রকম দৃশ্য দেখা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোল্লাপাড়া ও তালন্দ বাজারের কয়েকজন কারেন্ট জাল বিক্রেতা বলেন, কারেন্ট জালের ব্যবহার অনেক আগে থেকেই চলছে। উপজেলার অনেক বাজারেই কারেন্ট জালের ব্যবসা হয়।

বিলকুমারি বিল পারের বাসিন্দা আশরাফুল আলী বলেন, কারেন্ট জাল ওজনে কম। বহনে সহজ। দাম কম, মাছ ধরতেও সুবিধা বেশি। এই জালে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ ধরা পড়ে। এ কারণে সবাই এ জাল ব্যবহারে আগ্রহী। কারেন্ট জালের ব্যবহার বন্ধ না হলে দেশি প্রজাতির মাছের বংশবিস্তার বন্ধ হয়ে যাবে। সাপ, ব্যাঙসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণীও কমে যাবে।

গোকুল গ্রামের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, দিনের বেলায় কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ-শিকারিদের কম দেখা যায়। তাঁরা সন্ধ্যায় নদীর মাঝপথে আড়াআড়িভাবে জাল ফেলে রাখেন। ভোররাতে সেগুলো নিয়ে যান। তাঁদের ধরা কঠিন। সবাই এলাকার বাসিন্দা। এ কারণে কেউ কিছুই বলেন না। বাজারে নিষিদ্ধ জাল বিক্রি বন্ধ হলে কেউ আর মাছ শিকার করতে পারবেন না। কিন্তু প্রশাসন সে ধরনের কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদুল ইসলাম বলেন, কারেন্ট জালের ব্যবহার বন্ধে সারা বছর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া মহামারী করোনা সংক্রমণের সময়েও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জনসচেতনতা তৈরিতে সভা করা হয়েছে। অনেক সময় আমাদের চোখের আড়ালে কিছু অসাধু ব্যক্তি কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকার করছেন।

এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিঃদাঃ) আলমগীর হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, যারা বে-আইনীভাবে মাছ শিকার করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে