রাজশাহীতে ৮৪ বছর বয়সের বৃদ্ধের করোনা জয়

প্রকাশিত: জুন ১, ২০২০; সময়: ১:১৬ পূর্বাহ্ণ |
রাজশাহীতে ৮৪ বছর বয়সের বৃদ্ধের করোনা জয়

শাহীন সাগর, মোহনপুর : বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন তিনি। বার্ধক্যজনিত কারণে শরীরে বাসা বেধেছে নানা রোগ। সর্বশেষ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসও ছাড়েনি তাকে। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে দাঁড়িয়ে সব সময় ভয় আর আশঙ্কা যুদ্ধ করেছেন করোনাভাইরাসের সঙ্গে। বেঁচে থাকার দৃঢ় প্রত্যয়ে ইস্পাত কঠিন মনোবল নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ম মেনে শেষ পর্যন্ত ৮৪ বছর বয়সে করোনা জয় করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন রাজশাহীর মোহনপুরের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক মনসুর রহমান।

তিনি বলেন, করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তাঁকে একা থাকতে হয়েছে। কিন্তু পরিবার ও চিকিৎসকদের সব সময় তাঁর কাছে পেয়েছেন। ডাক্তারদের গাইড লাইন মানার কারণে দিন দিন তার শারীকিক উন্নতি হওয়ার কারণে তার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। মনে গভীরে জমে থাকা কালো মেঘটি আস্তে আস্তে কেটে গেছে। সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন তিনি।

মনসুর রহমানের বাড়ি রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার জাহানাবাদ ইউনিয়নের নওনগর গ্রামে। তাঁর এক ছেলে ও চার মেয়ে। কলেজ শিক্ষক ছেলের সঙ্গে তিনি গ্রামে থাকেন। গত ২৬ এপ্রিল নমুনা পরীক্ষায় তাঁর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। তারপর বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হয়েছেন। পরপর ৪ বার পরীক্ষা শেষে রোববার তাঁকে করোনামুক্ত ঘোষণা করেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক।

মনসুর রহমান বলেন, এই দু:সময়ে নিকট আত্মীয়ের মত পাশে ছিলেন মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এই বয়সে আমি যদি প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হতে পারি; তাহলে আমার বিশ্বাস চিকিৎসকদের নির্দেশনা মেনে চললে এবং আত্মবিশ্বাস না হারালে সবাই করোনা থেকে মুক্ত হতে পারবেন।

মনসুর রহমান দির্ঘদিন যাবত বার্ধক্য জনিত কারণে কাশি ও বুকের ব্যাথায় ভুগছিলেন। গত ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় তার শরীরিক অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের লোকজন তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকরা তাকে ৩৯ নং ওয়ার্ডে (করোনা পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ড) ভর্তি করে। এরপর তার এক্স-রে ও ইসিজি করার পর শারীরিক অবস্থা ভাল জানিয়ে তাকে গত ২১ এপ্রিল দুপুরে ছুটি দেয়। পরিবারের লোকজন তাকে বাড়ি নিয়ে যান। এরপর ওই বৃদ্ধের জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে ২৫ এপ্রিল সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে পাঠায়। ২৬ এপ্রিল পরীক্ষার পর করোনা পজেটিভ আসে।

মনসুরের ছেলে কলেজ শিক্ষক আল-আমিন জালাল বলেন, আমার বাবা এই বয়সে করোনা জয় করলেন। এ জন্য মহান আল্লাহর কাছে আমরা কৃতঙ্গ। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে ভয় না করে কাছে রেখে সাহস দিয়ে আত্মবিশ্বাস ও শরীরে ইমিউনিটি বাড়লে এবং সেবা দিলে খুব সহজেই সুস্থ্ হয়ে যান।

মনসুরের পুত্রবধূ বাকশিমইল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শামীমা পারভীন বলেন, তাঁর শ্বশুড়ের করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তাঁরা কিছুটা বিপদেই পড়ে যান। কারণ তার একমাত্র সন্তান থেলাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। আশপাশের লোকজন তাঁকে বাড়িতে রাখতে দিতে চাননি। অনেক ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ওসিসহ চিকিৎসকেরা আশপাশের লোকজনকে বুঝিয়ে আমার শশুরকে বাড়ীতে রেখে সেবা করা হয়েছে। বাড়ী লকডাউন থাকাকালীন সময়ে চিকিৎসকেরা বাজার পর্যন্ত করে দিয়েছেন। আমার শশুর এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। এ জন্য আমি চিকিৎসক ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানাই।

মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আরিফুল কবীর বলেন, ৮৪ বছর বয়সের বৃদ্ধের করোনা জয় নজির সৃষ্টি করেছে। দেশে এতো বয়সের কোন করোনা আক্রান্ত রোগি সুস্থ্য হয়েছে কি না তা জানা নেয়। তবে তিনিই দেশের সবচেয়ে বয়স্ক করোনা আক্রান্ত সুস্থ্য হওয়া রোগি। তার সুস্থ্যতা করোনায় আক্রান্ত রোগিদের আরও আত্মবিশ্বাসি করে তুলবে বলে আমি মনে করি। সোমবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে বলেও জানান এই চিকিৎসক।

মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানওয়ার হোসেন বলেন, ওই ব্যক্তির করোনা শনাক্ত হওয়ার পর আশপাশের লোকজন তাঁকে বাড়িতে রাখা নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। পরে তাঁদের বোঝানো হয়েছে। আমি নিজে সব সময় মনসুর রহমানসহ করোনা আক্রান্ত রোগিদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। সহযোগিতা যা দেয়ার দিয়েছে। ফলে এ উপজেলায় আক্রান্ত ৭ জনের মধ্যে ইতোমধ্যেই চারজন সুস্থ্য হয়েছেন বলে জানান তিনি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে