বাঘায় সমাজের কথা না মানায় ‘একঘরে’ এক পরিবার

প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২০; সময়: ৮:৪৬ অপরাহ্ণ |
বাঘায় সমাজের কথা না মানায় ‘একঘরে’ এক পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঘা : রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের পারশাওতা গ্রামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির একটি পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। পরিবারটির সদস্যদের সাথে গ্রামের অন্যান্য পরিবারের যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে পরিবারটি একঘরে হয়ে জীবন যাপন করছে।

ওই পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, কোন এক ঘটনার পর স্ত্রীকে বাবার বাড়িতে পাঠায় গ্রামের দিলীপ মল্লিক। পরে স্ত্রীকে বাড়িতে এনে ঘর সংসার করতে থাকে। এ ঘটনায় খেপে যায় গ্রামের নৃগোষ্ঠি পরিবারের সমাজ। এ কারণে তাদের সমাজচ্যুত করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে ওই বাড়িতে অন্যদের প্রবেশাধিকার।

জানা যায়, প্রায় আড়াই মাস আগে গ্রামের দিলীপ মল্লিকের স্ত্রী স্থানীয় এক ইউপি সদস্যর মোটরসাইকেলে নিজ বাড়িতে আসে। এনিয়ে গ্রামে কানা কানি শুরু হয়। অন্যদিকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করায়, পরকিয়ার সন্দেহ হয় স্বামী দিলীপের। এনিয়ে স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্বের এক পর্যায়ে স্ত্রী সাগরিকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় স্বামী দিলীপ মল্লিক। গত রমজান মাসের ৩ তারিখে আবার স্ত্রীকে তার বাবার বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে দিলীপ মল্লিক। তাকে এনে ঘর সংসার করার অভিযোগে সভা করে সমাজচ্যুত করা হয় ঐ পরিবারকে।

সরেজমিন রোববার এ খবর সংগ্রহ করতে গেলে প্রতিনিধিকে এসব কথা জানান সমাজচ্যুত দিলীপ মল্লিক ও তার সমাজ প্রধান নিপেন মল্লিক। তারা জানান, ৬দিন আগে সমাজচ্যুত করা হয়েছে।

গ্রামের সত্ত্যন মল্লিক জানান, সমাজে উঠতে হলে ওই নারির মাথার চুল কেটে, মাথায় ঘোল ঢেলে সমাজের লোককে খাওয়াতে হবে। এর আগে গ্রামের কেউ ওই পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গে কথা বলতে পারবেনা।

পাড়ার কয়েকজন নারি জানান, দিলীপ মল্লিক নিজেই তার স্ত্রীর পরকিয়ার কথা রটিয়েছে। তবে সে বেপরোয়াভাবে চলতো বলে জানান তারা।

দিলীপ মল্লিক জানান, নানান কারণে স্ত্রীকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন। সেখান থেকে নিজ বাড়িতে আনি। পরে সমাজ থেকে বলা হয়েছে, কলঙ্ক মুচনের জন্য স্ত্রীর মাথা ন্যাড়া করে, মাথায় ঘোল ঢেলে দিতে হবে এবং সমাজের লোককে খাওয়াতে হবে। সেই কথা না মানার কারণে সমাজচ্যুত করা হয়েছে।

তার স্ত্রী সাগরি জানান, তিনি কর্মসৃজন প্রকল্পে কাজ করেন। তাই এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার মোটরসাইকেলে এসেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি সদস্য একরাম আলী সরকার বলেন, সমাজের লোকজন তাদের সঙ্গে কথা বলবে কি বলবে না, সেটা তাদের ব্যাপার। তবে অনুরোধে ওই নারিকে তার বাড়িতে রেখে এসেছেন বলে জানান তিনি।

ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানান, ‘কাউকে একঘরে করার বিধান নেই। পরিবারটিকে একঘরে করার বিষয়টি আমার জানা নেই। ঘটনাটি সত্য হলে প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’

এ বিষয়ে বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এর সরকারি মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্বব হয়নি।

  • 111
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে