লকডাউন শিথিলে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে করোনা

প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২০; সময়: ৯:৫৫ অপরাহ্ণ |
লকডাউন শিথিলে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে করোনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, মোহনপুর : আজ ৩০ মে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সর্বশেষ ঘোষিত সাধারণ ছুটি শেষ হচ্ছে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে লকডাউন শিথিল ও ৩১ মে থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলছে। চলাচল শুরু হচ্ছে অভ্যন্তরীণ রুটের বিমান, বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ গণপরিবহন। দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটি আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, রাত ৮টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। এ নিষেধাজ্ঞার সময় মানুষকে অবশ্যই স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। হাট-বাজার ও দোকানপাট এবং শপিং মল বিকাল ৪টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। কেনাবেচার সময় পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এ সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন জনস্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞরা। কেউ বলছেন জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। কেউ বলছেন অর্থনীতিতে গতিসঞ্চারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এগুলো খুলে দেয়ার বিকল্প নেই।

তারা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের সব কিছু যখন স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তখন দেখা যাচ্ছে রেকর্ডসংখ্যক নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। সংক্রমণের হার দ্রুত বেগে বাড়ছে। ঈদে অনেক মানুষ ভ্রমণ করেছেন। যার ফলে দেশের আনাচে-কানাচে পৌঁছে গেছে করোনা ভাইরাস। এখন দেশে করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। যদিও দেশের প্রকৃত চিত্র এখনও দৃশ্যমান নয়। লকডাউন শিথিল করায় কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের কারণে করোনা সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে। এক্ষেত্রে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালনের কোনো বিকল্প নেই। নয়তো বড় ধরনের স্বাস্থ্য সংকট দেখা দিতে পারে।

রাজশাহীর মোহনপুরে এ পর্যন্ত প্রায় ২৫০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পাঠানোর পর করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৭ জন। ৩ জন করোনা মুক্ত হওয়ায় তাদেরকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এ উপজেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮ জন। তারা সবাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মেনে বাড়ীতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মোহনপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রাতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারান্টাইনে আছেন ৪ জন। বাড়ীতে হোম কোয়ারান্টাইনে আছেন ২৩ জন। এ অবস্থায় জীবন জীবিকার তাদিগে অবাধে চলাচল করছে মানুষ। দিন দিন রাস্তাঘাটে বাড়ছে যানবাহনের ভিড়। বিপণিবিতানসহ সবগুলো দোকানপাট পুরোদমে খোলার পর সামাজিক দূরত্ব ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে যাওয়া উপক্রম দেখা যাচ্ছে বলে শঙ্কা করছেন সচেতন মহল। উপজেলার হাটে বাজারে যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচল অনেকটাই বেড়ে গেছে। রাজশাহী নগরীতে শপিং মলগুলো বন্ধ থাকলেও পাড়া-মহল্লা ও মার্কেটের বাইরের দোকানগুলোর অধিকাংশই খোলা। এসব দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব।

শুক্রবার উপজেলা সদর, কেশরহাট, মৌগাছি, ধুরইলহাট, শ্যামপুরহাট, কুঠিবাড়ীবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। যারা ঘরের বাইরে বের হয়েছেন তাদের অধিকাংশ লোকের মুখে মাস্ক নেই। নেই কোন সামাজিক দূরত্ব। চিত্র দেখে মনে হয়েছে দেশে কোন করোনার বালাই নেই। বিকাল থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত বিভিন্ন বাজার ও মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন দোকানপাট খোলা রাখা হয়েছে। চা এর স্টলগুলোতে সামাজিক দূরত্ব ভেঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে আড্ডা ও খোশ গল্প। সবকিছু আগের মত চললেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।

সরেজমিনে শুক্রবার উপজেলার বিদিরপুর বাজার থেকে কামারপাড়া মোড় পর্যন্ত সড়কে কোথাও চেকপোস্টগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়াকড়ি দেখা যায়নি। এ সড়কে এক সপ্তাহ আগের দিনগুলোর তুলনায় তিনগুণ বেশি যানবাহন চলতে দেখা গেছে। চলতে দেখা গেছে ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটো, ভ্যানও। অবাধে চলেছে সিএনজি। প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলও চলেছে অহরহ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অফিসার ফোর্সরা কারণ ছাড়া রাস্তায় যারা বের হচ্ছেন তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা জরুরি পরিষেবা যেমন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা কৃষিপণ্য, সার, কীটনাশক, খাদ্য, শিল্প পণ্য, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালামাল, কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল ও জরুরি সেবা চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মী, ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মী, গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক) এবং ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের কর্মীদের ক্ষেত্রে শিথিলতা রয়েছে বলে জানা গেছে।

কিভাবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধ করা যায় এ বিষয়ে জানতে চাইলে, করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডা: নাদিম মোস্তফা জানান, নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার জন্য প্রত্যেককে সাবধানে থাকতে হবে, এটাই এখন একমাত্র করণীয়। যতদিন আমাদের এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হবে। অতি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে হলে পাতলা সুতির পুরাতন ফুল হাতার জামা/পাঞ্জাবি ও একটু লুজ ফিটিং প্যান্ট/ পায়জামা পরতে হবে। জুতা ও মোজা অবশ্যই পরতে হবে। অবশ্যই সার্বক্ষণিক মাস্ক পরে থাকতে হবে। গ্লাভস এর পরিবর্তে সঙ্গে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে, পাশাপাশি রোদ চশমা কিংবা ফেস শিল্ড ব্যবহার করতে হবে।

তিনি বলেন, সবারই তিন স্তর বিশিষ্ট সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। সার্জিক্যাল মাস্ক ৮০ ভাগ সুরক্ষা দেয়। প্রয়োজনে বাইরে বের হলে ৬ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা উত্তম। কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। ধাতব বস্তু যেমন ঘড়ি, চেইন, ব্রেসলেট ইত্যাদি পরে বাইরে যাবেন না। কারণ ধাতব বস্তুতে ভাইরাস অনেকদিন বেঁচে থাকতে পারে। আর মোবাইল ফোন যেখানে-সেখানে ফেলে রাখবেন না। মোবাইল ফোন থেকেও ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।

জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আরিফুল কবির বলেন, লক ডাউন শিথিল করায় ঈদে অনেক মানুষ ভ্রমণ করেছেন। যার ফলে দেশের আনাচে-কানাচে পৌঁছে গেছে করোনা ভাইরাস। এখন দেশে করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। দিন দিন সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে। এক্ষেত্রে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালনের কোনো বিকল্প নেই। নয়তো বড় ধরনের স্বাস্থ্য সংকট দেখা দিতে পারে।

লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্ত দেশের সামগ্রিক জনস্বাস্থ্যকে হুমকিতে ফেলবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে