এবার পদের দৌড়ে এগিয়ে গোদাগাড়ীর হাইব্রিট নেতারা

প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২২; সময়: ১১:২৯ অপরাহ্ণ |
এবার পদের দৌড়ে এগিয়ে গোদাগাড়ীর হাইব্রিট নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘ প্রায় আট বছর পর আগামী ১৮ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সম্মেলনকে ঘিরে চাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পদ পেতে লবিং ও তদবিরে ব্যস্ত অনেকে।

বিশেষ করে পদের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন দলের হাইব্রিট নেতারা। ফলে ভোটের মাধ্যমে সম্মেলনে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে কি না এ নিয়ে সংশয়ে নেতাকর্মীদের।

সর্বশেষ গত ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর এ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে সভাপতি মনোনিত হন বদিউজ্জামান বদি এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন আব্দুর রশিদ।

উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রমতে, গত উপজেলা নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে নৌকার বিরোধীতা করে ভোট করায় কোনঠাসা হয়ে স্থানীয় ভাবে বহিষ্কার করা হন বদিউজ্জামান বদি। এর পর হতে সে নিরবে রাজনীতির মাঠের বাইরে গিয়ে নিজের ব্যবসা বাণিজ্যে মনোনিবেশ করেছেন। তাকে দলীয় কোন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় না।

বদিউজ্জামান বদির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি আগামী ১৮ মে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে থাকছেন না।

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট টেনে তিনি বলেন, একজনের ইচ্ছায় ও পরিকল্পিত ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি তৈরী হয়েছে। যার কোন অনুমোদন নাই। এছাড়া এখন পর্যন্ত সম্মেলনের কোন কাউন্সিলর তৈরী করা হয়নি। রাজনৈতিক এই অবস্থায় তিনি কোন প্রার্থী হিসেবে থাকবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

অপরদিকে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ স্থানীয় এমপির আস্তাভাজন হিসেবে পরিচিত। তবে বর্তমানে তার সঙ্গেও স্থানীয় এমপির কিছুটা দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এমপির পছন্দের তালিকা থেকে ছিটকে পড়েছে বলে রাজনৈতিক মাঠে গুঞ্জন রয়েছে।

আব্দুর রশিদ বলেন, আমি রাজনীতির মাঠে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে বিচরণ করে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। আওয়ামী লীগের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও আবেগ আছে। আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে নিজে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে ইচ্ছে পোষণ করেছি। তবে আমাদের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী যেটা ভালো মনে করবেন সেটাই হবে। আমি তার বিরুদ্ধে গিয়ে কোন কাজ করবো না বলে জানান।

সূত্রমতে, বর্তমানে গোদাগাড়ী আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা কন্ঠাসা হয়ে রয়েছেন। আর রাজনীতি রাস করছেন বিএনপি ও জামায়াত থেকে যোগ দেয়া নেতারা। যাদের মধ্যে রয়েছে বিএনপির সভাপতি ও কাকনহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল মজিদকে, জামায়াত পরিবার থেকে আসা মাটিকাটা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আব্দুল আওয়াল রাজু। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে এই দুইজন স্থানীয় এমপির গুডবুকে রয়েছেন বলে রাজনীতির মাঠে গুঞ্জন রয়েছে।

জানা গেছে, মাটিকাটা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল আওয়াল রাজুকে রয়েছে নানান বিতর্ক। তিনি এই কলেজের অধ্যক্ষ হওয়ার আগে আওয়ামী লীগের কোন দল বা কোন কার্যক্রমে দেখা যায়নি। কলেজের অধ্যক্ষ হবার পর উপজেলা কমিটিতে নিজের নাম স্থান করে নেয়। এর পর হতে ধীরে ধীরে এমপির আস্থা ভাজন হিসেবে গড়ে উঠে বর্তমানে সেই এমপি কাছের লোকে পরিণত হয়েছে।

আব্দুল আওয়াল রাজু এর আগে জামায়াত ইসলামের রাজনীতির অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তার বাড়ী উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়নের বিড়ইল গ্রাম। তিনি মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে। তার বাবা জামায়াত ইসলামের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

এই দুজন এমপির পছন্দের শীর্ষের তালিকায় থাকায় পুরাতন ও ত্যাগী আওয়ামী লীগের নেতারা প্রার্থী হিসেবে জানান দিতে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না। কারণ হিসেবে জানা গেছে, এমপির কথার বাইরে গেলে পরে তার রষাতলে পড়ে নানান ভাবে হেনস্থা হতে হয়। ইতোপূর্বে যারা বিরোধীতা করেছে তারা আজ রাজনীতির মাঠ থেকে ছিটকে পড়েছেন।

আগামী ১৮ মের সম্মেলনকে ঘিরে যাদের নাম রাজনীতির মাঠে ভেসে বেড়াচ্ছে তাদের মধ্যে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আসাদুজ্জামান আসাদ, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আকতারুজ্জামান, কাকনহাট পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মজিদ, গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আওয়াল রাজু, গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেয়র অয়েজ উদ্দীন বিশ্বাস।

সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম মুক্তি, গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মাহবুব-উল-আলম মুক্তি বলেন, আওয়ামী লীগ আমার ভালোবাসার ও রক্তের স্পন্দনে থাকা দল, ছাত্র অবস্থা থেকেই আমি দলের নেতৃত্ব ও আওয়ামী লীগের দুর্দিনে থেকেছি। বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থায় ত্যাগী ও প্রকৃত আওয়ামীলীগের অবস্থান ভালো নয়।

মুক্তি তিনি তার রাজনৈতিক অবস্থান জানান দিয়ে বলেন, আমি ১৯৯১ সালে গোদাগাড়ী সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের সাধারণ, ১৯৯২ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯৭ সালে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ২০১৫ সালে রাজশাহী জেলঅ স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ন আহ্বায়ক এবং বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।

এই সম্মেলনকে ঘিরে শোনা যাচ্ছে যারা নেতৃত্ব আসবে মূলত তারা প্রকৃত আওয়ামী লীগের মূলধারার সাথে সম্পৃক্ত নয় । এরা নেতৃত্বে আসলে দলের সাংগঠনিক ও এলাকায় আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিবে। এদের মধ্যে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠকি সম্পাদক একেএম আসাদুজ্জামান আসাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

জেলা ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আকতারুজ্জামান বলেন, বর্তমান যে ভাবে পকেট কমিটি হচ্ছে তাতে প্রার্থী হিসেবে জানান দেওয়া বিপদ জনক মনে হচ্ছে । তবে দল আমাকে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দিলে আমি দায়িত্ব নিতে রাজি আছি বলে জানান।

গোদাগাড়ীর আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও প্রবীন নেতা হিসেবে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল মালেকও একই সুরে বলেন দল আমাকে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক যাই দেকনা কেনো আমি তা গ্রহণ করতে রাজি আছি বলে জানান।

রবিউল আলম, এক সময়ে বিএনপি যুবদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই সাথে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আমিনুল হকের অতিঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এসব বিতর্কিত নেতাদের নেতৃত্বে আসার খবরে আওয়ামী লীগের প্রকৃত ও ত্যাগী কর্মীদের মাঝে এক রকম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। কে আসছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগ কি আসলেই বেঁচে থাকবে নাকি বিএনপি জামায়াতের নেতৃত্বে থাকা নেতাদের আওয়ামী নামধারী নেতাদের হাতে চলে যাচ্ছে?।

মাঠ পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ আগামী ১৮ মে সম্মেলকে ঘিরে উপজেলার বিভিন্ন ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এসব কমিটিতে ইচ্ছেমত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে দিচ্ছে এমপি ফারুক চৌধুরীর মনোনিত নেতারা। যারা আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতা ও অন্যদল হতে আসা নেতা। তাদের মাধ্যমে কমিটি গঠন হওয়ায় আগের ও ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে জামায়াত-বিএনপি ঘেষা নেতাদের নেতৃত্ব আনা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে