নৌকার বিদ্রোহীর সমর্থন প্রমাণ হলে পদত্যাগ করবেন এমপি মনসুর

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২২; সময়: ৭:০৫ অপরাহ্ণ |
নৌকার বিদ্রোহীর সমর্থন প্রমাণ হলে পদত্যাগ করবেন এমপি মনসুর

নিজস্ব প্রতিবেদক : সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা বিরোধীদের সঙ্গে রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমানের বিরুদ্ধে সখ্যতার অভিযোগ উঠেছে। তিনি আ’লীগ দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রমের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নৌকা বিরোধীদের নিয়ে মাঠ দাপিয়ে নিজস্ব  নীতিতে এগুচ্ছে বলে ত্যাগী, তৃনমূল নেতা-কর্মীদের অভিযোগ। আর বিএনপি-জামায়াতের সাথে রয়েছে পূর্ব ঘনিষ্ঠতা। এনিয়ে আ’লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা ও বিস্তর ক্ষোভ।

এতে বিভাজন হতে বসেছে স্থানীয় আ’লীগসহ সহযোগী অঙ্গ-সংগঠনগুলো। যার প্রেক্ষিতে জেলা আওয়ামী লীগের মাধ্যমে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন দুর্গাপুর ও পুঠিয়া উপজেলার দলীয় মনোনিত প্রার্থীরা। নির্বাচনে অংশ নেওয়া নৌকার বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাথে এমপি ডা. মনসুর রহমানের সক্ষতার প্রমান পাওয়া গেলে দলীয় কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারনী নেতাদের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১, ২ ও ৪ জানুয়ারি জেলা কমিটিসহ আ’লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ অভিযোগ গুলো একসাথে ডাক যোগে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ কারীদের মধ্যে রয়েছে, দুর্গাপুর উপজেলার ৩ নম্বর পানানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাহার আলী খান, ৭ নম্বর জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান, ৪ নম্বর দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের নৌকার পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আহসান হাবিব, ৫ নম্বর ঝালুকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকতার আলী এ সকল অভিযোগ দেন।

সূত্রে আরও জানা গেছে, দুর্গাপুর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিপক্ষে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশ গ্রহনে মদদ দেওয়া এবং নির্বাচনে অংশগ্রহনের পরে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাথে সখ্যতার অভিযোগ তুলেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে তদন্ত করে সখ্যতার প্রমান মিললে সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী করেছেন উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

দুর্গাপুর উপজেলার তৃনমূল থেকে ইউপি নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মনসুর রহমান নৌকার বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগে দ্রুত সাংগঠনিক সভা ডেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতারা।

আবার চতুর্থধাপে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে উপজেলার দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়নে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হন আওয়ামী লীগ নেতা রিয়াজুল ইসলাম। দলীয় বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম নৌকার প্রার্থী আহসান হাবিবকে পরাজিত করে তার নির্বাচন পরিচালনাকারী উপদেষ্টা আ’লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ।

পরে স্থানীয় নেতা বাচ্চু’র নেতৃত্বে নৌকাকে হারাতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনকারী নেতৃবৃন্দদের সাথে নিয়ে এমপি মনসুর রহমানের রাজশাহীস্থ বাসভবনে গিয়ে বিএনপি-জামায়াতের দোসরদের নিয়ে এমপি ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এসময় দলীয় নৌকার প্রাথীকে পরাজিত করার বিজয়ী আনন্দ বিনিময় করেন এবং এমপি আর্শিবাদ নিয়ে মদদ পুষ্ঠ হক বিদ্রহী প্রার্থীরা।

মূহুর্তের মধ্যে এমপির সাথে বিজয়ী আনন্দের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে দুর্গাপুর উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, চতুর্থ ধাপে একই সাথে অনুষ্ঠিত হওয়া উপজেলার আরও ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে পানানগর, ঝালুকা ইউনিয়নে তার ব্যক্তি রাজনীতিতে বিশ্বাসী নেতারা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়। পরে নৌকার বিজয় ঠেকিয়ে ব্যক্তি রাজনীতির বিজয় ঘটাতে পানানগর ইউনিয়নে আদম আলী, ঝালুকা ইউনিয়নে তার ব্যাক্তি রাজনৈতিক উপদেষ্টা মোজাহার আলীকে দলীয় বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করানো হয়।

উল্লেখ্য’ আ’লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী বহিষ্কৃত নেতা আদম আলী ও ঝালুকা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া আ’লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী বহিষ্কৃত নেতা মোজাহার আলীকে সঙ্গে নিয়ে ঝালুকা ইউনিয়নের আমগাছী সাহারবানু উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বাধীনতা ৫০ বছর পূর্তি সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মনসুর রহমান।

এসময় অনুষ্ঠানে ছিলেন দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়নে দলীয় বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী রিয়াজুল ইসলামের নির্বাচন পরিচালনাকারী উপদেষ্টা দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু। ঝালুকা ইউনিয়নে নৌকা বিরোধী বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীর উপদেষ্টা কবিরুল ইসলাম আনিস। ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি এমরান আলী সহ ইউপি নির্বাচনে নৌকা’র বিপক্ষে সরাসরি অংশ নেয়া অনেক নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

পরে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দুর্গাপুর উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সর্ব স্তরের নেতাকর্মীদের মাঝে চরম হতাশার সৃষ্টি হয়। চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে ঝালুকা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক অমর ফারুক ও পানানগর স্থানীয় যুবলীগনেতা মো. মোসতক আলী বলেন, এমপির পচ্ছন্দের প্রার্থী নৌকার মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি বিভিন্ন ভাবে নৌকা বিরোধীদের নিয়ে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন।

এ বিষয়ে দুর্গাপুরের পানানগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি রমজান আলী জানান, উক্ত ইউনিয়ন গুলোতে এমপি মনসুরের পছন্দের প্রার্থীরা মনোনয়ন না পাওয়ায় তাদের নৌকার বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে অংশ গ্রহনে সহযোগীতা করাসহ অর্থিক লেনদেন ও সখ্যতার অভিযোগ প্রমানিত হলে এমপি মনসুরের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এতে তার নির্বাচনী এলাকায় দলীয় নির্দেশনা অনুসারে তাকে বয়কঠের সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

ঝালুকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আকবর আলী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই এমপির নির্দেশে একটি পক্ষ আ’লীগের নৌকা প্রতীকের বিজয় ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

এ বিষয়ে দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আহসান হাবিব বলেন, নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বহিস্কৃত বিদ্রোহী প্রার্থী এমপির সাথে ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় ও আনন্দ উৎসব করছে। এর থেকে আর কি প্রমান লাগবে যে, এমপি মনসুর নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতা করেননি। এমপি সাহেবের এমন আচরনের ফলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নৌকার বিপক্ষে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে এমপি মনসুরের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ ছিলো বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মনসুর রহমানের বিরুদ্ধে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া দুর্গাপুর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থীদের গোপনে মদদ ও সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে ইতিমধ্যে দুইটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে।

কয়েকদিনের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তদন্ত কমিটি করা হবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর বহিস্কৃত আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগের এমপি সভা সমাবেশ বা বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে যাওয়া চলাফেরা সম্পূর্ন দলীয় সাংগঠনিক নিয়ম পরিপন্থি বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার জানান, শুধু রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসন নয়’ রাজশাহীর ৯ টি উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় দলের অনেকে নৌকার বিরোধিতা করেছে আমরা সেই অভিযোগ পেয়েছি। যারা বিরোধিতা করেছে তাদের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে কেন্দ্রে জানানো হবে। কেন্দ্র তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে। নির্বাচনে এমপির ভূমিকা নিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

এসব বিষয়ে রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ ডা. মনসুর রহমান শুক্রবার দুপুরে মোবাইলে বলেন, আমি কখনো নৌকার বাইরে যায়নি। নৌকার প্রার্থীদের সাথেই কাজ করেছি। জননেত্রী আ’লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকার মনোনয়ন দিয়েছেন। কিন্তু’ স্থানীয় দলীয় কিছু নেতাদের কারণে ভুল তথ্য উপস্থাপন করায় যোগ্য ব্যক্তি নৌকার মনোনয়ন পায়নি। আমি নৌকার বিরুদ্ধে ছিলাম এমন অভিযোগ সত্য নয়। কেউ এমন অভিযোগ করলে আমি সংসদ সদস্য থেকে পদত্যাগ করবো।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে