আড়ানী পৌরসভায় জামানত হারালেন বিএনপি প্রার্থী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২১; সময়: ৮:৪২ অপরাহ্ণ |
আড়ানী পৌরসভায় জামানত হারালেন বিএনপি প্রার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঘা : প্রথমবারের মতো ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হওয়া রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন দলীয় প্রতীকে অংশ নেওয়া বিএনপির মেয়র প্রার্থী তোজাম্মেল হক। পৌরসভার প্রদত্ত ভোটের ৮ ভাগের ১ ভাগ ভোট না পাওয়ায় তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

জামানত হারিয়েছেন আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী রিবন আহমেদ। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলীর নিকট ১৬০৪ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন দলীয় প্রতীকে অংশ নেওয়া আওয়ামীলীগের শহীদুজ্জামান।

গত ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মোঃ মুক্তার আলী নারিকেল গাছ প্রতীকে পেয়েছেন ৫,৯০৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ’লীগ দলীয় প্রার্থী মোঃ শহীদুজ্জামান (নৌকা) পেয়েছেন ৪,৩০০ ভোট। ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মোঃ তোজাম্মেল হক পেয়েছেন ১৩১২ ভোট। জামানত হারানো আরেক মেয়র প্রার্থী হলেন- রিবন আহমেদ। তিনি মোবাইল ফোন প্রতীকে পেয়েছেন ৯০ ভোট। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে নারি-পুরুষ মিলে মোট ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ৯৮৪। প্রদত্ত ভোটার সংখ্যা ১১ হাজার ৬২১।

নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, নির্বাচনে আড়ানী পৌরসভায় মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন বর্তমান মেয়র মোঃ মুক্তার আলী। জামানত হারিয়েছেন বিএনপি প্রার্থী তোজাম্মেল হক ও স্বতন্ত্র আরেক প্রার্থী রিবন আহমেদ। মেয়র পদে এক-অষ্টমাংশের (৮ ভাগের ১ ভাগ) কম ভোট পাওয়ায় জামানত ফেরত পাবেন না।

নির্বাচন কমিশনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠানো প্রাথমিক ফলাফল বার্তাশিট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এবার পৌরসভা নির্বাচনে ১ থেকে ২৫ হাজার ভোটার সম্বলিত নির্বাচনী এলাকার জন্য ১৫ হাজার টাকা, ২৫ হাজার ১ থেকে ৫০ হাজার ভোটার সম্বলিত নির্বাচনী এলাকার জন্য ২০ হাজার টাকা, ৫০ হাজার ১ থেকে ১ লাখ ভোটার সম্বলিত নির্বাচনী এলাকার জন্য ২৫ হাজার টাকা এবং ১ লাখ বা তদুর্ধ্ব ভোটার সম্বলিত নির্বাচনী এলাকার জন্য ৩০ হাজার টাকা জামানত দিতে হয়েছে মেয়র প্রার্থীদের। যারা এক-অষ্টমাংশের (৮ ভাগের ১ ভাগ) বেশি ভোট পেয়েছেন, তারা রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে জামানতের অর্থ ফেরত পাবেন।

জানা গেছে, এবার পৌরসভা নির্বাচনে আ’লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পান আড়ানী পৌর আ’লীগের সভাপতি মোঃ শহীদুজ্জামান। দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহ ঘোষনা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন পৌর আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র মোঃ মুক্তার আলী ও পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি রিবন আহমেদ।

তবে প্রতীক বরাদ্দের ২দিন পর নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান রিবন আহমেদ। অপরদিকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন দলটির একক প্রার্থী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি তোজাম্মেল হক। অপরদিকে মনোনয়ন না পেয়ে অভিমানে নিজেকে আড়াল করে রাখেন পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম।

২০১১ সালে পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে বিএনপির দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন আ’লীগ দলের একক প্রার্থী মিজানুর রহমান । সেই নির্বাচনে বিএনপি থেকে অংশ নেন তোজাম্মেল হক ও নজরুল ইসলাম। নির্বাচনের কয়েকমাস পর মারা যান নির্বাচিত মেয়র মিজানুর রহমান।

তার মৃত্যুর পর উপ নির্বাচনে আ’লীগ দলীয় প্রার্থী বাবুল ইসলাম ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী তোজাম্মেল হককে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির দলীয় প্রার্থী নজরুল ইসলাম। ২০১৫ সালের বিগত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান আ’লীগ থেকে বাবুল ইসলাম ও বিএনপি থেকে তোজাম্মেল হক। বিদ্রোহ ঘোষনা করে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন নজরুল ইসলাম।

এদিকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন দুপুরের দিকে মৃত্যুবরন করেন আ’লীগ দলীয় প্রার্থী বাবুল ইসলাম। সেই দিনই আ’লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয় পৌর কাউন্সিলর মুক্তার আলীকে। নির্বাচনে বিএনপির দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীকে পরাজিত করে জয়লাভ করেন মুক্তার আলী।

সেবার নির্বাচনে মুক্তার আলী পেয়েছিলেন ৫ হাজার ১৯৮ ভোট আর বিএনপির দলীয় প্রার্থী তোজাম্মেল হক পেয়েছিলে ২ হাজার ৭৫১ ভোট এবং বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী,সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম পেয়েছিলেন ২ হাজার ৩৩২ ভোট। মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৪৬৬। এবারে ২০২১ সালের ১৬ জানুযারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে একক প্রার্র্থী দিয়েও পরাজিত হয় বিএনপির দলীয় প্রার্থী। আর আ’লীগ দলীয় প্রার্থীকে পরাজিত করে জয়লাভ করে দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী।

নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং আর নিজেদের অভ্যন্তরীণ দন্ধের কারনে মেয়র পদ হারায় বিএনপি। আ’লীগ দলের বিদ্রোহী সতন্ত্র প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হয়। দুই দলের নেতা কর্মীরা ভোটের মাঠে কাউকে ছাড় না দিয়ে কঠোর অবস্থান নেয় এবারের নির্বাচনেও। এতে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে