পৌর নির্বাচন ঘিরে হঠাৎ সহিংসতা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২১; সময়: ২:০৪ অপরাহ্ণ |
পৌর নির্বাচন ঘিরে হঠাৎ সহিংসতা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : পৌর নির্বাচনকে ঘিরে দেশে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা হঠাৎ বাড়ছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা লক্ষণীয়। এতে অন্তত তিন জনের প্রাণহানিসহ দুই শতাধিক ব্যক্তি হতাহত হয়েছে।

এছাড়া প্রচার-প্রচারণায় বাধা, প্রতিপক্ষের নির্বাচনী ক্যাম্প অগ্নিকান্ড-ভাঙচুর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাটের ঘটনাও উলেস্নখযোগ্য। ফলে অনেক পৌর এলাকায় নির্বাচনী উৎসবের আমেজ যেন উবে গেছে। তার বদলে চরম উদ্বেগ-আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এ অবস্থায় প্রার্থীদের একনিষ্ঠ নেতাকর্মী ও ঘনিষ্ঠ স্বজনরা প্রচার-প্রচারণার মাঠে থাকলেও সাধারণ ভোটারদের বেশির ভাগই নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। নির্বাচনী সভা-সমাবেশে যোগ দেওয়া দূরে থাক, প্রার্থীরা ভোট চাইতে দুয়ারে গেলেও অনেকে সরে থাকছেন।

পক্ষপাতিত্বের অজুহাতে প্রতিপক্ষের ক্যাডাররা ভোটারদের ওপর চড়াও হয় কি না এ ভয়ে নির্বাচনের দিন ভোট দিতে যাওয়া ঠিক হবে কি না তা নিয়েও অনেকে সংশয়ে রয়েছেন। র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এ উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টির কথা নিঃসংকোচে স্বীকার করেন।

তারা জানান, ভোটের মাঠের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে তারা প্রাণান্তকর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে তাদের উপেক্ষা করেই একপক্ষ অপরপক্ষের সঙ্গে সংঘাত-সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বেশি ঘটছে। এর বাইরে বেশকিছু এলাকায় বিরোধী দলের প্রার্থী ও তাদের নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হওয়ার ঘটনাও কম নয়। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে পৌর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বেশিরভাগ নির্বাচনী এলাকায় ভোটের প্রচার-প্রচারণার উৎসব সহিংসতায় রূপ নিয়েছে।

তাদের ভাষ্য, করোনার কারণে এমনিতে ভোটারদের ভোটকেন্দ্র বিমুখ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ওপর নির্বাচনকেন্দ্রিক এ ধরনের সংঘাত-সহিংসতা অব্যাহত থাকলে ভোটারদের উপস্থিতি উদ্বেগজনক হারে কমে যাবে। এতে ভোট ডাকাতি ও জাল ভোটের সংখ্যা ভয়াবহভাবে বাড়বে।

ফলে ভোটারদের প্রকৃত ভোটে সৎ ও যোগ্য জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ পুরোপুরি হারিয়ে যেতে পারে। তাদের এ আশঙ্কা যে অমূলক নয় তা বিভিন্ন পৌর এলাকার সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধিরা নিশ্চিত করেছেন।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বুধবার রাতে তালতলায় আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দফায়-দফায় সংঘর্ষ, গুলি, বোমা বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় সেখানকার ভোটাররা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। ঘটনার পর থেকে পুরো এলাকায় র‌্যাব ও পুলিশের অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হলেও সাধারণ মানুষের উদ্বেগ কাটছে না।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাতেই যেভাবে একের পর এক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে, তাতে ভোটের দিন কী হবে তা নিয়ে ভোটাররা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন। নির্বাচনী সংঘাত-সহিংসতার এ ভয়াবহ পরিস্থিতি দ্রম্নত নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে ভোটার উপস্থিতি ২৫ শতাংশের বেশি হবে না বলে মনে করেন তারা।

দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় গত বুধবার রাতে শেরপুর পৌরসভা এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আনিছুর রহমানের সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল করার সময়ে শহরের কিছু দোকানপাট ও যানবাহন ভাঙচুর করে। এতে শহরে উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যেই নগরীর দোকানপাট-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ও র‌্যাব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও গোটা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ-আতঙ্ক রয়েই গেছে।

ঝিনাইদহের শৈলকুপা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, বুধবার রাতে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী শওকত হোসেনের ভাই আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত হোসেন বল্টু দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হওয়ার ৫ ঘণ্টার মাথায় একই ওয়ার্ডের স্বতন্ত্র কমিশনারপ্রার্থী আলমগীর হোসেন বাবুর মরদেহ নদীতে আধাপোতা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এ দুটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

অনেকেই মনে করেন, একটি খুনের জের ধরে অন্য খুনের ঘটনাটি ঘটেছে। এ অবস্থায় শহরসহ পৌর এলাকার সবখানে পুলিশ মোতায়েন এবং মোড়ে মোড়ে তলস্নাশি অভিযান চালানো হলেও সাধারণ মানুষ নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। ‘ভোট দিতে গিয়ে প্রাণ হারাতে চাই না’ ভোটারদের অনেকে এখন প্রকাশ্যেই একথা বলছেন।

এদিকে নরসিংদীর মনোহরদী এলাকার স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এতটাই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে, কোথাও কোথাও পুলিশকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হচ্ছে। বুধবার রাতে মনোহরদী হিন্দুপাড়ায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী আমিনুর রশিদ সুজনের উঠান বৈঠকে হামলা চালিয়ে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সশস্ত্র হামলাকারীরা উঠান বৈঠকে অংশ নেওয়া অন্তত ১২ জনকে গুরুতর জখম করে।

স্থানীয়দের ভাষ্য, এর আগেও নির্বাচনকেন্দ্রিক ছোট-বড় বেশ কয়েকটি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তবে বুধবার রাতের এ ঘটনার পর স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে নতুন উদ্বেগ ছড়িয়ে দিয়েছে। ঘটনার পর থেকে মনোহরদী পৌর শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানান স্থানীয়রা।

  • 23
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে