১১ নগর কমিটি চাঙ্গা করার উদ্যোগ

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২০; সময়: ১০:২২ অপরাহ্ণ |

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : দলের মহানগর কমিটিগুলো সাজানোর উদ্যোগ নিচ্ছে বিএনপি। ১১টি মহানগরের বেশ কয়েকটি কমিটি ভেঙে নতুন করে গঠন করা হবে। একাধিক কমিটিতে নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। যেসব মহানগর কমিটির শীর্ষ পদে যুগ যুগ ধরে একই নেতা রয়েছেন, সেসব কমিটিতে পরিবর্তন আসছে। এই তালিকায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ পদেও পরিবর্তন আসতে পারে। সংগঠনকে সময়োপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বিএনপি।

দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক নেতা বলেন, দেশের ১১টি মহানগর কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। কাউন্সিলের মাধ্যমে এসব কমিটি করা হবে। এর আগে প্রতিটি মহানগরে আহ্বায়ক কমিটি করা হবে। এ কমিটি বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা কমিটি সম্পন্ন করবে, এরপর মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, মহানগর কমিটি যেগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে, সেগুলো অবশ্যই পুনর্গঠন করা হবে। আর পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া।

রাজশাহী : ২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলনকে সাধারণ সম্পাদক করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট রাজশাহী মহানগরের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। বুলবুল ও মিলনের দ্বন্দ্বে এই কমিটিও আংশিক অবস্থায় মেয়াদ শেষ করেছে।

রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, সব মহানগর কমিটির পুনর্গঠন বিষয়ে একত্রে সিদ্ধান্ত হবে। এটি স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হবে। পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

ঢাকা : ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই আংশিক অবস্থায় দুই কমিটির মেয়াদ চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। তবে থানা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে উভয় কমিটিই সফল ছিল।

বিশেষ করে উত্তরের প্রায় সব থানা ও ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটিও ঘোষণা করার প্রক্রিয়া শেষ করেছিল; কিন্তু উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উলস্নাহ হাসান কয়েক মাস আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে সেই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে ২৪টি থানার সবকটির আংশিক কমিটি দিয়েছে দক্ষিণ বিএনপি। এ অবস্থায় ঢাকা মহানগর কমিটি পুনর্গঠন করা হলেও নেতৃত্বে তেমন পরিবর্তন আসবে না।

চট্টগ্রাম : ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট ড. শাহাদাত হোসেনকে সভাপতি ও আবুল হাসেম বকরকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম মহানগরের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০১৭ সালের ১০ জুলাই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়। সম্প্রতি রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভার্চুয়াল উপায়ে একজন করে নেতার মতামত নেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চট্টগ্রামের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। নেতারা সবাই বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির পক্ষে মতামত দিয়েছেন। দ্রম্নতই কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করা হবে।

খুলনা : সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর খুলনার সার্কিট হাউস ময়দানে মহানগর বিএনপির সম্মেলন হয়েছিল। ওই সম্মেলনে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে সভাপতি এবং মনিরুজ্জামান মনিকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ওই সময় মঞ্জু ছিলেন সদর আসনের এমপি। পরে মনিরুজ্জামান মনি খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর এ পর্যন্ত দুই দফা সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। প্রথম দফা সম্মেলনের তারিখ ছিল ২০১৬ সালের ৫ মার্চ। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কারণে সম্মেলন বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৩ ডিসেম্বর সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। পরে দুই গ্রম্নপ মুখোমুখি অবস্থান নিলে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে সম্মেলন স্থগিত হয়ে যায়।

জানা গেছে, নজরুল ইসলাম মঞ্জু ১৯৯৩ সাল থেকে খুলনা বিএনপির নেতৃত্বে রয়েছেন। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক পদ ছেড়ে হলেও মহানগর কমিটিতে আবারও থাকতে চান মঞ্জু।

বরিশাল : ২০০৯ সালে মজিবর রহমান সরোয়ারকে সভাপতি ও কামরুল আহসান শাহিনকে সাধারণ সম্পাদক করে বরিশাল মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় ২০১৩ সালের অক্টোবরে ১৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে। ২০১৪ সালে মারা যান সাধারণ সম্পাদক শাহিন। এরপর দলের এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন সিকদারকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটি ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক দিয়েই চলছে।

সিলেট : ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রম্নয়ারি সিলেট মহানগরের সভাপতি নাসিম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক পদে বদরুজ্জামান সেলিম নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়।

রংপুর : ২০১৭ সালের ২৬ মে মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেনকে সভাপতি ও শহীদুল ইসলাম মিজুকে সাধারণ সম্পাদক করে ঘোষণা করা হয়েছে রংপুর মহানগর বিএনপির কমিটি। সভাপতি মোজাফফর এরই মধ্যে মারা গেছেন।

২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রম্নয়ারি নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালামকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে এটিএম কামালকে। ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর অধ্যাপক এ কে এম শফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক এবং আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ ও অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলীসহ ১০ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৬০ সদস্যবিশিষ্ট ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির কমিটি অনুমোদন করা হয়।

এসব কোনো কমিটিরই মেয়াদ নেই। এরই মধ্যে এই কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। সিলেটসহ আরও যেসব কমিটি ভাঙা হবে তা হলো- রংপুর, ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জ। কুমিলস্না মহানগরে বিএনপির সাংগঠনিক কোনো কমিটি নেই। সেখানে প্রথমবারের মতো নতুন কমিটি গঠন করা হবে।

  • 26
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে