রাজশাহীতে কমিটি নিয়ে সব দলেই সংকট

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২০; সময়: ১:১৯ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে কমিটি নিয়ে সব দলেই সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী জেলা ও নগর আওয়ামী লীগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের বিরোধ দেখা দিয়েছে নেতাদের মধ্যে। কমিটি নিয়ে সংকট রয়েছে উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়েও। ফলে ঝুলে আছে অধিকাংশ ইউনিট কমিটি। দীর্ঘদিন যাবৎ পুরাতন কমিটি দিয়ে চলছে তৃণমূলের অনেক ইউনিট।

সম্মেলনের জন্য জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হলেও তিন মাস মেয়াদের কমিটি বছর পার করে দিয়েছে। কিছু ইউনিটে নতুন আহবায়ক কমিটি করা হলেও ঝুলে গেছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়অ। চার বছর ধরে চলছে ২১ সদস্যের মহানগর কমিটি। প্রায় যুগ পার হতে চলেছে ওয়ার্ড ও থানা কমিটিগুলো। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে চরম ক্ষোভ ও হতাশা।

অপরদিকে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে মহানগর জাতীয় পার্টির কার্যক্রম কিছুটা থাকলেও নিষ্কৃয় জেলা কমিটি। তবে নেতৃত্বের বিরোধে একটি অংশ দল ছাড়াও অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে নগর জাপা। কমিটি নেয় নগরের থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে। আর এক বছর আগে শেষ হয়েছে জেলা কমিটির মেয়াদ। উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়েও নেই কমিটি।

আওয়ামী লীগ

গত বছরের ৬ ডিসেম্বর রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মেরাজ উদ্দিন মোলস্নাহকে সভাপতি ও আবদুল ওয়াদুদ দারাকে সাধারণ সম্পাদক এবং লায়েব উদ্দিন লাবলু ও আয়েন উদ্দিন এমপিকে যুগ্ম সম্পাদক করে চার সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন। পরে এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দিতে বলা হয়।

প্রায় চার মাস আগে ৭৪ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়। কমিটিতে আগের কমিটির নেতৃস্থানীয় প্রায় ৩৫ জন নেতার নাম বাদ পড়ার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। পদবঞ্চিতরা দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বরাবর দুটি অভিযোগ দিয়ে প্রস্তাবিত কমিটি অনুমোদন না করার দাবি জানায়। জেলা কমিটির ওই জটিলতায় ঝুলে গেছে ইউনিট কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া। শুধুমাত্র বাগমারা উপজেলায় ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও পৌরসভা কমিটি হলেও বাকি ৮ উপজেলায় চলছে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে।

জেলা কমিটির সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোলস্নাহ বলেন, এমপিদের সুপারিশে অনেককে পদ দিতে হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদের প্রস্তাব করা হয়েছে যাদের, আমি তাদের অনেককে চিনিও না। কমিটি কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে; কেন্দ্র যেটা ভালো বিবেচনা করবে সেটাই হবে। আমার বলার কিছু নেই।

এদিকে, গত ১ মার্চ সম্মেলন হয় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের। পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার জন্য প্রথমে একমাস সময় দেওয়া হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে তা হয়নি। তবে সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের জন্য ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রে তালিকা পাঠাতে বলা হায় হাই কমান্ড থেকে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও দিতে পারেনি কমিটির তালিকা। যদিও কমিটি জমা দেওয়ার সময় আরও সাতদিন বাড়িয়েছে দলের হাই কমান্ড।

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। কেন্দ্রের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই তালিকা জমা দিব। চেষ্টা করেছি দলের ত্যাগী নেতাদের পদে রাখার।

বিএনপি

নিষ্কৃয়তার অভিযোগে গত বছরের ৫ জুলাই জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে দিয়ে আবু সাইদ চাঁদকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। সম্মেলন আয়োজন করতে তিন মাসের জন্য করা কমিটি বছর পার করে দিয়েছে। ফলে হতাশ দলের নেতারা। এছাড়াও ইউনিট কমিটি ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে ঘিরে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে বিএনপির তৃণমূলের রাজনীতিতেও। ২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর কেন্দ্র থেকে ২১ সদস্যের আংশিক মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়। তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিতে বলা হলেও চার বছরেও তা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে চরম ক্ষোভ ও হতাশা।

জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার জানান, করোনার কারণে ইউনিট কমিটি গঠনের কার্যক্রম শেষ করা হয়নি। তবে শিগগিরই সম্মেলন করে বিএনপিকে আরও গতিশীল করতে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করা হবে।

মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, দলের নেতাদের মধ্যে মতভেদ থাকার কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। তবে নগরের আটটি থানার ও ৪০টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কার্যক্রম শিগগিরই শুরু হবে। ইউনিট কমিটি শেষ করে নগরের সম্মেলন করা হবে বলে জানান তিনি।

জাতীয় পার্টি

গত মার্চে রাজশাহী মহানগর জাতীয় পার্টির (জাপা) কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ বাধে। এক গ্রম্নপের দেওয়া তালা ভেঙে আরেক গ্রম্নপের কার্যালয় দখল-পাল্টা দখলের ঘটনা ঘটে। এ সময় কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতি নানা অভিযোগ তুলে নগর জাপার প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতা গণপদত্যাগ করেন। এরপর কেন্দ্র থেকে ৫১ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপন এবং সদস্যসচিব ড. আবু ইউসুব সেলিম। এই কমিটি বর্তমানে কার্যক্রম চালাচ্ছে। আর জেলা কমিটির সভাপতি রয়েছেন সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আবুল হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন রেন্টু।

নগর কমিটির সদস্য সচিব ড. আবু ইউসুব সেলিম বলেন, নগরে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে। করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংগঠনের কর্মকান্ড চালানো হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, নগরীতে সাতটি থানা ও ৩০টি ওয়ার্ড ইউনিট রয়েছে। এসব ওয়ার্ড ইউনিট কমিটি গঠনের কার্যক্রম চালাচ্ছে। শিগগিরই সব ইউনিট কমিটি করার পর মহানগরের সম্মেলন করা হবে।

জেলা সভাপতি অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, করোনার কারণে তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ ছিল। ইতোমধ্যেই তাদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উপজেলাগুলোতে সাংগঠনিক সফর করে আগামীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে