চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আ.লীগে সভাপতির পরিবারেই ৮ পদ (তালিকাসহ)

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০; সময়: ৬:৫৭ অপরাহ্ণ |
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আ.লীগে সভাপতির পরিবারেই ৮ পদ (তালিকাসহ)

নিজস্ব প্রতিবেদক : চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মঈনুদ্দীন মণ্ডল প্রস্তাবিত পুর্ণাঙ্গ জেলা কমিটিতে নিজের স্ত্রী, ভাই, দুই ভাতিজা, শ্যালিকা, ভায়রা ভাই, নাতি ছাড়াও নিজের আত্মীয় স্বজনসহ মোট ৮ জনকে পদ দিয়েছেন। সভাপতির আপন ভাই মোর্তুজা আলীকে সহ-সভাপতি করেছেন আর মোর্তুজা আলীর ছেলে ছাত্রলীগ নেতা আরিফুর রেজা ইমনকে দিয়েছেন দপ্তর সম্পাদকের পদ।

শনিবার ঢাকায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ৭৫ সদস্যের প্রস্তাবিত এই কমিটি জমা দেওয়ার সময় ফাঁস হয়ে যায়। এরপর সমালোচনার ঝড় বইছে নেতাকর্মীদের মাঝে। গুরুতর অভিযোগ হলো, অতীত আন্দোলন সংগ্রামে জেল-জুলুমের শিকার ত্যাগী নেতাকর্মীরা যেমন বাদ পড়েছেন, তেমনি নিষ্ক্রিয় ও অনুপ্রবেশকারীরা বড় সংখ্যায় কমিটিতে ঢুকেছেন।

গত ৩ মার্চ মঈনুদ্দীন মন্ডলকে সভাপতি ও আব্দুল ওয়াদুদকে সাধারণ সম্পাদক করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুরে এই কমিটি কেন্দ্রে জমা দেওয়ার কথা থাকলে পদ ভাগাভাগি নিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দিনভর দর কষাকষি হয়। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে সমঝোতার পর সন্ধ্যার আগে কেন্দ্রে কমিটি জমা হয়েছে।

যদিও শনিবার সন্ধ্যায় সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি সভাপতির করা কমিটির সঙ্গে একমত পোষণ করেননি এবং তাতে স্বাক্ষরও দেননি। নিজে পৃথক একটি কমিটি কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দিয়েছেন। দলীয় সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এই বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

এদিকে, কেন্দ্রে জমা দেয়া প্রস্তাবিত পুর্ণাঙ্গ জেলা কমিটির একটি পাওয়া গেছে। প্রস্তাবিত পুর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জেলা সভাপতি মঈনুদ্দীন নিজের স্ত্রী ময়না পারভিন পপিকে করেছেন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা। আপন ছোট ভাই মোর্তুজা আলীকে করেছেন কমিটির সহ-সভাপতি। মোর্তুজা আলীর ছেলে তথা সভাপতি মণ্ডলের আপন ভাতিজা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের চলতি কমিটির সভাপতি আরিফুর রেজা ইমনকে করা হয়েছে কমিটির দপ্তর সম্পাদক। ইমন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হলেও ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে বছর দুয়েক আগে তাজরিন নামের একটি মেয়েকে বেশ ঘটা করে বিয়ে করেন।

দলীয় একাধিক সূত্রমতে, ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি পদে থেকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের কোন পদে আসতে পারেন না। মণ্ডলের আরেক ভাতিজা পারভেজ হাসান বাবুকে দেওয়া হয়েছে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ। বাবু দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কখনো ছিলেন না।

এদিকে, সভাপতি মঈনুদ্দীন মণ্ডল তার নিজের শ্যালিকা রানী বেগমকে সদস্য করেছেন। সভাপতি মণ্ডলের আপন ভায়রা ভাই মেসবাহুল হক জুয়েল পেয়েছেন ক্রীড়া সম্পাদকের পদ। কমিটির সদস্য জেলা যুবলীগের বর্তমান সভাপতি সামিউল হক লিটন সভাপতির নাতি।

আরেক সংগঠনিক সম্পাদক মেসবাহুল শাকের জ্যোতি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। ৬ নং সহ-সভাপতি এরফান আলী একজন ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোনদিন ছিলেন না। ১১ নং সহ-সভাপতি লুৎফর রহমান মতিনও আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি।

দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ মতে, বছর দুয়েক আগে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে আসা শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলামকে করা হয়েছে সহ-সভাপতি। শ্রম সম্পাদক হাবিবুর রহমান মজনু স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে পরিচিত। সদস্য তাবারিয়া চৌধুরী ছাত্রমৈত্রী, বিএনপি হয়ে আওয়ামী লীগের এসেছেন। কমিটিতে এমন অনেকেই বিভিন্ন পদে এসেছেন যারা অতীতে দলের রাজনীতিতে ছিলেন না বলে অভিযোগ করেছেন নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে, স্বৈরাচার, জামায়াত-বিএনপি জোট বিরোধী আন্দোলনে জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন এমন ত্যাগী নেতারা বাদ পড়েছেন কমিটি থেকে। অভিযোগ মতে, আগের কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক এমরান ফারুক মাসুম স্বৈরাচার ও জামাত বিএনপি জোট বিরোধী আন্দোলনে একাধিকবার জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন।

ছাত্রলীগের সাবেক জেলা সভাপতি শাহনেওয়াজ অপু ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হুদা অলক বিএনপি জামাত জোট বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে থেকে আন্দোলনকে বেগবান করেছেন। ব্যবসায়ী মোখলেসুর রহমান দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে প্রতিনিয়ত অংশগ্রহণ করেন এবং অর্থসহায়তা দিয়ে দলের কর্মসূচিকে সচল রেখেছেন। তাদের কাউকে প্রস্তাবিত কমিটিতে জায়গা নেওয়া হয়নি। কমিটির প্রসঙ্গে জানতে মঈনুদ্দীন মণ্ডল সাংবাদিকদের ফোন ধরেননি।

  • 240
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে