রাজশাহী জেলা আ.লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে জটিলতা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২০; সময়: ৮:২৯ অপরাহ্ণ |

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে জটিলতা কাটছে না। ৭৪ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে জমা দেয়া হলেও অনুমোদন মিলছে না। প্রস্তাবিত কমিটিতে আওয়ামী লীগের প্রবীণ ও ত্যাগী নেতাসহ ৩৫ জন বাদ পড়েছেন এবং জামায়াত ও বিএনপির নেতাদের নাম রাখা হয়েছে।

এ কারণে কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠনেরও দাবি করেছেন অনেকে। তারা বলছেন, এ কমিটি অনুমোদিত হলে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। কমিটির সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা কমিটি গঠন করে প্রায় চার মাস আগে কেন্দ্রে জমা দেন। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না কেন্দ্রীয় কমিটি।

দলীয় সূত্র জানায়, গত বছরের ৬ ডিসেম্বর রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহকে সভাপতি ও আবদুল ওয়াদুদ দারাকে সাধারণ সম্পাদক এবং লায়েব উদ্দিন লাবলু ও আয়েন উদ্দিন এমপিকে যুগ্ম সম্পাদক করে চার সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন।

পরে এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দিতে বলা হয়। প্রায় চার মাস আগে ৭৪ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়। কমিটিতে আগের কমিটির নেতৃস্থানীয় প্রায় ৩৫ জন নেতার নাম বাদ পড়ার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। পদবঞ্চিতরা দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বরাবর দুটি অভিযোগ দিয়ে প্রস্তাবিত কমিটি অনুমোদন না করার দাবি জানান। দলের স্বার্থে প্রস্তাবিত কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনেরও দাবি করেন তারা।

বানেশ্বর সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. একরামুল হককে কমিটির সহসভাপতি করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি চাকরিজীবীকে সরাসরি দলের কোনো পদ দেয়ার বিধান নেই। অভিযোগ, রেজওয়ানুল হক পিনু মোল্লাহ কখনই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন না। কিন্তু তাকে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক করা হয়েছে। পিনু সভাপতি মেরাজ মোল্লাহর নিকটাত্মীয়। দুই সহসভাপতি সোহরাব হোসেন ও সাবিয়ার রহমান মাস্টার কখনও আওয়ামী লীগ করেননি। আরেক সহসভাপতি রিয়াজ উদ্দিন রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিনের নিকটাত্মীয়।

কমিটির ধর্ম সম্পাদক মো. এন্তাজ আলী পুঠিয়ায় ছাত্রশিবিরের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে দীর্ঘদিন সক্রিয় ছিলেন। তাকে পুঠিয়া উপজেলা ওলামা লীগের সভাপতি হিসেবে উল্লেখ করা হলেও জেলা কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক মাসুদ বলেন, এন্তাজ আলী নামে উপজেলা ওলামা লীগের কোনো সভাপতি কখনই ছিলেন না।

দফতর সম্পাদক প্রদ্যুৎ কুমার সরকার বিএনপি ও জামায়াত জোট আমলে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক আলী খাজা জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগে যোগও দেননি। প্যারালাইজড হয়ে তিনি শয্যাশায়ী। পুঠিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেককে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ায়। তাকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। কমিটির শ্রম সম্পাদক হিসেবে আসলাম আলীর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। অভিযোগ- আসলাম ছাত্রশিবির থেকে ছাত্রদল ও পরে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।

জানা গেছে, সাবেক কমিটির সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোকবুল হোসেন, সাবেকমন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা জিনাতুন নেসা তালুকদার, জাতীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান, নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু, সাবেক এমপি রায়হানুল হক, জেলা কমিটির সাবেক সহসভাপতি বদরুজ্জামান রবু মিয়া, জাতীয় কমিটির উপদেষ্টা আবদুস সামাদ, জেলার সাবেক সহসভাপতি আবদুল মজিদ সরদার, জেলা কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সামাদ, আলফোর রহমান ও আহসানুল হক মাসুদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক, জেলার সাবেক দফতর সম্পাদক ফারুক হোসেন ডাবলু, সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শামসুজ্জামান, উপ-দফতর সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, সাবেক প্রচার সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বাবুসহ প্রায় ৩৫ জন ত্যাগী নেতাকে এবারের কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।

জেলা কমিটির সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহ বলেন, এমপিদের সুপারিশে অনেককে পদ দিতে হয়েছে এটা আমি আগেও বলেছি। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদের প্রস্তাব করা হয়েছে যাদের, আমি তাদের অনেককে চিনিও না। কমিটি কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে; কেন্দ্র যেটা ভালো বিবেচনা করবে সেটাই হবে। আমার বলার কিছু নেই। সূত্র- যুগান্তর

  • 137
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে