খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেয়ারও অনুমতি চাইবে পরিবার
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্বাহী আদেশে পাওয়া মুক্তির মেয়াদ আছে আর দুই মাসেরও কম। করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে তিনি মুক্তি পান এবং নিজ বাসাতেই অবস্থান করছেন। সেখানেই চিকিৎসা চলছে। তবে পরিবার, তাঁর চিকিৎসক এবং দল বিএনপি মনে করছে, খালেদার বিদেশে চিকিৎসা বেশি প্রয়োজন।
সরকারের দুটি শর্ত ছিল খালেদা জিয়ার মুক্তিতে, তিনি নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। এই চার মাসে সরকারের দুটি শর্তই খালেদা জিয়া পালন করেছেন। বাসা থেকে বের হননি এবং বিদেশেও যাননি। এ ছাড়া পরিবার, দলের নেতা ও নির্দিষ্ট কয়েকজন বাদে অন্য কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি এমনকি গণমাধ্যমেও কথা বলেননি। মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনে এবার বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দিতেও সরকারের অনুমতি চাওয়া হবে বলে বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছেন।
সরকারের মনোভাব বিরূপ হোক, এমন কিছু করেননি বলেই সরকার খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোতে এবং বিদেশে যাওয়ার অনুমতিতে ‘পজিটিভ’ থাকবে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। তবে দল থেকে আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে ও করতে যাবেন না তাঁরা। দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি যে প্রক্রিয়ায় হয়েছে, সেভাবেই মেয়াদ বাড়ানো ও বিদেশে যাওয়ার বিষয়টিও সম্পন্ন হবে।
বিএনপির এক সূত্র জানায়, দল থেকে খালেদা চিকিৎসার ব্যাপারে এমন কোনো পদক্ষেপ বা কথাবার্তা বলবে না, যাতে হিতে বিপরীত হয়। তবে সমর্থন এবং যে দায়িত্ব আছে, তা দল পালন করবে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি পুরোপুরিই তাঁর পরিবার দেখছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সর্বশেষ চোখের চিকিৎসা করিয়েছেন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। এর আগে হাঁটুর চিকিৎসা করিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। বিএনপির একজন চিকিৎসক বলেন, খালেদা জিয়া হাঁটাচলা করতে পারছেন না। শিগগিরই তাঁর ফলোআপ চিকিৎসা দরকার।
গত ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া সরকারের নির্বাহী আদেশে ৬ মাসের জন্য মুক্তি পান। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি কারাবন্দী ছিলেন। তাঁর মুক্তির জন্য তাঁর আইনজীবীরা যতবারই আবেদন করেছেন, তা খারিজ হয়েছে। আর দল বিএনপি দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তির জন্যও কিছু করতে পারেনি। কারাজীবনের শেষ বছরে দলের নেতারাও তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। এ সময় পরিবারের সদস্যরাই দেখা করেছেন। ২৪ মার্চ আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়ার পরিবার তাঁর মুক্তির জন্য আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই তাঁকে ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মন্ত্রী আরও জানান, বেগম খালেদা জিয়ার ভাইবোনসহ পরিবারের সদস্যরা তাঁর মুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও দেখা করেন।
খালেদা জিয়ার মুক্তি হয় সরকারের নির্বাহী আদেশে। দুই বছরেও বেশি সময় কারাগারে থাকলেও বিএনপি খালেদার জামিন বা মুক্তির ব্যাপারে কিছু করতে পারেনি। এ নিয়ে দলের মধ্যেই সমালোচনা আছে। মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো এবং উন্নতি চিকিৎসার বিষয়টি এখন পরিবার এবং খালেদা জিয়ার নিজের ওপর নির্ভর করবে। বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকারের দিক থেকে খালেদা জিয়ার বিষয়ে যে ‘পজিটিভ’ মনোভাব রয়েছে, তা কোনোভাবে নষ্ট হোক, সেটা কেউ চাচ্ছেন না।
বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, তাঁকে (খালেদা জিয়া) কোথায় উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হবে, তা নির্ভর করছে তাঁর পরিবারের ওপর এবং তিনি নিজে কী চান। এখন অনেক দেশের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝেই হয়তো পরিবার পদক্ষেপ নেবে। আর এ ক্ষেত্রে হয়তো সরকারের দিক থেকে সম্মতি পেতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার কথা বলে আসছেন। গত ১০ জুলাই তিনি বলেছেন, বিদেশে না যাওয়ার জন্য খালেদা জিয়াকে শর্ত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁর বিদেশে চিকিৎসাই এখন বেশি প্রয়োজন। ঈদের দিন ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পাবেন, সেই সুযোগের অপেক্ষায় আছেন তাঁরা। ফখরুল বলেন, তাঁরা আশা করছেন সেই সুযোগ এবার পাবেন।