কাকে কতটুকু বিশ্বাস করবেন?

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২০; সময়: ৩:০১ অপরাহ্ণ |
কাকে কতটুকু বিশ্বাস করবেন?

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আদিবা (ছদ্মনাম)। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আরেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে সম্পর্কের একপর্যায়ে বিশ্বাস করে নিজের ফেসবুকের পাসওয়ার্ডও ‍তুলে দেন তার হাতে। আবার ব্যক্তিগত কিছু ছবিও শেয়ার করেন প্রেমিকের আবদার রক্ষা করতে গিয়ে। সম্পর্কের টানাপড়েনে সেই প্রেমিক আদিবার অ‌্যাকাউন্ট থেকেই তার সব ব্যক্তিগত ছবি ফেসবুক বন্ধুদের ইনবক্সে ছড়িয়ে দিতে থাকে। আদিবা বুঝতে পারেন, ততক্ষণে অনেকের কাছে তার ছবি পৌঁছে গেছে। আর সেই প্রেমিক পাসওয়ার্ড বদলে দেওয়ায় দ্রুত ব্যবস্থাও নিতে পারছেন না। শেষে আরেক বন্ধুর অ‌্যাকাউন্ট থেকে দুঃখ প্রকাশ করে পোস্ট দেন আদিবা।

সম্প্রতি সম্পর্ক শেষ হওয়ার তিক্ততাও ডিজিটাল দুনিয়ায় হয়রানির মুখে ফেলছে নারীদের। অনলাইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজের পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত রাখুন। কাউকে বিশ্বাস করে ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার করে অপরাধী মনষ্কদের সুযোগ করে দেবেন না। আর মনোরোগ বিশ্লেষকরা বলছেন, সব মানুষকে অবিশ্বাস করতে হবে এমন নয়। কিন্তু ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা যাকে পাসওয়ার্ড দিচ্ছেন সে বিশ্বাসভঙ্গ না করলেও তৃতীয়পক্ষ এটার সুযোগ নিতে পারে। যেকোনও দুর্বল মুহূর্তে প্রতিশোধপরায়ণ মন অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে।

৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) নাজমুল ইসলাম তার ফেসবুকে জানান, চলতি মাসেই ইনবক্সে ছবি দিয়ে বিপদে পড়ার অভিযোগ এসেছে ৭টি। তিনি তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, সাবেক প্রেমিক কর্তৃক সাবেক প্রেমিকার গোপন ছবি ও ভিডিও অনলাইনে প্রকাশের অভিযোগে সাইবার অপরাধ তদন্ত বিভাগ, সিটিটিসি, ডিএমপি একজনকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছে।

ভিকটিমের বয়স ১৮ বছর হয়নি। তাই পারিবারিকভাবে বিয়ে দিতে অস্বীকার করা হয়। আর এ কারণে ক্ষোভ প্রকাশের হাতিয়ার হিসেবে ফেক আইডির মাধ্যমে ভিকটিমের ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করে ওই অভিযুক্ত। প্রযুক্তির সহায়তায় ফেক আইডির প্রকৃত মালিককে খুঁজে বের করে তাকে সাইবার ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এডিসি নাজমুল ইসলাম বলেন, ফেক আইডি বলে কিছু নেই, ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট আপনাকে খুঁজে বের করবেই। তারপরও আমরা বরাবরই ইন্টারনেট জগতে বিচরণকারী প্রত্যেককে সচেতন হওয়ার কথা বলি। ব্যক্তিগত ছবি কাউকেই দেবেন না।
চলতি বছর ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত সাইবার পুলিশ সেন্টারে সিআইডির ফেসবুক পেজে রেকর্ডকৃত অভিযোগের সংখ্যা ৩৩৬টি। এর মধ্যে দ্রুততার সঙ্গে সাড়া দেওয়া হয়েছে ২৪১টির ক্ষেত্রে। নজরদারির পর্যায়ে আছে ৮৮টি। এখন পর্যন্ত সমাধান হয়েছে ৯টি অভিযোগের।

বন্ধুর বন্ধু হিসেবে চেনাশোনা একজনের সঙ্গে অনলাইনে আলাপ শুরু করে স্কুলপড়ুয়া এক শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে ছেলেটি আলাদা আইডি খুলে সেই ছবিগুলো দিয়ে মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করে। মেয়েটি বারবার ছেলেটির সঙ্গে সাক্ষাতে বাধ্য হতে থাকে। একপর্যায়ে বিষয়টি এক আত্মীয়কে জানালে তিনি সরাসরি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় মেয়েটিকে জটিলতা থেকে বের করতে পারেন। কিন্তু পরে ট্রমা থেকে বের হয়ে আসতে না পেরে দেশত্যাগ করে ভিকটিম।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের মনোরোগ বিশ্লেষক অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম মনে করেন, কাকে কতটুকু বিশ্বাস করা যায় সে বিষয়ে ধারণা তৈরিতে অভিভাবককে ভূমিকা রাখতে হবে। পরিবারের বাইরে কাউকেই এমন বিশ্বাস করতে নেই, যা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তিনি বলেন, যেকোনও সম্পর্ক ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।

এরমধ্যে এমন সময় আসতে পারে, যখন একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠতে পারে। সেই সময় ক্ষতি করতে পারে এমনকিছু জিনিস তার হাতে তুলে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যেকোনও সম্পর্কেই একটা সুনির্দিষ্ট আকার আছে, সীমারেখা আছে। কতদূর যাবেন বা যাবেন না সেটা শিখতে পরিবারকেই সহায়তা করতে হবে।

এডিসি নাজমুল বলেন, ‘প্রতিটি আইডি ব্যবহারকারী লগইনের বিষয়ে সতর্ক হবেন এটা আমরা আশা করি। টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন দিয়ে রাখুন যাতে অন্য কেউ আপনার পাসওয়ার্ড জেনে গেলেও লগ-ইন করতে না পারে। আবার কেউ আইডিতে ঢোকার চেষ্টা করছে কিনা সেটাও তখন বুঝতে পারবেন। আর ইনবক্সে ব্যক্তিগত ছবি রাখবেন না। অপরাধ যাতে না হয় সেজন্য অ‌্যাকাউন্টধারীদের সচেতন থাকতে হবে।’

 

  • 2
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে