কৃষকের পাঁচালি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২১; সময়: ৩:১৬ অপরাহ্ণ |
খবর > মতামত
কৃষকের পাঁচালি

‘চায়ের স্টলের সব কথা ধরতে নেই।’ কথাটা কার, তা আমার জানা নেই। তবে গ্রামের ময়-মুরুব্বিরা তরুণদের এমন পরামর্শ দিয়ে থাকেন। হতে পারে মফঃস্বলের হাট-বাজারের টি-স্টলের অসার কথা-বার্তার গুরুত্বহীনতার বিষয়ে অভিজ্ঞতালব্ধ হয়ে এমন জ্ঞানবচন তাঁরা জীবনামলে নিয়ে থাকেন। কিন্তু চায়ের স্টলের একটি উড়ো ঝগড়ায় কান দিয়ে আজ খানিকটা বিচলিত হয়েছি। ঝগড়াটা মনের ভিতর শুধু ফিরে ফিরে আসছে। ঝগড়াটার বিষয় ছিল ধান-চালের বাজারদর নিয়ে। অনিবাহ্যভাবে কৃষকও এ বিতর্কের বিশেষ অনুসঙ্গ হয়ে পড়ে।

তর্ক-বিতর্কটা অসার বা মূল্যহীন বলবো না। কারণ বিষয়টা সমকালীন সংকট বটে। কিছুদিন হলো বাজারে চালের দাম খানিকটা চড়া। ধানের দাম বেশি। কারো কারো মতে তা অসহনীয়ভাবে বেড়ে গেছে। কৃষক এবার আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ-টাছ হয়ে হয়ে যাচ্ছে, এমন বিশ্বাস অনেকেরই।

বিশেষ করে শহুরে বাবুদের মনে এ বিশ্বাস রীতিমতো ঈর্ষারও জন্ম দিয়েছে। কারণ সারাদেশে না কি মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে ধান-চালের দামে। চাষা-ভূষারা খ্যাত-খামারে শুধু ধানচাষ করেই রাতারাতি বড়োলোক হয়ে যাবে তা তো সহ্য করা যাবে না। সত্যিই বিষয়টিতে ঈর্ষান্বিত হবার কারণ আছে বটে। বিতর্কটাও তাই প্রাসঙ্গিক ও সমকালীন।

কাজেই সমকালীন সমস্যা নিয়ে চায়ের স্টলে বিতর্কের ঝড় উঠবে তা তো স্বাভাবিক। কিন্তু সে বিতর্কের অ-সার কথা হলো জনগণ নিয়ে সরকারের মাথা ব্যাথা থাকলে চালের দাম এতোটা বাড়তে পারে না। ধানের দামও বেশি, না হলে চালের দাম অতো বাড়ে কীভাবে? কৃষকের পোয়াবারো, রাতারাতি চাষা-ভূষারা দেশের ধনিকশ্রেণির মানুষ হয়ে যাচ্ছে। ইত্যাদি।

ভাবখানা এমন যে কৃষক সারাদেশের মানুষকে আজ জিম্মি করে ঠকাচ্ছে। এটা সহজে মানা যাবে না। সয়াবিন তেল, সবান ইত্যাদি শিল্প পণ্য বা আমদানি পণ্যের দাম বাড়তেই পারে। বাড়ুক, ক্ষতি নেই। কিংবা অল্প-বিস্তর ক্ষতি হলেও তা অন্য উপায়ে ওই ক্ষতির খানিকটা পুশিয়ে নেওয়া যাবে। তাছাড়া ওদের দমন করার কাজ অতটা সহজ হয় না। কারণ ওদের কারবার অনেকটা বাণিজ্যিক, আন্তর্জাতিকও। আন্তর্জাতিক পরিভাষার বর্ম পরে ওরা যুক্তির যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। আন্তর্জাতিক বাজার, ডলারের মূল্য, শুল্ক, কর, জ্বালানি তেলের দাম ইত্যাদি বিশ্ব পরিভাষার বর্ম ওদের যুদ্ধ জয় নিশ্চিত করে দেয়। কিন্তু কৃষক তার নিজেদের অধিকারের কথাটাই ঠিকমতো বলতে পারে না। অতোশতো বুঝেও না। কাজেই তাদের ওপর জুলম করলেই সহজে সফলতা পাওয়া যাবে।

এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, রাজশাহীর কৃষি অধ্যুষিত এলাকায় আমার জন্ম। তাই ছোটবেলা থেকেই কৃষকের সুখ-দুঃখের ভাগিদার আমি, তাদের হাঁসি-কান্না আমার একেবারেই চিরচেনা। বাপ-দাদার শরীরে কাদামাটির গন্ধ লেগেছিল। সহজাত কারণে কৃষক এবং কৃষির প্রতি আমার টানও এক-আধটু বেশি। নিজেও ফসলের চাষ করেছি। কিন্তু অভিজ্ঞতা হলো লাভের মুখ দেখতে পাইনি। তবে যদি শুনি কৃষকরা উৎপাদিত ফসলের ভাল দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছে, তাহলে মনটা খুশিতে ভরে উঠে। কিন্তু কৃষি পন্য আমদানির নীতি নির্ধারক ও কর্তা ব্যক্তিরা বুঝতেই চেষ্টা করেন না যে কৃষকরা উৎপাদন করে ধান, চাল নয়।

ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। মনে যা আছে তা হয়তো লিখতে পারবো না। ডিজিটাল ফাঁদে কার লাগাম কার হাতে জানি না। তাছাড়া আমার লেখায় চাষারও মনে দুঃখ পেতে পারেন, মনঃক্ষুন্নও হতে পারেন। কারণ আমরা কৃষকের সন্তান হলেও শেকড়ের আমিত্বটাকে সহজেই ভুলেই যাই। আবার সেই কৃষি পেশার সরল মানুষদের সাথে তুলনা করে অন্যদের চাষা বলে গালি দিতেই দ্বিধাবোধ করি না।

সারাদেশ বা বিশ্বের কোন দেশেই মিনিকেট জাতের ধান না থাকলেও মিনিকেট চালের ভাত না হলে আমাদের আজ চলেই না। সত্যি কথা বলতে কী আজগবি জাতের এসব চালের ভাত খেতে যারা ভালবাসেন, তারাই তো ধান-চাল নিয়ে গবেষণা করেন। আর দেশের বাজারে চালের দাম কিছুটা বেড়ে গেলে কান্নাকাটিও শুরু করেন তারাই। যতদিন না উৎপাদিত ধানের দাম খরচের চেয়ে না কমে ততোদিন তারা শান্ত হননা।

এদেশে ধানের দাম বাড়লে অনেকের গাত্রদাহ হয়, আর কমলে কৃষক-চাষির কপালের দোষ বলে এড়িয়ে যান। এদেশের প্রায় সবকটি সংসদীয় আসনের পুরোটায় গ্রামীণ এ কৃষিজীবিদের ভাগ্যন্নোয়নের জন্য সৃষ্টি হয়েছে। আবার এ সাংসদ মহোদয়েরাই কষি ফসলের দাম নিয়ে সংসদে খুব একটা কথাও বলেন না। কৃষিপণ্যের দাম একটু বাড়লেই তা কমানোর জন্য কমিটি, উপ-কমিটি ও কো-কমিটি বানিয়ে বসেন। মাটি চষে যে কৃষক রক্ত পানি করেছেন, শরীরের ঘামে স্নান করেছেনÑসেই মানুষগুলোর মুখের হাসি সহ্য হয় না। কিন্তু আমার প্রয়াশটি হলো, ওদের হাসি কিছুটা হলেও দীর্ঘস্থায়ী চাওয়া।

বহুজাতিক কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো তাদের পণ্যে দাম বসালেও তাতে কিছু যায় আসে না। ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যের দাম নিজেরাই নির্ধারণ করেন, কিন্তু কাজটা করতে পারেন না শুধু কৃষকরা। যারা এক কাতারে দাঁড়াতে পারে না, যারা আন্দোলন-বিপ্লব করতে জানে না, যারা অশিক্ষিত, যারা অধিকার নিয়ে সচেতন নয়Ñ এমন এক গোষ্ঠির নামই তো কৃষক। ভদ্রলোকরা ওদের চাষা বলে ডাকে। কিন্তু বোধ-বুদ্ধি নেই বলেই কি তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পাবে না? শোষক গোষ্ঠীর নিপীড়নের শিকার হবে তারা!

আমরা এখন শিক্ষিত, স্বাধীন, সভ্য জাতি। কিন্তু আমরাই কি এখনো ন্যায্যতার হিসাব বুঝি? আমরা কি বিবেক দিয়ে বিচার করতে জানি? বিচার করি নিজের সার্থের পাল্লায়।

অথচ আমাদের দেশের অধিকাংশ উচ্চবিত্ত ও শিক্ষিত পরিবার, কৃষক পরিবার থেকেই আসা। তবু কেন আজ আমরা তাদের স্বপ্ন দেখাতে পারি না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য দিতে পারি না। কী তাদের অপরাধ? আমরা ভুলে যাই কৃষকের দুর্দশার কথা। সারের জন্য কৃষকের প্রাণ দিতে হয়। উৎপাদিত পণ্যের দাম না পেয়ে এখনো ঋণের চাপে তাদের গা-ঢাকা দিতে হয়। লোকসানের ধকল সহ্য করতে না পেরে অনেকে আত্মহননের পথও বেছে নিয়েছে। এতোসব দেখেও কৃষকের মুখের হাসি অনেকের সহ্য হয় না। কৃষি ফসলের দাম কমাতে উঠেপড়ে লাগেন তারা। তবে একটা কথা বলে রাখি, বর্তমান সরকার কৃষিতে অনেকটা ভূর্তুকি দিচ্ছেন। এরপরেও লোকসান কমছে না।

সবকিছুরই দাম বাড়ে, বাড়ে না শুধু কৃষিপণ্যের দাম! কৃষকের উৎপাদিত আলু, পিঁয়াজ, ধানসহ নানা কৃষি পণ্যের দাম একটু বাড়লেই সুশীল ও শিক্ষিতদের আন্দোলন, টক শো চলে; অথচ তখনও কৃষকের উৎপাদন খরচই ওঠে না। আবার অতিরিক্ত দাম বাড়াতে কৃষকের ভাগ্যে বাড়তি দামের ছিটা ফুটাও জোটে না।

আমরা বাইরের আমাদানি কোন খাদ্য খাব না, কিনবো না-প্রতিজ্ঞা করলে কেমন হয়। একজন পন্ডিত বললেন ২২ মণ ঘিও জুটবে না, রাধাও নাচবে না। আরো একজন বললেন, খাদ্যতো দুরের কথা আমরা ইস্টার জলসাইতো ভুলতে পারি না? ঘরের বউদের এ চ্যানেল না দেখতে বললে ভাত রান্না হবে না। হবেই বা না কেনÑ আমাদের ভাষা, আমাদের সাংস্কৃতির সাথে প্রায় সবই তো মিলে যায়। শুধু দেশপ্রেমটা ওদের মত নেই আমাদের এই আর কি। আরো যেটা নেই, সেটা হলো কুটিলতা ও শক্তিমত্তা। আর বেশিদূর না এগুনোই ভাল।

নদী মাতৃক আমাদের এই দেশে ১ লিটার সুপেয় ও নিরাপদ পানি পেতে ২৫-৩০ টাকা গুণতে হয়। সেটাও জনগণের ভাল-মন্দ নির্ণয় করার উপায় নেই। এক কেজি দেশি ভাল চালের দাম ৫৫ বা ৬০ টাকা। বাস, বেধে গেল হৈ-চৈ। কেন চালের দাম বাড়তিÑ দাম কমাতে ও কৃষকের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত করতে ভোক্তা, বিরোধীদল, পরিবেশবাদি, মানবতাবাদি, সমাজবাদি, ধান্দাবাদিরা সবাই তখন সরব, সোচ্চার। চাল আমদানি করে হলেও দাম কমাতে হবে।

করোনায় টালমাটালের প্রেক্ষাপটে পিঁয়াজ ও আলুর দাম অস্বাভিকভাবে বেড়েছিল। বর্তমানে পিঁয়াজ ও আলুর দাম অনেকটাই স্বাভাবিক। আলু, পিঁয়াজ কৃষক ঘরে সংরক্ষণ করতে পারেন না। বাধ্য হয়েই ফসল তোলার পরই বিক্রি করে দিতে হয়। এছাড়া ফসল ঘরে রাখার সামর্থও কৃষকের নেই। কারণ এ ফসল ফলাতে তাকে ধারদেনা করতে হয়েছে। তার সংসার খরচ এগুলো বিক্রি করেই চলে। বর্তমানে ধানের দাম তেমনটি না বাড়লেও চালের দাম বেড়েছে। ধানের দাম না বেড়ে চালের দাম বাড়লে বোকারাও বলবেÑ এটি ব্যবসায়ীদের কারসাজি। এ ব্যবসায়ীরাই চাল আমদানিতে উঠেপড়ে লেগেছে। এরসাথে যোগ দিয়েছেন উর্ধ্বতন কর্তা ব্যক্তিরাও। জানা যাচ্ছে কৃষকের ধান কিনে সরকারকে যেসব ব্যবসায়ীরা চাল দেননি। তারাই নাকি চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছে।

অথচ কৃষককে সারা বছর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করে লোকসানে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীদের কখনও লোকসান হয় না। তারা হাতবদলেই কয়েকগুণ টাকা পকেটে ঢোকায়। ঝড়, বৃষ্টি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শারীরিক অসুস্থতা যত যাই হোক, মাস গেলে ঠিকই টাকা পান সুশীল, মধ্যস্বত্বভোগী, রাজনীতিক, চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীরা। আর ধান্দাবাজদের মাসেরও অপেক্ষা করতে হয় না।

আর কৃষক? এত ঝুঁকি নিয়ে যদি কোনো বার ফসল একটু ভালো ফলে, বাজারে চাহিদা হারিয়ে সেগুলো নষ্ট হয়। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে আজ কৃষকের অবস্থান কোথায়? দেশের কৃষি খাতকে ধ্বংস করতে আর কতদিন লাগবে? গরিবরা চিরদিন গরিবই থেকে যাবে। গ্রাম শহর হলেও এদেশের কৃষকের অবস্থার পরিবর্তন হবে না। বাজারে বিদেশি চালের, বিদেশি পিঁয়াজের অভাব নেই, বিদেশি গরুর অভাব নেই; অথচ দেশের কৃষক প্রতিবছর লোকসান গুনছেন। বিদেশী স্বার্থ ঠিক রক্ষা করছি; অথচ নিজেদেরটা মাথায় নেই।

এই তো গতবছরই ধান-চালের দাম কম থাকায় কৃষিমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘এ মুহূর্তে ধানের দাম বাড়ানো খুবই কঠিন। তবে ধান রপ্তানির মতো ভিন্ন কিছু উপায়ের কথা তারা বিবেচনা করছেন। এতে ধানের দামের ওপর একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তিনি মনে করেন। কৃষকের কিছুটা ক্ষতি মেনে নিতেই হবে।’ কিন্তু গতবছর ধান ও চাল রপ্তানি না করলেও মন্ত্রী মহোদয় এবারে এলান দিয়েছেন চাল আমদানিতে। এলসিকারা এখন তাই মহাব্যস্ত। কিন্তু কাদের রক্ষা করতে এই মহাযজ্ঞ, বলবেন কি? বিদেশিদের, না কি ওইসব সন্তান যারা আজ বড়বড় কর্মকর্তা-কর্মচারি ও ব্যবসায়ী তাদের আমার ঠিক বোধগম্য নয় বিষয়টি। রাষ্ট্র পরিচালনা কিংবা শাসন গর্জন ঠিক-ঠাক বুঝিনা বলেই হয়তো এমনটা মনে হচ্ছে আমার।
তবে সোস্যাল মিডিয়ায় বিশিষ্ট সাংবাদিক আনু মোস্তফার একটি লেখা মন কাড়লো। তিনি বললেন ‘দেশি পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। এখন ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলো। যখন তীব্র সঙ্কট আর মুল্য আকাশ ছুঁয়েছিল তখন বন্ধুদেশ ভারত আকস্মিকভাবে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। শেষে শক্রদেশ পাকিস্তান থেকেও পেঁয়াজ আনতে হয়েছিল। কৃষকবান্ধব সরকার। কি আর বলা, কি আর করা। পেঁয়াজ চাষিদের হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিয়ে… বাঁশ দেওয়ার বন্দোবস্ত পাকা হলো। ভারতে পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ায় সে দেশের সরকার ওদের কৃষক বাঁচাতে রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। যতটুকু জানি, পেঁয়াজে বাংলাদেশ শূন্য শুল্ককর বহাল রেখেছে। ভারত যদিও কেজি প্রতি ১ টাকা করে শুল্ককর নিচ্ছে।’

তিনি আরো লিখেছেন ‘যারা চুক্তিবদ্ধ হয়েও সরকারকে এক ছটাক চাল সরবরাহ করেনি, তাদেরকেই ভারত থেকে চাল আমদানি করে সরকারি গুদাম ভরার সুযোগ দিল সরকার। চালের শুল্ক কমিয়ে ২৫ ভাগ করা হয়েছে। এই বিপুল লাভ বাণিজ্যের উপকারভোগী কারা কারা? সরকার আমদানি করছিল সেটা আলাদা বিষয়। চাল সিন্ডিকেটকেই চাল আমদানির বরাত দেওয়া হলো। হোক…। আম জনতা দর্শকমাত্র।’

অন্যদিকে দেশের ধান-চালের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলীর কথায় আরো বেশি আনন্দিত হলাম। তিনি বললেন, ‘চালের দাম বাড়লে গণমাধ্যম ও মধ্যবিত্তের একাংশের মধ্যে হইচই শুরু হয়ে যায়। এটা ঠিক নয়। কারণ, বাজারে এখন ধান-চালের যা দাম, তাতে কৃষকের লোকসান হচ্ছে। কৃষকের স্বার্থে এই দাম আরও বাড়া উচিত। তবে দাম যাতে খুব বেশি না বাড়ে, সেইদিকে সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে। কৃষক ও ক্রেতার মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ দাম যাতে নিশ্চিত হয়, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব খাদ্য মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রীর জন্য এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’

বর্তমানেও দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত। এতোবড় জনগোষ্ঠীকে পেছনে রেখে একটি দেশ কীভাবে এগোবে? কৃষিপণ্যের দাম বাড়লে কৃষক বাঁচবে। সমাজে কিছুটা হলেও ভারসাম্য রক্ষা পাবে। বেকারত্বের হার কমবে। আমাদের দেশের প্রধান প্রধান কৃষিপণ্য- পাট, ধান, পিঁয়াজ, ডাল, আখ, সবজি আমদানি বন্ধ করা হোক।

কিন্তু এসবে কারও কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। কারণ কৃষক মরলে কার কি? কারও কিছু যাবেও না, আসবেও না। দেশের সব কৃষকই জানে, উৎপাদন করলে লোকসান গুণতে হয়, ধারদেনার টাকা না তুলতে পেরে পালিয়ে বেড়াতে হয়। তবু তারা আবাদ করেন। কারণ একটাই তারা নিরুপায়। চাষ না করলে খাবে কি, আর করবেই বা কি! তাদের নিয়ে কথা বলার কি কোনো কর্তৃপক্ষই নেই? আমরা সুশীল, শিক্ষিত সমাজ আর কতোটা স্বার্থপর হবো? আসুন, সভ্যগণ আমরা একটু হলেও কৃষক নিয়ে ভাবি, দেশ ও দেশের মানুষ নিয়ে ভাবি; তাদের কল্যাণে কথা বলি, তাদের এগিয়ে নিতে কার্যকরি পদক্ষেপ নেই।

লেখক-মাহবুব দুলাল

সাংবাদিক, কবি ও কলামিস্ট।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে