পরমাণু বিজ্ঞানীর হত্যাই কি ট্রাম্পের ইরানের সাথে যুদ্ধ শুরুর পূর্বাভাস?

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২০; সময়: ৫:৩৮ অপরাহ্ণ |
খবর > মতামত
পরমাণু বিজ্ঞানীর হত্যাই কি ট্রাম্পের ইরানের সাথে যুদ্ধ শুরুর পূর্বাভাস?

সিমন টিসডল : গত শুক্রবার ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যার ঘটনায় সৌদি আরব ও ইজরায়েলি মিত্রদের সহায়তায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সাথে পাকাপোক্ত দ্বন্দ্বের পথেই এগোচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত সপ্তাহে সৌদি আরবে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ইউএস সেক্রেটারি অব স্টেট মাইক পম্পে ও সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের বৈঠকের পরই ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ওপর যেকোনো ধরণের আক্রমণ শুরু করতে পারেন এমন আশঙ্কা তৈরি হয়।

তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু গোপনই রাখা হয়, এরফলে এনিয়ে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্বও বিভিন্ন মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে। কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না থাকায় ধারণা করা হচ্ছে তারা ইরান সরকারকে প্ররোচিত করার ব্যাপারেই একমত হয়েছেন। ইরান যেকোনো ধরণের পাল্টা আক্রমণ করলেই এ ঘটনা ট্রাম্পের ইরান আক্রমণের ঘটনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতে পারে।

লোহিত সাগরের পাশে নিওম শহরের এই বৈঠকের ফলে আরেকটি বিষয়ও স্পষ্ট। এই সম্মিলিত ইরান বিরোধী জোটে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারত্বের কারণে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইরানের সাথে আলোচনার পথ এবং পরমাণু চুক্তিতে ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়াও সহজ হবে না।

ইরানের শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনির ঘোষণা অনুযায়ী মোহসেন ফখরিজাদেহের হত্যার ঘটনায় ইরান পাল্টা আক্রমণ করলেই জো বাইডেনের এ অঞ্চলের পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ করার চেষ্টা ভেস্তে যেতে পারে। এমনকি ইরান সরকারও যদি আঘাত হানা থেকে বিরত থাকে; ইরাক, সিরিয়া ও লেবাননের শিয়া মিলিশিয়া আক্রমণ করে বসতে পারে।

ওয়াশিংটনের সম্মতিতে ইজরাইল-ই এই গুপ্তহত্যার পেছনে ছিল এব্যাপারে নিশ্চিত ইরানের নেতারা। প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এ ঘটনায় ইজরাইলকেই দোষারোপ করেছেন। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ এক টুইটার বার্তায় জানিয়েছেন, এ ঘটনায় ইজরায়েলের সম্পৃক্ততার জোরালো ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। ইরানের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষত ইউরোপীয় ইউনিয়নকে দ্বৈত নীতি পরিহার করে এঘটনায় নিন্দা জানানোর আহবান জানান তিনি।

২০১০ – ১২ সালে ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীদের গুপ্তহত্যার ঘটনায়ও ইজরাইলকে দায়ী করেছিলো ইরান। পূর্ববর্তী গুপ্তহত্যা প্রক্রিয়ার সাথে ফখরিজাদেহের হত্যা প্রক্রিয়ারও মিল পাওয়া গেছে। ইরান সরকারের বিরুদ্ধে গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগ আনা ট্রাম্প ইরানকে শায়েস্তার লক্ষ্যে আক্রমণ চালাতে প্রস্তুত এমনটাই মনে হচ্ছে অবস্থাদৃষ্ট দেখে। ট্রাম্পের নির্দেশনায় যুক্তরাষ্ট্র- ইজরাইল একাধিকবার ইরানের অভ্যন্তরে হামলা চালিয়েছে এমন ধারণাও করা হয়।

গত জুলাইয়ে নাতানজ পারমাণবিক কেন্দ্র আকস্মিক বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইরান পরমাণু চুক্তির শর্তের চেয়ে বেশি ইউরেনিয়াম মজুদ করেছে জাতিসংঘের পরিদর্শকরা এ তথ্য জানানোর পরই এ মাসেও ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার নাতানজ আক্রমণের ব্যাপারে আলোচনাও করেছেন। গত সপ্তাহেই মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক ক্ষমতাধর বোয়িং বি-৫২ স্ট্রাটওফোরট্রেস বোম্বার পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প।

পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যা ঘটনা কি ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পে আঘাত হানার উদ্দেশ্যে? নাকি সবকিছুই ট্রাম্পের ইরানকে শায়েস্তা করার ও ইজরাইলকে রক্ষার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার উপলক্ষণ মাত্র?

ট্রাম্পের সর্বোচ্চ প্রতিরোধ নীতির কারণে ইরান নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দেশটির নেতারা এখনো পরাজয় স্বীকার করেনি। পারমাণবিক বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে দেশটি। ভবিষ্যতে কী ঘটতে যাচ্ছে তাও অনিশ্চিত, এর অনেকটাই নির্ভর করছে ইজরাইল ও সৌদি আরবের ওপরেও। বাইডেন পারমাণবিক চুক্তিতে ফিরে যেতে চাইলে নতুন শর্তারোপ ও করতে পারে দেশ দুইটি। এছাড়াও ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখার পক্ষেই থাকবেন তারা।

তবে নেতানিয়াহু ও যুবরাজ সালমানকেও সতর্কতার সাথেই এগুতে হবে। বাইডেনের চিন্তা এড়িয়ে যাওয়ার কিংবা শত্রুতা বৃদ্ধির ফলে ইজরাইলের নিরাপত্তা ক্ষুন্ন হওয়ার আশঙ্কা এড়িয়ে যেতে পারবেন না নেতানিয়াহু। অন্যদিকে ইরানের ব্যাপারে সৌদি যুবরাজের আক্রমণাত্মক আচরণের আশঙ্কাই বেশি। তবে সৌদির তেলের টার্মিনাল এবং শহরগুলো হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে এ আশঙ্কাও বিবেচনায় রাখতে হবে তাকে।

কোভিডে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের অর্থনীতি ও আরোপিত বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ইরান প্রতিশোধ নেয়ার রাস্তায়ই হাঁটবে কিনা তা-ই এখন দেখার বিষয়। পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্যই এটি ভাগ্য নির্ধারণীর বিষয়। এদিকে সহসা আক্রমণের অপেক্ষায় আছে ট্রাম্পও। দীর্ঘ ৪ বছর অপেক্ষার পর প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে এটিই তার শেষ সুযোগ।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

লেখক: সিমন টিসডল দ্য গার্ডিয়ানের কলামিস্ট

অনুবাদ : রাফিয়া তামান্না
কপি : দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে