কন্যা সন্তানকে অবহেলা কেন?

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২০; সময়: ২:১১ অপরাহ্ণ |
খবর > মতামত
কন্যা সন্তানকে অবহেলা কেন?

তানজিলা চৌধুরী প্লাবনী : প্রতিবছর বিভিন্ন আয়োজন ও আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পালিত হয় কন্যাশিশু দিবস। কিন্তু কন্যাশিশুদের বছরের বাকি দিনগুলোতে ভুলে থেকে এই একটি দিন বিশেষভাবে পালন করা নিরর্থক। এই দিনটি পালন করার আগে কন্যাশিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ দূর করতে হবে, তাদের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। তাদের শিক্ষা, প্রজনন, স্বাস্থ্য সবক্ষেত্রে সমান অধিকার নিশ্চিত করতে পারলেই কন্যাশিশু দিবস পালন অর্থবহ হবে।

এখনো আমাদের দেশের অনেক পরিবারেই কন্যা এবং পুত্র সন্তানের মাঝে ভেদাভেদ করা হয়। কন্যাশিশুদের ঘরের বোঝা মনে করা হয়। কন্যাশিশু হওয়ার সংবাদ পেলেই গর্ভপাত করানো হয় অনেক পরিবারেই। এসকল বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে তারা চার দেয়ালের বাইরের দুনিয়ায় তাদের প্রতিভা জাহির করতে পারছে না। তারা সামনে এগুতে পারছেনা। এখনো আমাদের দেশে শিশুশ্রম বিদ্যমান। আর এই শিশুশ্রমের স্বীকার হচ্ছে অনেক কন্যাশিশু। ঘরে অভাব দেখা দিলেই কন্যাশিশুদের গৃহকর্মে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে অথবা বাল্যবিবাহ হচ্ছে। গৃহপরিচারিকা হিসেবে প্রতিনিয়তই কন্যাশিশুদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনাও নতুন কিছু নয়। পরিবারের সদস্যদের কাছেও নিরাপদ নেই কন্যাশিশুরা। শারীরিক, মানসিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয় কন্যাশিশুদের। যেন তাদের অপরাধ এটুকুই, মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়া।

পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে কন্যাশিশুদের যথাযথ অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে। মেয়েদেরকে মেয়ে নয় বরং মানুষ হিসেবে সঠিক আচরণ করতে হবে। ছেলে-মেয়েদের মাঝে ভেদাভেদ করে যে অসুস্থ সমাজ গঠিত রয়েছে তা পরিবর্তন করে সুস্থ মানসিকতা নিয়ে সামনে এগোতে হবে। এই অসুস্থ সমাজ নারী জাতির জন্য হুমকিস্বরূপ। এখনই সময় জেগে উঠার। সকলকে জেগে উঠে আগামীর কন্যাশিশুদের জন্য সুস্থ সমাজ গঠন করতে হবে। মেয়েরাও পারে ছেলেদের সাথে পা মিলিয়ে চলতে। তাদের সুযোগ দিলে তারা কোনো দিক থেকেই পিছিয়ে থাকবে না। শুধু প্রয়োজন স্বাধীনতার, একটু ভরসার ও সুযোগের।

সমাজের উন্নয়নের জন্য নারী-পুরুষ উভয়ের মিলে কাজ করতে হবে। গাড়ির কোনো একটি চাঁকা থেমে গেলে যেমন অন্য চাঁকাটি সম্পূর্ণ ভর নিয়ে সামনে আগাতে পারেনা, তেমনি নারীরা থেমে থাকলে একা পুরুষের প্রচেষ্টায়ও সমাজের উন্নয়ন সাধন সম্ভব নয়। সমাজের উন্নয়নের জন্য নারী-পুরুষ উভয়ের মিলেমিশে সামনে এগোতে হবে। এজন্য কন্যাশিশুদের তাদের যথাযথ অধিকার দিতে হবে। তাদের বাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের ভোগ্যপণ্য ভাবা বন্ধ করে নিরাপত্তা দিতে হবে। যেইদিন দেশের সকল কন্যাশিশুরা নির্ভয়ে মাথা উঁচু করে অধিকার নিয়ে চলতে পারবে সেইদিন পরিপূর্ণ হবে কন্যাশিশু দিবসের আসল উদ্দেশ্য।

লেখক :
শিক্ষার্থী,
জার্নালিজম,কমিউনিকেশন এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ
বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী

  • 88
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে