তদন্ত কমিটি রাবিতে না এসে ঢাকায় শুনানি! রাবির সম্মানহানিকরা

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২০; সময়: ১০:০৬ অপরাহ্ণ |
খবর > মতামত
তদন্ত কমিটি রাবিতে না এসে ঢাকায় শুনানি! রাবির সম্মানহানিকরা

আয়েশা সিদ্দিকা শিমুল : কথায় আছে বাঁশের চাইতে কঞ্চি বড়। এ রকমই মনে হচ্ছে তদন্ত কমিটির কার্যকালাপে। এ যেন তদন্তের পূর্বেই সাজা শুরু। আদালত ঢাকায়। অভিযোগ হলে তদন্ত হতে পারে এটা স্বাভাবিক, এ ব্যপারে আমার আক্ষেপ নেই। আমার প্রশ্ন তাদের দাম্ভিকতা নিয়ে। আইনকানুন, রীতি, নিয়ম অনুযায়ী অভিযোগ স্থলে তদন্ত বা শুনানি হয় ।

এই নিয়ম সব ধরনের মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বিস্মিত হয়েছি তদন্ত কমিটি আইনের প্রতি বৃদ্ধা আংগুলি দেখিয়ে অভিযোগ স্থলে না এসে ঢাকায় বসে শুনানি এবং তদন্ত করবেন। ঢাকায় বসে শুনানি এ প্রক্রীয়া শুধু প্রশ্নবিদ্ধ নয় হাস্যকরও বটে। তদন্ত কমিটি কি ভুলে গেছেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী। যে বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত হয়।

এ বিশ্ববিদ্যালয়য়ের অতিত ঐতিহ্য সম্মান বিশ্ববিদ্যালয়য়ের প্রতিটি ছাত্রের হৃদয়ের মনিকোটায় রয়েছে, এই বিশ্ববিদ্যালয়য়ের সন্মানহানি রাবির ছাত্র ছাত্রীরা মেনে নিবেনা। তদন্ত কমিটির কাজ হল তদন্ত করা ,তারা কোনো বিচারক নহে।! তদন্ত শেষে রিপোট প্রণয়ন করাই তাদের মুখ্য কাজ।

আমার জানামতে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় (গোপালগঞ্জ) এবং জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয়ভাবে আলোচিত, দুটি আলাদা ঘটনায় তদন্ত হয় সেক্ষেত্রে তদন্ত কমিটির সকল সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেছেন। রাবির ক্ষেত্রে এর ভিন্নতা তদন্ত কমিটির রাবিকে অবজ্ঞা করার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কি? এটি রাবির সন্মানে চরম আঘাত।

রাবির মাননীয় উপাচার্য সহ রাবির শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মন্ডলীদের ঢাকায় ডেকে নিয়ে শুনানি করা তদন্ত কমিটির এখতিয়ার নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে সুনামধন্য অনেক শিক্ষকদের সহিত এ ব্যপারে আলাপ করে দেখেছি অধিকাংশ শিক্ষক মনে করেন ঢাকায় আমাদের ডেকে শুনানি আত্ত সম্মানের প্রশ্ন। আবার কেউ কেউ ক্ষমতার লোভে ঢাকায় যেতে প্রস্তুত ভাবখানা এমনই যেন ভিসি হয়ে আসবে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়য়ের সম্মানের স্বার্থে শুনানির জন্য ঢাকায় যাওয়া নিজস্ব মূল্যবোধকে বিকিয়ে দেওয়া।

ইউ জিসির তদন্ত এবং গণশুনানি প্রাথমিক পর্যায়ে অনেকের মত আমিও সাধুবাদ জানিয়েছিলাম। সেদিন এক বিবৃতিতে দেখলাম স্বয়ং “উপাচার্য মহোদয়” যার বিপক্ষে অভিযোগ তিনি নিজেই তদন্তকারী দলকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তাহলে কেনো সম্মানিত শিক্ষকদের ঢাকায় ডাকা হচ্ছে শুনানির নামে তাও আবার মহামারী করোনার মধ্যে? নাটকের দৃশ্যপট রহস্যজনক মনে হচ্ছে তাই ঘুরে আসি এটি কত বড় মাপের অপরাধ এবং কত বড় তদন্ত? এটি কতটা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ? নাকি স্বার্থান্বেশী মহলের কুটচাল?

রাবির উপাচার্য এবং উপ উপাচার্য মহোদয়ের বিপক্ষে অভিযোগ সমূহর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

১। শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম।
২। স্বজনপ্রীতি করে উপাচার্য মহোদয়ের মেয়ে ও জামাতার নিয়োগ।
৩। আইন সংশোধনে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে ধোঁকা দেওয়া।
৪। উপ-উপাচার্য চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়ার নিয়োগ বানিজ্য।
৫। ৭৩ এর অধ্যাদেশ নামেনে বিভিন্ন বিভাগের সভাপতি নিয়োগ।
৬। অ্যাডহোক এবং মাস্টার রোলে কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ সহ মোট ১৭টি অভিযোগ আনেন। (প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের একাংশ যদিও তাদের প্রগতিশীলতার প্রশ্ন রয়েছে!)

প্রথমে আসি শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, শুধু মাত্র ভালো রেজাল্ট শিক্ষক নিয়োগে একমাত্র মাফকাঠি নয়। আমরা দেখেছি অনেক ছাত্র শুধুমাত্র নিজ বিভাগের বই মুখস্ত করে ভালো রেজাল্টের ধান্দাকরে। অন্য কোনো কিছু যে, জানার আছে তা তদের কাছে বোধগম্য নহে। বৈশ্বিক কোনো জ্ঞান নাই ইংরেজী তো দূরের কথা শুদ্ধভাবে বাংলা বলতে পারেনা কিন্তু রেজাল্ট ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট।

আর যে, ছেলেটির রেজাল্ট ফাস্ট ক্লাস পজিশান নিচের দিকে কিন্তু ছেলেটি লেখাপড়ার পাশপাশি বৈশ্বিক জ্ঞান সহ অন্যান্য গুনাবলী বিদ্যমান এখন প্রশ্ন হল আপনী কাকে নিয়োগ দিবেন ? দেখেশুনে ভালো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া উপাচার্য মহোদয়ের দায়িত্ব। আর এ কাজটি উপাচার্য মহোদয় একা করেননা এর জন্য একটি বোর্ড থাকে। নিজ ঘরে যোগ্য সন্তান থাকলে আর তার নিয়োগ হলেই স্বজনপ্রীতি হয়না।

আমরা দেখেছি সব কর্তাব্যক্তির আমলেই তার পরিবারের যোগ্য প্রার্থী থাকলে তার চাকরী হয়েছে। এটাকে স্বজনপ্রীতি বলেনা। যখন অযোগ্যকে যোগ্যতা প্রমাণ করে নিয়োগ দেওয়া হয় যেটিকে বলা হয় স্বজনপ্রীতি। স্বজনপ্রীতি দেখেছি আমরা কীভাবে সাবেক ভিসি ড. মোহাম্মদ মিজান উদ্দিন তার মেয়েকে নিয়োগ দেন তাও আবার বিশেষ আইন তৈরি করে। আমরা এও দেখেছি তার আমলেই মোট ৬৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেন তারমধ্যে ৩৯ জন শিক্ষক সম্পূর্ণ ভাবে প্রগতিশীলতার বিপক্ষে।

উল্লেখ্য, এর মধ্যে রয়েছে জঙ্গিদের মদদ দাতা জামাত-বিএন পি কর্তৃক মনোনিত সাবেক ভিসি প্রফেসর ফারুকির ছেলে।

দুর্নীতি একটি বড়ব্যাধি শিক্ষা ক্ষেত্রে এর বিস্তার শিক্ষাকে বানিজ্যকরণের মধ্যদিয়ে। গত প্রশাসনের সময়ে এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি লক্ষণীয়। কথায় আছে ‘টাকার ডগায় ভুতও নাচে’ এক্ষেত্রে শিক্ষা নাচছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় প্রতিটি বিভাগে সন্ধ্যাকালিন কোর্স খুলে ব্যবসা তো ভালোই চলছে এ ব্যাপারে কারো কোনো কথা নাই।

স্বয়ং রাষ্ট্রপতি এর বিপক্ষে বলে বিরাগভাজন হয়েছিলেন। সেদিন দেখলাম এক শিক্ষক ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন সন্ধ্যাকালিন অমুক কোর্স এর ছাত্ররা যোগাযোগ করুন। এমন কোনো শিক্ষককে দেখলাম না যে তারা বলছেন, নিয়মিত ছাত্ররা যোগাযোগ করুন। বা কি সুন্দর? চলিতেছে সার্কাস। অভিযোগ কারীদের অন্যতম দায়িত্ব পালনের সময় কলম কেনেন ১১ হাজার টাকায়। টাকার উৎস হেকেপ।

গত প্রশাসনের আমলেই ঢাকার অতিথি ভবন ক্রয়ে ১০ কোটি টাকার দুর্নীতিসহ সব দুর্নীতির তদন্ত ও বিচারের দাবি কি হিমঘরেই থেকে যাবে? এ ছাড়া স্মার্ট কার্ড দেয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে।

আজ পর্যন্ত স্মার্টকার্ডের কোনো রকম ব্যবহার ও উপকারিতা পায়নি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আজকে যিনি দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকদের ব্যানারের প্রধান ব্যক্তি তার নামেও ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপে প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ আছে, সেটিও তদন্তাধীন। অভিযোগকারীদের অন্যতম তার বিরুদ্ধে হেকেপ নামীয় প্রজেক্টের টাকা তসরুপ করার অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, হেকেপের টাকায় ছাত্রদের বিদেশে প্রশিক্ষন দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু তা না করে ঐ শিক্ষক তার নিজ ফ্যামেলী নিয়ে বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন? তা আল্লাহই জানে।

২০ গজ রাস্থা না চারুকলা টু কৃষি অনুষদ রিক্সাভাড়া ১৫০ টাকা ছাত্রদের নাস্তা না করিয়ে তার বিল হয় ৩৫,০০০ হাজার টাকা। ছাত্ররা কষ্ট পেলো তখন যখন তাদের কে দিয়ে ভুয়া বিলে স্বাক্ষর করালেন ঐ শিক্ষক। হায়রে টাকা- কথায় আছে টাকার ডগায় ভুত নাচে। এখানে না হয় নাস্তাই নাচলো আমরা শুধু দেখলাম।

অভিযোগকারীগন প্রগতিশীলতার কথা বলে অথচ আমাদের দেখতে হয়েছে তাদের প্রেত্মাতারা যখন প্রশাসনে ছিলেন, অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের যেভাবে বঙ্গবন্ধুকে উপস্থাপন করা হয়েছিলো তা ক্ষমার অযোগ্য তখন আপনাদের নিশ্চুপ থাকতে দেখেছি, মমতাময়ী মহিয়সী মা দেশরত্ন শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে স্বাক্ষর পর্যন্ত করে নাই বরং কিংস্ পার্টিতে লিখিয়েছেন নাম তারা আবার প্রগতিশীল? না এরা প্রগতিশীল নয় এরা হল অনুপ্রবেশকারী কুটচালে বিশ্বাসী।

তাদের কুটচালে পা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়, সরকার এবং সত্যিকারের প্রগতিশীল শিক্ষকদের বিব্রত করার প্রয়োজন আছে কি? তাই সবিনয়ে ইউ-জিসির তদন্ত কমিটির প্রতি বিশেষ অনুরোধ অভিযোগ স্থলে তদন্ত করলে আসল সত্য বেরিয়ে আসবে এতে কোনো পক্ষের সম্মানহানি হবেনা বরং সম্মান রক্ষাপাবে। সেই সঙ্গে অনুপ্রবেশকারী এবং ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন হবে । যারা চোর ধরছে তাদের কেই চোর বলা রাবি সমাজ মানবেনা।

লেখক- আয়েশা সিদ্দিকা শিমুল, সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেত্রী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

  • 3
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে