রাবি ভিসির বিপক্ষে অভিযোগ ও ইউজিসির গণশুনানি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ৭৩ এর সহিত সাংঘর্ষিক?

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২০; সময়: ৫:০৫ অপরাহ্ণ |
খবর > মতামত
রাবি ভিসির বিপক্ষে অভিযোগ ও ইউজিসির গণশুনানি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ৭৩ এর সহিত সাংঘর্ষিক?

ইব্রাহিম হোসেন মুন : বধু হওয়ার অপেক্ষায় সাজঘরে কন্যা, হরেক রকম বাতি, সাজগুজে বাড়ি। চলছে অতিথি আপ্যায়ন, অন্যদিকে বরের পালকি দুলছে। বর যাত্রীগণ বধু আনতে সামগ্রিক প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন কিন্তু বিপত্তি এক জায়গায় “পালকিতে বর নেই”।

রাবির গণশুনানীও যেন “পালকিতে বর নেই” এমনই অবস্থা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর হল ছাত্র (ংঃঁফবহঃ)। কিন্তু পরিতাপের বিষয় পালকিতে যেমন বর নেই ঠিক তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রদেরও অবস্থান নেই। যে ছাত্রদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বেলায় কারো কোনো পদক্ষেপও নাই আবার সময় নেই। আমরা যারা সাধারণ ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি বা এখনো পড়ছে একমাত্র তারাই বুঝি এর কত জ্বালা।

৭৩ এর অধ্যাদেশে যাওয়ার আগে বাস্তব অভিজ্ঞতায় ঘুরে আসি, বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ এবং অসাধারন দুটি নামে ছাত্ররা পরিচিতি লাভ করে। শিক্ষকদের ছেলেমেয়েরা ভর্তি যুদ্ধে পাস মার্কস পেয়ে কোটায় ভর্তি হয়ে ধীরে ধীরে অসাধারন ছাত্র হিসাবে পরিচিতি লাভ করে পরবর্তী পর্যায়ে ভালো রেজাল্ট করতে সক্ষম হন (অবশ্য সবাই না)।

কেউ পাস মার্কস না পেলে প্রয়োজনে আইন সংশোধনের রীতিও দেখা যাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে মেধাক্রমে ভর্তি হলে তারা হয় সাধারন ছাত্র। আমি অত্র বিশ্ববিদ্যালয়য়ের সাধারণ ছাত্রছিলাম, পাশাপাশী ছাত্র রাজনীতিও করেছি। তখন ছাত্রদের অধিকার আদায়ে রক্তাক্ত ঝড়েছিল; কিন্তু দেখারও কেউ ছিলনা, বলারও কেউ ছিলনা। দোষ শুধু নিয়তির।

অভিজ্ঞতা পিএইচডি করার শখ হল ভর্তি হলাম আইবিএস-এ প্রথম সেমিনার নামিদামী অনেক গুনী শিক্ষক হাজির হলেন। প্রশ্ন পর্বে এক শিক্ষক প্রশ্ন করলেন- তুমি ব্যাংকের ১০টি শাখার উপর কি পিএইচডি করবা? আমি সবিনয়ে উত্তর দিলাম- স্যার আপনার পাশে যে, ড. স্যার বসে আছেন, তিনিতো মাত্র ব্যাংকের ৫টি শাখার উপর পিএইচডি করছেন। তাহলে উনি শিক্ষক তাই ৫টি শাখার উপর করা যায় আর আমি ছাত্র আবার নেতা তাই ১০টা কম হয়ে যায়। তারপর বললাম- ঠিক আছে স্যার আমি ৪০টি শাখার উপর পিএইচডি করব ইনশাল্লাহ। উত্তর পেয়ে স্যার চুপ ।

সাম্প্রতিক সময়ে রাবি উপাচার্য মহোদয়ের বিপক্ষে ভুয়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউজিসির গণশুনানি এ নিয়ে রাবিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩-এর অধ্যাদেশ অনেকেই জানার পরেও একদম চুপ, কিন্তু কেন? ড্যাল মে কুচ কালা হে। ৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী ইউজিসি কর্তৃক এ ধরনের গণশুনানির আদেশও বৈধতা আছে কি?

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর হল ছাত্র তারা যখন লাশ হয়, রাকসুর টাকা যখন তসরূপ হয়। ছাত্রদের স্বার্থ বাদ দিয়ে তথাকথিত জামাত-বিএনপি সরকার ৫৪৪ জন অবৈধ নিয়োগ দেয়, সাবেক ভিসি মুহাম্মদ মিজান উদ্দিন তার মেয়ে ৩.১৯ পেয়ে শিক্ষক নিয়োগ পায়, তার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকায় রেস্ট হাউজ ক্রয়ে কেলেংকারী হয়, দুর্নীতি দমনে মামলা হয়, শিক্ষা যখন বাণিজ্যে রুপান্তরিত হয়। অধিকার আদায়ে আমরা যখন রক্তাত হই তখন তো দেখিনাই ইউজিসির গণশুনানি!

অতিরিক্ত যোগ্যতা কখন ও কখনও বিপদের কারণ হয়। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবাহান তার অতিরিক্ত যোগ্যতার বলে দ্বিতীয় মেয়াদে রাবির উপাচার্য। তার সততা মেধা ন্যায়পরায়নতা ছাত্রদের চারণ ভূমি মতিহার সবুজ চত্বর এক দিনের জন্য বন্ধ হয়নি। আবাসন সমস্যা দূরীকরণ, টিএসসি চালু করণ, রাকসু প্রক্রিয়াধীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ, জঙ্গীমুক্ত ক্যাম্পাস, ছাত্রবান্ধব পরিবেশ। এত কিছুর পরে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর জন্য এ ধরনের অভিযোগ তার আবার শুনানি। আবার কেউ দিচ্ছে হাততালী।

গল্প বলে শেষ করি, স্বামী লক্ষ্য করল সে ঘুমিয়ে পড়ার পরে প্রায় প্রতি রাতেই স্ত্রী বেরিয়ে যায় এবং শেষ রাতে ফিরে আসে। ক্ষুদ্ধ স্বামী হাতে নাতে ধরার মানসে এক রাতে স্ত্রী বের হয়ে যাওয়ার পরে দরজা বন্ধ করে দিল। ভোরে স্ত্রী ফিরে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ দেখে ভয়ে মুর্ছা যাওয়ার মত অবস্থা। স্বামীকে ডেকে অনুনয়-বিনয় করে দরজা খোলার অনুরোধ করতে লাগল। কান্না-কাটি করে মাফ চাইল। কাজ হলনা।

স্বামী দাঁত কিড়মিড় করে বলল- তোর ভন্ডামী আজ ধরে ফেলেছি নষ্টা। পাড়া-পড়শিকে তোর এই কুকীর্তি না দেখিয়ে আমি দরজা খুলব না। চালাক স্ত্রী ভাবলো লোক জানাজানি হলে সম্মান থাকবেনা। তাই বুদ্ধিকরে স্বামীকে বলছে, তুমি থাকো আমি কুয়ায় ডুবে আত্মহত্যা করব। এ মুখ আর আমি দেখাবোই না। কিছুক্ষণ পরেই কুয়ার মধ্যে ঝাপ দেয়ার শব্দ শোনা গেল।

স্বামী দেখল, এবারতো কেসকামারি হয়ে তাই নিজে বাঁচতে ঘড় থেকে বের হলেন। তখন ছিল মাঘ মাস। তড়িঘড়ি মই নিয়ে কুয়ার মধ্যে নেমে তীব্র শীত উপেক্ষা করে ডুব দিল। হাতে বাঁধল ইট আর পাথর ক্ষোভে বিষ্ফোরিত হয়ে ভেজা কাপড়ে শীতে কাঁপতে কাঁপতে গোয়ালে থেকে হালের লাঠি নিয়ে ঘরের দিকে ছুটল ঝাল মেটানোর জন্যে।

ঘরে এসে দেখে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। রোষে ফেটে পড়ে হুংকার দিল-বজ্জাত কলঙ্কিনী দরজা খোল। তোর আর কুয়ায় ডুবে মরতে হবে না। লাঠি দিয়েই তোকে শেষ করব। ঘরের মধ্যে স্ত্রী একেবারে চুপ। টু-শব্দ পর্যন্ত করছে না। ওদিকে ঘন কুয়াসার সাথে বরফশীতল বাতাস বইছে।

তীব্র শীত আর ভেজা কাপড়ে স্বামীর বেহাল অবস্থা। রাগে গর্জন করতে করতে দরজায় লাথি মারতে শুরু করল। কে শোনে কার কথা। ইতিমধ্যে ভোর হয়ে গেছে। চিৎকার আর দরজায় প্রচন্ড আঘাতের শব্দে পাড়া-প্রতিবেশী অনেকেই এসে হাজির।

লাঠি হাতে ভেজা কাপড়ে পাগলের মত চিৎকার আর দরজায় আঘাত করতে দেখে সবাই জিজ্ঞেস করল- কি হয়েছে? এই শীতে ভেজা কাপড়ে চিৎকার করছিস কেন? স্বামীর তখন কথা বলার শক্তি নেই। একটু দম নেয়ার চেষ্টা করল। সবাই চুপ।

সুযোগ বুঝে স্ত্রী ঘরের ভেতর থেকে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠল- আমি কি মেয়ে মানুষ না? ঘরের মরদের এসব আদিখ্যেতা আর কত সহ্য করব? প্রতিটা রাত বাইরে কাটিয়ে ভোর রাতে গোসল করে এসে গামছা দাও, লুঙ্গি দাও, আর এসব করবনা, আজকে মাফ কর; এসব ঢং আমার আর ভালো লাগে না। একথা শুনে এলাকাবাসী স্বামীকে দিল গণধোলাই। রাবির ক্ষেত্রে নিজেদের দোষ আড়াল করতে ভুয়া অভিযোগ সাজিয়ে স্বার্থ উদ্ধার হবেনা। সাধু সাবধান।

লেখক- ইব্রাহিম হোসেন মুন, সাবেক সভাপতি, রাবি ছাত্রলীগ।

  • 216
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে