ধোঁয়া ওঠা মটকাতে চা খেয়েই তৃপ্ত বাঙালি

প্রকাশিত: ২২-১১-২০২০, সময়: ১২:৫৬ |
Share This

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : চা বিলাসী বাঙালির সকাল দুপুর কিংবা সন্ধ্যা চা ছাড়া দিনটাই শেষ হয় না। আর সে চায়ে রয়েছে ভিন্নতা। লাল চা, দুধ চা, আদা চা, লেবু চা, তুলসি চা ছাড়াও এখন পাওয়া যায় তেঁতুল চা, মাল্টা চা, মরিচ চাসহ বিভিন্ন স্বাদের চা। তবে বর্তমানে একেবারে ট্রেন্ড বলুন আর জনপ্রিয় বলুন না কেন বেশ আলোচিত মটকা চা।

মটকা চা কে কিন্তু তন্দুরি চাও বলে অনেকে। তন্দুরী শব্দটি শুনেই নিশ্চয় চোখের সামনে ভেসে ওঠেছে, বিরাট একটা চুল্লি যেটাতে কাঠ কয়লার আগুন জ্বলছে সবসময়। সেই চুল্লির গায়ে লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে আটা বা ময়দার রুটি কিংবা চিকেনের কথা। নাহ কয়েক রকম চায়ের ভিড় ঢেলে বেশ শুরুর সারিতেই জায়গা করে নিয়েছে তন্দুরি চা।

তন্দুরি চা বানানো হয় টিন, সিমেন্টে বানানো ড্রামের মতো দেখতে বিশেষ চুলায়। আবার কোথাও কোথাও মাটির চুলাতে এই চা বানাতে দেখা যায়। এর মধ্যে কয়লার আগুনে পুড়ছে মাটির ছোট্ট মটকা। পাশেই স্টিলের কেটলিতে রাখা বাড়িতে বানানো বিশেষ মশলার দুধ চা। ক্রেতার ফরমাশ এলে তামার পাত্রে জ্বলন্ত মটকা রেখে তাতে চা ঢালা হয়। মটকার তাপে চা ফুটতে থাকে, বের হয় ধোঁয়াটে সুবাস। এভাবেই ভিন্ন স্বাদের মটকা চা বানাতে দেখা যায় দেশের বিভিন্ন জায়গায়।

দেশের মানুষ প্রথম মটকা চায়ের স্বাদ পেয়েছিল মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ‘মটকা চা এবং মমো’ ক্যাফেতে। ব্যতিক্রমধর্মী চা এবং মমো নিয়ে বাটার গলিতে ছোট্ট পরিসরে ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করে ক্যাফেটি। মাটির গ্লাসে পরিবেশিত ধোঁয়াটে স্বাদের এই চায়ে চুমুক দিতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভোজনরসিকরা।

আমাদের দেশে নতুন হলেও এই চায়ের উৎপত্তি কিন্তু ভারতে। সেখানেও বেশ জনপ্রিয় এই চা। যারা ভারতে ঘুরতে গেছেন তারা এই চায়ের স্বাদ নিতে একেবারেই ভোলেন না। আর দেশে আশার পর মাটির পোড়া পোড়া গন্ধের মিশেলে দুধ চায়ের স্বাদ নিতে বারবার মন চায়। স্মৃতি মন্থর করেই নিজেকে সান্ত্বনা দেন নিশ্চয়। তবে এখন ঘরের পাশেই এই চায়ের স্বাদ নিতে পারবেন। সঙ্গে থাকতে পারে প্রিয় মানুষটি।

দেশে এই চায়ের শুরুটা হয়েছিল দুই তরুণ উদ্যোক্তার হাত ধরে। রেজাউল কবির ও পূর্ণেন্দু বিশ্বাস মিলে ক্যাফেটি চালু করেন। বিশেষ ধরনের এই চায়ের ক্যাফের পেছনে রয়েছে রোমাঞ্চকর গল্প। ভ্রমণপিপাসু এই উদ্যোক্তারা জানান, ইউটিউবে ভারতের পুনেতে তন্দুরি চায়ের একটি ভিডিও দেখেন। কেবল সেই চায়ের স্বাদ নিতে পুনেতে চলে যান এই দুই বন্ধু। পুনেতে দুই দিন অবস্থানকালে বেশ কয়েকবার চায়ের স্বাদ নেন।

দেশে এই চায়ের ক্যাফে করলে কেমন হয়, এ কথা ভাবতেই চায়ের প্রস্তুত প্রণালী বোঝার চেষ্টা করেন। চায়ের মশলাপাতি সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে পূর্ণেন্দু বিশ্বাস কেরালা চলে যান। আর রেজাউল কবির দেশে চলে আসেন দোকানের পজিশন নিতে। তবে এই চায়ের বাস্তব রূপ দেন পূর্ণেন্দু বিশ্বাসের স্ত্রী অনুশ্রী হালদার।

ইডেন মহিলা কলেজের এই শিক্ষার্থী ছোটবেলা থেকেই রান্না নিয়ে নিরীক্ষা করতে ভালোবাসেন। এরইমধ্যে রান্না বিষয়ক কয়েকটি রিয়েলিটি শোতেও অংশ নিয়েছেন তিনি। অনুশ্রী বলেন, খামার থেকে সংগ্রহ করা গরুর দুধ জ্বাল দিয়ে তাতে চিনি, বিশেষ চা পাতা এবং পাঁচ ধরনের মসলা মেশানো হয়। আর চায়ে স্মোকি ফ্লেভার আনতে যোগ করা হয় গরম মটকা। তবে মসশলার প্রসঙ্গ এলে মুচকি হেসে জানান, কিছু বিষয় থাক না অজানা।

ক্যাফেটিতে মটকা চায়ের দুটি পদ আছে। ৩৫ টাকা দামের প্রিমিয়াম চায়ে শেষে দুধের সর যোগ করা হয়। তবে পরিমাণভেদে মটকা রেগুলার এবং মিনি চা মিলবে ২৫ টাকা এবং ১৫ টাকায়। খাবার পরিবেশনে ব্যবহার করা হয় মাটির তৈজসপত্রে।

এর পাশাপাশি চিকেন, সবজি মমো, অনথন, অ্যাপল পাইও মিলবে ক্যাফেটিতে। প্রতিদিন ৫০ লিটার চা বিক্রি হয় বলে জানান তারা। হালকা শীতে ধোঁয়াটে চায়ের স্বাদ নিতে হলে এ দোকানে ঢুঁ মারতে পারেন। তবে বর্তমানে শহরের অনেক জায়গাতে এই মটকা চায়ের স্টল পেয়ে যাবেন। আবার বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরাঁয় অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি বিশেষ আয়োজনে রাখছে মটকা চা।

তবে চায়ের ইতিহাস স্পষ্ট থাকলেও মটকা চায়ের ইতিহাস এখনো ধোঁয়াশা। তবে সবার কাছে ভারতের চা হিসেবে পরিচিত হলেও অনেকের মতে, এই মটকা চা রাজস্থানের। সেখানকার মানুষ মাটির চুলাতে বেশি রান্না করে। তন্দুরি রুটি যেটা আমরা মাটি বা সিমেন্টের চুলার ভেতরে দিয়ে বানাতে দেখি। সেটাও নাকি রাজস্থানের রুটি তৈরি করার এক বিশেষ পদ্ধতি।

  • 43
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
উপরে