১০০০ বছর ইউরোপের মানুষ গোসল করেনি, ভরসা ছিল সুগন্ধী

প্রকাশিত: ১৭-১১-২০২০, সময়: ১৫:২৭ |
Share This

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ১৫০০ শতাব্দীর দিকে পাশ্চাত্য ইউরোপীয়রা বিশ্বাস করত যে গোসল করা একটি অস্বাস্থ্যকর বিষয়। অবাক করা বিষয় হলো, ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইয়ের মতোই স্পেনের রানী ইসাবেলাও জীবনে মাত্র দু’বার গোসল করেছিলেন।

আরো জেনে অবাক হবেন, সপ্তাদশ শতাব্দীর ব্রিটিশ রাজা জেমস প্রথমকে কখনোই গোসল করতে দেখা যায়নি। যার ফলে তার মাথায় সারাক্ষণ উকুনে ভরা থাকত।

নোংরা ইউরোপ

মধ্যযুগে প্রায় ১০০০ বছর ধরে পশ্চিম ইউরোপীয়রা স্নানের বিষয়টি প্রায় ভুলেই গিয়েছিল। এমনকি তারা সাঁতার কাটতেও পারত না। ফরাসি ইতিহাসবিদ জুলেস মিসলেট ইউরোপের মধ্যযুগকে ‘গোসল ছাড়া ১০০০ বছর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ইউরোপে কয়েক শতাব্দী ধরে গোসল ও সাঁতারের সংস্কৃতির এই অনুপস্থিতি বিশ্বের অন্যান্য অগ্রগতি থেকে তাদের ছিটকে ফেলেছিল।

সপ্তদশ শতকে উন্নত দেশগুলোয় গোসলের অনুপস্থিতি ও অপরিচ্ছন্ন অভ্যাস রীতিমতো অস্বাস্থ্যকর ও দুর্গন্ধময় অবস্থার সৃষ্টি করেছিল। ইউরোপীয়দের মনে ধারণা ছিলো, গোসল করলে রোমকূপের মধ্যে দিয়ে দেহে রোগ-জীবাণু প্রবেশ করে এবং সেই কারণে তারা স্নান করতেন না।

স্পেনের রানী ইসাবেল জীবনে মাত্র দুইবার স্নান করেন। যেদিন তার জন্ম হয় এবং দ্বিতীয় ও শেষবার তার বিয়ের দিন। ফ্রান্সে রাজপ্রাসাদকে বলা হয় ‘শাঁতো’। ফ্রান্সের রাজা প্রথম ফ্রাঁসোয়া ফ্রান্সজুড়ে এমন অনেক প্রাসাদ বা শাঁতো গড়েছেন। একেকটা প্রাসাদে শত শত কক্ষ।

তবে মজার ব্যাপার হলো, এতো বড় প্রাসাদে ছিল না কোনো বাথরুম। এখন ছবির মতো এখনকার যে ঝকঝকে ইউরোপ দেখতে পান। তা একসময় ছিল বস্তির মতো। তখনকার ১০ হাজার রাজ প্রাসাদসহ কর্মচারী ও চাকরদের থাকার স্থান সবকিছুই ছিল খুবই অপরিষ্কার।

প্রায় সব প্রাসাদের রান্নাঘর ছিল উন্মুক্ত। রান্নাঘরে ধূলা ময়লা, দুর্গন্ধ আর ইঁদুরে ভরা থাকত। তার মধ্যেই তৈরি করা হতো খাবার। সেসময় ইউরোপের মানুষ যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখত এমনকি টয়লেটও করত।

যদিও অষ্টম হেনরি প্রায়শই গোসল করতেন এবং প্রতিদিন তার পোশাক পরিবর্তন করতেন। তিনি ছিলেন অন্যদের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। ১৫৩৫ এর জুলাই মাসে কিং অষ্টম হেনরি ৭০০ এরও বেশি লোক নিয়ে পুরো ইউরোপ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন।

ফরাসিদের এই গোসল না করার আলসেমির কারণেই জন্ম নেয় শত শত বিশ্ববিখ্যাত ফরাসি সুগন্ধি কোম্পানি। যাতে সুগন্ধি মেখে হলেও স্নান না করে গায়ের দুর্গন্ধ ঢাকা যায়!

প্রাচীনকালে গোসলরীতি

প্রাচীন গ্রীক সভ্যতায় পাবলিক বাথ হাউস বা সাধারণ স্নানাগারের উল্লেখ আছে। রোমান সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ খুঁজে দেখা গেছে, সে সময় স্নানাগারে প্রণালী দ্বারা পানি সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল। এই দুই সভ্যতায় দ্বিতীয় খ্রিস্টাব্দে যে স্নানের অভ্যাস ছিল তার প্রমাণ মেলে।

‘ইউরেকা’ শব্দটি বললেই মনে পড়ে যায় বাথটাবে স্নান করতে করতে বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের সেই বিখ্যাত এবং যুগান্তকারী আবিষ্কারের কথা।

আরব্যরজনীতে তখনকার দিনের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের স্নান বিলাসের বিবরণ আছে। আর যারা নিম্নবিত্তের মানুষ তাদের জন্য নগরে থাকতো সামান্য দক্ষিণার বিনিময়ে সাধারণ স্নানাগার।

বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব পড়ার আগে জাপানে খোলা জায়গায় স্নানের রীতি ছিল। পরবর্তীকালে বৌদ্ধধর্মের প্রভাবে ঘেরা স্থানে স্নানের রীতি চালু হয়।

প্রাচীনকালে রাজা ও রানীদের স্নান বিলাসের কাহিনী আজও সবাইকে অবাক করে। সৌন্দর্যের কিংবদন্তি রানি ক্লিওপেট্রা নাকি ত্বকের ঔজ্জ্বল্য রক্ষার জন্য গাধার দুধ দিয়ে স্নান করতেন।

এছাড়া প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে রানি ও রাজকন্যাদের স্নানের জলে চন্দন, কেশর, গোলাপ জল ও নানা সুগন্ধিদ্রব্য ব্যবহার করার প্রচলন ছিল।

১৫০০ শতাব্দীর দিকে পাশ্চাত্য ইউরোপীয়রা বিশ্বাস করত যে গোসল করা একটি অস্বাস্থ্যকর বিষয়। তখনকার সময় নারীরা চুল পরিষ্কার করতেন অ্যালকালাইনের মিশ্রণ দিয়ে। সাবান ও পানি ছোঁয়া যেন তার বারণ ছিল।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
উপরে