রহস্যময় এসব ঘটনার জট আজো খুলতে পারেনি বিশ্ববাসী

প্রকাশিত: ০২-১১-২০২০, সময়: ১৩:৫৬ |
Share This

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : রহস্যময় পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকেই রহস্য শুরু। বিশ্বের নানা সময় ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর দিকে তাকালে বুঝতে পারবেন। কেমন যেন এক আবছায়া অন্ধকারের চাদরে মোড়ানো সবকিছু। সেই রহস্যের জোট যুগের পর যুগ কেটে গেলেও এখনো খোলা যায়নি। আসলে সমগ্র বিশ্বটিই এক রহস্যে ঠাঁসা।

অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়? না কোনো গোয়েন্দা কাহিনী বা আদিভৌতিক কিছু নয়। আজকের লেখায় থাকছে পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় ঘটা ঘটনা কিংবা কিছু স্থানের কথা। যেগুলোর রহস্য বা ঘটার কারণ জানা যায় নি আজো। যতই এগুলো নিয়ে মানুষ ঘাটাঘাটি করতে গেছে। ততই যেন রহস্যের জালে আটকে পড়েছে সেগুলো। সেই জট আজো খোলা সম্ভব হয়নি। তবে একসময় হয়তো জানা যাবে এর আসল কারণ। সেই অপেক্ষাতেই পুরো বিশ্ব। তবে চলুন আগে জেনে নেই তেমন কিছু রহস্যময় ঘটনা-

হারানো শহর আটলান্টিস

দার্শনিক প্লেটোর ডায়ালগ ‘টাইমাউস- এ উল্লেখিত ‘পিলার অফ হার্কিউলিস’এর সামনে অবস্থিত আটলান্টিসের কথা জানেন অনেকেই। এটি ছিল দশম মিলেনিয়ামের এবং বিশ্বের সর্বশক্তিমান শহর। সেও আজ থেকে প্রায় ১০ হাজার বছর আগের কথা বলছি। নৌশক্তির দ্বারা ইউরোপের বেশিরভাগ স্থান জয়ের পর ‘এথেন্স’-এর নিকট পরাজিত হয়ে এই শহর একরাতের মাঝে সমুদ্রে ডুবে যায়!

বিজ্ঞানী, গবেষক, প্রত্নতাত্ত্বিক কিংবা জ্ঞানপিপাসু মাত্রই আটলান্টিসের প্রশ্নে মাথা চুলকোতে শুরু করেন। একদল বলেন হ্যাঁ, প্রাচীন এমন একটি সভ্যতা ছিল অবশ্যই যারা জ্ঞানে গুণে বর্তমান আধুনিক পৃথিবীবাসী থেকে এগিয়ে ছিল। আবার অনেকে তা অস্বীকার করেন। তবে অনেকের মতেই প্লেটো পৌরাণিক কল্পকাহিনী এবং যুদ্ধের কাহিনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই রহস্য তৈরি করেছেন। তবে এই তত্ত্বের কোনো সত্যতা নেই। আবার কেনই বা এক রাতের মধ্যে সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেল এই শহর তাও কেউ জানে না। এই রহস্য হাজার হাজার বছর কেটে গেলেও জানা সম্ভব হয়নি।

স্টোনহেঞ্জ

এই ছবিটির সঙ্গে পরিচিত নন এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কষ্টই বটে! কেননা কম্পিউটারে উইন্ডোস এক্সপি ব্যবহারকারীদের মাঝে কমবেশি সকলেই স্টোনহেঞ্জের সঙ্গে পরিচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ারের অ্যামাসবারির নিকটে অবস্থিত এই স্তম্ভটি, খ্রীষ্টপূর্ব ২ হাজার থেকে ৩ হাজার অব্দের মাঝে, নিওলিথিক ও ব্রোঞ্জযুগে প্রতিষ্ঠিত। নিওলিথিক এবং ব্রোঞ্জ যুগের একটি স্তম্ভ যা মানমন্দির হিসেবে ব্যবহৃত হতো বলে ধারণা করা হয়। এটি ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ারের অ্যামাসবারির নিকটে অবস্থিত। এর ভৌগোলিক অবস্থানও বিশ্বের অন্যান্য জায়গার তুলনায় বেশ আলাদ।

সমতল ভূমির প্রায় ৮ মাইল উত্তরে স্টোনহেঞ্জ অবস্থিত। এতে বৃত্তাকারে বিশালাকৃতির বেশকিছু দণ্ডায়মান পাথর রয়েছে এবং এগুলোর চতুর্দিকে মাটির বাঁধ রয়েছে। এ বাঁধের ভেতর চতুর্দিকে বেষ্টন করে আছে ৫৬টি মৃত্তিকা গহ্বর। পাথরগুলোর মধ্যে আরও দুই সারি গর্ত বেস্টন করে আছে।

পাথরগুলোর গঠনের মধ্যে আছে দুইটি বৃত্তাকার এবং দুইটি ঘোড়ার খুরের নলের আকারবিশিষ্ট পাথরের সারি। এছাড়াও এতে কতগুলো পৃথক পাথর রয়েছে যা পূজার বেদীর পাথর কিংবা বধ্যভূমির পাথর হিসেবে পরিচিত। নিখুঁত এবং জটিল গঠনের এই স্তম্ভটি কে বা কারা প্রতিষ্ঠা করেছে, এর প্রতিষ্ঠার পেছনের কারণ কি, তা এই বিংশ শতাব্দীতেও রহস্যই রয়ে গেছে।

রোয়ানোক কলোনি

ষোড়শ শতাব্দীর শেষের দিকের কথা। রানি এলিজাবেথ উত্তর আমেরিকায় ইংরেজদের স্থায়ী বন্দোবস্ত করার উদ্দেশ্যে রোয়ানোক আইল্যান্ড স্থাপন করে। বর্তমানে যা উত্তর ক্যারোলিনার একটি অংশ। একে বলা হত রোয়ানোক কলোনি। এই কলোনির কাহিনী শুনলেই আপনার মনে পড়বে আটলান্টিসের কথা। অনেকটা সেরকমই এর কাহিনী।

অ্যাংলো-স্প্যানিশ যুদ্ধের পর এই কলোনির বাসিন্দারা হঠাৎ করেই অদৃশ্য হয়ে যায়। যার কারণে একে ‘দ্যা লস্ট কলোনি’ নাম দেয়া হয়। বিংশ শতাব্দীতে এসেও সেই কলোনির বাসিন্দাদের সঙ্গে কি হয়েছিল, কীভাবে হয়েছিল, তাদের এভাবে হঠাৎ করে হারিয়ে যাওয়ার কারণ কি, কিছুই জানা সম্ভব হয়নি। এ কারণেই রোয়ানোক কলোনি এখনও মানুষের নিকট রহস্যই রয়ে গেছে।

ওয়াও! সংকেত

ওয়াও! সংকেত (Wow! Signal)। আমরা সুন্দর কিছু দেখলেই বলে উঠি ওয়াও! এটার উৎপত্তি বা পেছনের রহস্যের কাহিনী জানেন কি? এটা কীভাবে আমাদের কথার মধ্যে চলে এলো? আসলে এটি একটি ন্যারোব্যান্ড বেতার সংকেত। ১৯৭৭ সালের ১৫ই আগস্টে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির বিগ এয়ার নামক রেডিও টেলিস্কোপে এই সংকেত ধরা পড়ে। পরবর্তীতে জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেরি আর. এহম্যান সংকেতটি বিশ্লেষন করতে গিয়ে অভিভূত হয়ে এর কম্পিউটার প্রিন্টআউটের পাশে ‘Wow!’ লিখেন যা থেকে এই সংকেতের নামকরণ করা হয়।

সাধারণত সৌরজগতের ভিতর থেকে এই ধরনের সংকেত আসার কথা নয়। এতে পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা দেখা যাওয়ায়, সংকেতটি সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল। এটি ৭২ সেকেন্ড ধরে বিরাজমান ছিল কিন্তু এরপর এই সংকেতটি আর পাওয়া যায়নি।

ভয়নিচ পান্ডুলিপি

১৫তম শতাব্দীর প্রথম দিকে সম্পূর্ণ অজানা এক ভাষায় লিখিত ভয়নিচ ম্যানুস্ক্রিপ্ট বা পান্ডুলিপি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় পান্ডুলিপি। উইলফ্রিড ভয়নিচ নামক এক বই ব্যবসায়ী এবং পান্ডুলিপি সংগ্রাহক ১৯১২ সালে এটি সংগ্রহ করেন। ভয়নিচের নামানুসারেই এই পান্ডুলিপির নামকরণ করা হয়। কিছু পাতা হারানো গেলেও, এর বর্তমান সংস্করণে প্রায় ২৩৪টি পাতা রয়েছে যার অধিকাংশই চিত্রালংকরণের সাথে গঠিত। পান্ডুলিপিটির অনেক বর্ণনাতে সে সময়ের ভেষজ পান্ডুলিপি, গাছপালার চিত্রালংকরণ এবং তাদের সম্ভাব্য ব্যবহার সম্পর্কিত তথ্য রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ এই পান্ডুলিপির আসল অর্থ উদঘাটন করতে পারেনি। অনেকে বলেন এলিয়েনদের লেখা বই এটি।

রঙ্গোরঙ্গো

ভয়নিচের মতো আরো এক রহস্যময় গ্লিফ পাওয়া যায় রাপা নুই (ইংরেজীতে ইস্টার এবং স্প্যানিশে ইস্লা দে পাস্কুয়া) দ্বীপে। ‘রঙ্গোরঙ্গো’ নামক এই গ্লিফটি রাপা নুই দ্বীপের আরেক রহস্য ‘মোয়াই’ সম্পর্কে লিখিত বলে ধারণা করা হলেও এখন পর্যন্ত তা পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়নি। মোয়াই হচ্ছে, রাপা নুইদ্বীপে সংকুচিত আগ্নেয় শিলায় খোদাইকৃত অনেকগুলো আবক্ষ মূর্তি। প্রত্যেকটি মূর্তি একেকটি আস্ত শিলা হতে খোদাই করা হয়েছে, প্রত্যেকটি মূর্তির ওজন ২০ টন এবং উচ্চতা ২০ ফুট। এ পর্যন্ত ৮৮৭টি মোয়াই সম্পর্কে জানা গেছে। তবে বর্তমানে ৩৯৪ টি মোয়াই দেখা যায়।

  • 4
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
উপরে