মৃত্যুর ৭৫ বছর পরে বিরল সম্মানে ভূষিত ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ গুপ্তচর নূর ইনায়েত খান

প্রকাশিত: ৩০-০৮-২০২০, সময়: ১৪:৪৩ |
Share This

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বিরল স্বীকৃতি পেলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত দুঃসাহসী ব্রিটিশ নারী গুপ্তচর নূর ইনায়েত খান। সম্মান জানাতে মধ্য লন্ডনে তার বসতবাড়ির সামনে বসছে মর্যাদাপূর্ণ ব্লু প্লেক। স্মৃতি ফলকটি ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে উদ্বোধন করবেন নূরের জীবনীকার শ্রাবণী বসু।

মাত্র ২৯ বছর বয়সে এই বাড়ি ছেড়েই দেশের জন্য গুপ্তচরবৃত্তির উদ্দেশে রেডিও অপারেটর পরিচয়ের আড়ালে নাৎসি কবলিত ফ্রান্সে যাত্রা করেন নূর ইনায়েত খান। ধরা পড়ার পরে জার্মান কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে হিটলারের নাৎসি বাহিনী।

ব্রিটিশ ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারীদের সম্মানে ১৫০ বছর ব্যাপী মরণোত্তর নীল ফলক প্রকল্প চালু করেছে ব্রিটেনের সরকার। কোভিড পরিস্থিতির কারণে লকডাউন পর্বে প্রথম ফলকটি বসতে চলেছে নূরের সম্মানেই। জীবনীকার শ্রাবণী বসুর বিবৃতিতে, ‘জীবনের শেষ অভিযানে যাওয়ার জন্য বাড়ি ছাড়ার সময় নূর হয়তো স্বপ্নেও ভাবেননি, একদিন সাহসিকতার প্রতীক হিসেবে তাকে গণ্য করা হবে। তিনি একজন অসাধারণ গুপ্তচর ছিলেন।’

আমেরিকান মা ও ভারতীয় রাজ পরিবারের সদস্য বাবার সন্তান নূরের জন্ম হয়েছিল রাশিয়ায়। তার শিক্ষাজীবন সম্পূর্ণ হয় ফ্রান্সে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সপরিবারে ফ্রান্স ছেড়ে ব্রিটেনে আশ্রয় নেন। মুসলিম সুফি ধর্মাবলম্বী পরিবারের মেয়ে নূর আজীবন অহিংসা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী হলেও দেশের প্রয়োজনে চরবৃত্তির মতো দুঃসাহসিক অভিযানে সাগ্রহে অংশ নিয়েছিলেন। প্রথম ব্রিটিশ নারী গুপ্তচর হিসেবে ১৯৪৩ সালে ছেড়ে আসা ফ্রান্সে ফিরে রেডিও অপারেটরের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

নাৎসি বিরোধী প্রতিবাদ দমন করতে অসংখ্য মানুষকে গ্রেফতার করে হিটলারের গেস্টাপো (পুলিশ) বাহিনী। সেই দলভুক্ত ছিলেন নূরও। জার্মান পুলিশ তাকে ব্রিটেনে ফেরার সুযোগ দিলে পরিচয় ফাঁস হওয়ার ঝুঁকি থাকলেও সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন নূর। তাঁকে পাঠানো হয় ডাখাউ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে। সেখানেই ১৯৪৪ সালে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। মৃত্যুর আগে তাঁর বলা শেষ কথা ছিল ‘লিবের্তে’, অর্থাৎ স্বাধীনতা।

পরবর্তীকালে অসাধারণ সাহসিকতার জন্য নূর ইনায়েত খানকে অন্যতম সর্বোচ্চ ব্রিটিশ সম্মান মরণোত্তর ‘জর্জ ক্রস’ প্রদান করা হয়। তার জীবনীকার শ্রাবণী বসুর নিরন্তর প্রচারের ফলে ২০১২ সালে লন্ডন শহরে নূরের মূর্তি বসায় ব্রিটিশ প্রশান।

ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনে সরকারি সম্মান জ্ঞাপনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা বিক্ষোভের মাঝে ব্রিটিশ প্রশাসনের এই উদ্যোগ সাহসিনীর স্মৃতির প্রতি উল্লেখযোগ্য শ্রদ্ধার্ঘ্য বলেই মনে করছেন শ্রাবণী বসু।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
উপরে