যখন স্বপ্ন বিলিয়ে যাই

প্রকাশিত: ২৩-০৪-২০২০, সময়: ০২:৪৩ |
Share This

মতিয়র রহমান মুন্না : একটু ভয় পেয়েছিলাম। কর্মরত অবস্থায় হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ি। সাথে ভয়ের মাত্রা বেড়ে যায়। কয়েকটা দিনে প্রায় দেড় হাজার লোকের কাছে কৃষি সেবা পৌঁছে দিতে গেছি আমরা। ফুসফুসের রোগ করোনার আতঙ্ক আমাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি, বরং আরো ব্যস্ততা বাড়িয়েছে। বাড়িয়েছে দায়িত্ববোধ।

লকডাউনে মানুষের যাতায়াত সীমিত। যানবাহন নিয়ন্ত্রিত থাকায় উপজেলা সদরে আসা কিছুটা কঠিন। উপজেলা পরিষদের ভবনটির অবস্থানও কেমন যেন। উপজেলার এক কর্ণারে৷ এক মাথা থেকে উপজেলার অপর মাথায় যেতে ১ঘন্টা গাড়ি ছুটাতে হবে৷ তাই মানুষের অসুবিধার কথা ভেবে কৃষি সেবা ফেরি করতে ছুটে গেছি মানুষের দোরগোড়ায়। যদিও মুখে মাস্ক ব্যতীত আর কিছু নেই, তবু মনে জোর ছিল। যতটুকু পারি সতর্ক থাকি। খারাপ কিছু হবে না ইনশাআল্লাহ। রাতের মধ্যেই সুস্থ হলাম। বুঝতে পারলাম-গত কয়েকদিন দুপুরের খাবারের অনিয়ম আর বরেন্দ্র এলাকার তীব্র রোদ আমাকে দূর্বল করে ফেলেছিল।

আল্লাহর রহমতে আর কোনো সমস্যা হয়নি৷ দুদিন পর হয়তো আজ সকাল থেকেই আবার ছুটে যাব “স্বপ্ন ফেরি করতে৷ একরাশ স্বপ্ন। ছবিতে সামনের বস্তা দেখতে পাচ্ছেন? ওর ভিতরে লুকিয়ে আছে দেশ বাঁচানোর স্বপ্ন। জ্বি, সঠিক শুনেছেন। সম্ভাব্য বিশ্বমন্দা ঠেকাতে বাংলাদেশ পূর্ণদমে খাদ্য উৎপাদনে মনোযোগ দিয়েছে। আমাদের কৃষিবিদদের স্লোগান – “করোনার পরবর্তী কাল, কৃষি ধরবে দেশের হাল। এটা নিছক একটা স্লোগান নয়। অন্তর্নিহিত ভাবার্থের ব্যাপকতা আছে। জাতিসংঘ দুর্ভিক্ষের আশংকা করছে৷ আমরা করিনি। কারণ আমাদের উর্বর জমি আছে। আছে নির্ভৃতচারী যোদ্ধা- আমাদের কৃষক। যাদের ঘামে মাটি ভিজে উৎপাদিত হয় সোনালী ফসল। আর এই ফসল আছে বলেই আমরা ছোট্ট দেশে ১৬কোটি মানুষ হয়েও খাদ্যের অভাব বুঝে উঠতে পারিনি এখনও।

দেশের অক্সিজেনসম এই কৃষকের প্রতি শত কৃতজ্ঞতা পোষণ করলেও ঋণ শোধ হবেনা। তারাও কৃতজ্ঞতা পেতে চায়না। তারা চায় আমরা যেন তাদের দুঃখটা বুঝি। তাদের শ্রমকে মাথায় রেখে আগামীর পথচলা নির্ধারণ করি। আর তাই ছুটে গেছি তাদের কাছে৷ ১৬কোটি মানুষের আহারের জন্য আগামীতে আরো খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে বিনামূল্যে সার ও বীজ দিতে এসেছি। এই বীজে ধান হবে। সবুজ ক্ষেতে সোনা ফলাবে আমার কৃষক। বিশ্বের বিভীষিকা আমাদের স্পর্শ করতে পারবেনা। এটাই স্বপ্ন৷ আর সেই স্বপ্ন বিলিয়ে দেওয়া আমার কাজ। আমি ভালোবাসি খাদ্য নিরাপত্তা সৈনিকদের একজন হিসেবে পরিচয় দিতে। এটা আমার অহংকার।

লেখক-
মতিয়র রহমান মুন্না
বিসিএস কৃষি (৩৬তম ব্যাচ)
কৃষি সম্প্রাসরণ অফিসার
গোদাগাড়ী, রাজশাহী।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
উপরে