শর্ত দিয়ে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া চালুর ঘোষণা

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২১; সময়: ২:০২ অপরাহ্ণ |
শর্ত দিয়ে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া চালুর ঘোষণা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে বুধবার থেকেই ঢাকা মহানগর এলাকায় বাসে ছাত্রছাত্রীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া চালুর ঘোষণা দিয়েছেন মালিকরা। তবে বাসে ‘হাফ’ ভাড়া দেওয়া যাবে কেবল সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৮টার মধ্যে। সরকারি ছুটির দিন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন, কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য ছুটির দিনে ‘হাফ’ ভাড়া দেওয়ার সুযোগ থাকবে না।

অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ছবিযুক্ত আইডি কার্ড দেখাতে হবে। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র ঢাকা মেট্রো এলাকার জন্য কার্যকর হবে, কোনোভাবে ঢাকার বাইরের জন্য কার্যকর হবে না। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হল।

ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর পরিবহন মালিকদের চাপে সরকার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ায়। এর পর থেকেই বাসে আগের মত অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল শিক্ষার্থীরা।

২৪ নভেম্বর সড়কে সিটি করপোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর সেই আন্দোলন আরও গতি পায়। পরদিন পথে পথে তাদের বিক্ষোভ-অবরোধে রাজধানী ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। এরপর ২৬ নভেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ১ ডিসেম্বর থেকেই বিআরটিসির বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘হাফ’ ভাড়া চালু হবে। সেজন্য ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে।

সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিআরটিসি বাসে চলাচলে এ সুবিধা পাবে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটির দিনে এ সুবিধা প্রযোজ্য হবে না বলে সেদিন জানান মন্ত্রী। বেসরকারি বাসেও শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়ার নিয়ম চালু করতে ২৫ ও ২৭ নভেম্বর পরিবহন মালিকদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠকে বসে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সেসব বৈঠক শেষ হয়।

২৭ নভেম্বরের বৈঠকে উল্টো বাস মালিকদের জন্য ভর্তুকি দাবি করা হয়। মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সেদিন দাবি করেন, ঢাকায় নগর পরিবহনের যে বাসগুলো চলে, তার মালিকদের ‘৮০ শতাংশই গরিব’। এ কারণে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের প্রস্তাব হচ্ছে, বাস মালিকদের ক্ষতিপূরণ বা ভর্তুকির বিষয়টি নির্ধারণ করেই হাফ ভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোন তহবিল থেকে এই ভর্তুকি আসবে সেটিও নির্ধারণ করতে হবে।

এদিকে প্রতিদিনই রাস্তায় নেমে নিরাপদ সড়ক, ‘হাফ’ ভাড়াসহ নয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। তারা ঘোষণা দেন, দাবি পূরণ না হলে মঙ্গলবার বিকালে তারা বিআরটিএ কার্যালয় ঘেরাও করবেন। এ পরিস্থিতির মধ্যেই সোমবার রাতে এরপর সোমবার রাতে পূর্ব রামপুরার ডিআইটি রোড বাসের চাপায় প্রাণ যায় মো. মাঈনউদ্দিন নামের এক শিক্ষার্থীর, যে এবারই একরামুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি দিয়েছিল।

এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীরা। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী গ্রিন অনাবিল পরিবহনের বাসটিসহ অন্তত আটটি বাসে তারা আগুন দেয়। মঙ্গলবার সকালে রামপুরা, মোহাম্মদপুরসহ কয়েকটি জায়গায় শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। এর মধ্যেই বেলা পৌনে ১২টার দিকে রমনার ইউনিক হাইটসে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা। রামপুরায় বাস চাপায় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তারা। তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনায় জড়িতদের শাস্তিও তারা দাবি করেন।

এনায়েত উল্যাহ বলেন, “ছাত্রদের দীর্ঘদিনের দাবি ও আন্দোলনের ব্যাপারে গত কয়েক দিনে আমরা দফায় দফায় সভা করেছি। ঢাকার ১২০টি পরিবহন কোম্পানির এমডি চেয়ারম্যান ও পাঁচটি পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি।

ছাত্রদের যে দাবি, সে দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে তা কার্যকর করার জন্য পহেলা ডিসেম্বর থেকে হাফ ভাড়া কার্যকরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, ছাত্ররা যেন হাফ ভাড়া নিশ্চিত করতে পারে সেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। কেবল ঢাকার জন্য কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল সেই প্রশ্ন তুলে একজন সাংবাদিক জানতে চান, অন্য শহরেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জন্য মালিকরা ‘অপেক্ষা’ করছেন কি না।

উত্তরে এনায়েত উল্যাহ বলেন, অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে শুধু ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতি। ছাত্ররা আন্দোলন করুক, তা তারা চান না। ছাত্রদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, তারা যেন এখন থেকে পড়ালেখায় মনোযোগ দেয়। রাস্তায় এই ধরনের আন্দোলন না করে স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে ফেরত যায়।

তিন দিন আগেও বিআরটিএ এর সাথে বৈঠকে পরিবহন মালিকরা শিক্ষার্থীদের দাবি মানতে নারাজ ছিলেন, উল্টো ভর্তুকির দাবি তুলেছিলেন। সেই অবস্থান থেকে তারা সরে এসেছেন কি না তা জানতে চান একজন সাংবাদিক।

এনায়েত উল্যাহ বলেন, ঢাকা শহরের বাস মালিকেরা গরিব মালিক, ৮০ শতাংশই গরিব মালিক। কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক এটাই বাস্তব। অনেক মালিক আছেন যার একটি গাড়ি। সেটা থেকে তাদের পরিবারের খরচ চালাতে হয়ে, ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হয়। ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। ৪০ শতাংশ আছেন যারা চালক থেকে মালিক হয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি বিবেচনায় করবেন বলে আমরা আশা করি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে