শুভ জন্মদিন উন্নয়নের কান্ডারি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১; সময়: ১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ |
শুভ জন্মদিন উন্নয়নের কান্ডারি

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : প্রথম হাঁটতে শিখেছেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আঙ্গুল ধরে। প্রথমে সেই বাড়িয়ে দেয়া হাত ধরে, পরে জাতির জনকের দেখিয়ে দেয়া পথ ধরে তিনি হাঁটছেন। আজও হাঁটছেন। হাঁটতে হাঁটতে পার করে দিয়েছেন ৭৪ বছর। চুয়াত্তর বছরের সবটুকু ন্যস্ত করেছেন দেশ মাতৃকার জন্য।

তিনি আর কেউ নন, তিনি হচ্ছেন দেশের দূরদর্শী, বলিষ্ঠ নেতা, মানুষের আশা-আকাঙ্খার বাতিঘর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ তাঁর ৭৫তম জন্মদিন, শুভ জন্মদিন উন্নয়নের কান্ডারি শেখ হাসিনা।

রাজনীতি শেখ হাসিনার জন্য নতুন কিছু নয়, জন্ম সূত্রে পাওয়া এক উত্তরাধিকার। শৈশব থেকেই তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক-সংগ্রামী জীবনকে দেখেছেন। এই ৭৪ বছরের মধ্যে অর্ধেকের বেশি সময় ধরে নৌকা নামের একটি প্রতীকের হাল ধরে আছেন। সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। জীবনের প্রায় সিকিভাগ পার করে দিয়েছেন সরকারপ্রধান হিসেবে দেশের হাল ধরে।

১৯ বার তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। মৃত্যু ভয়কে পায়ের ভৃত্য করে ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দেশ মাতৃকার জন্য। এখন জীবনের একটাই প্রত্যয়- জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়া। সে প্রত্যয় নিয়েই এগিয়ে চলছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

পাকিস্তানের জেল-জুলুম নির্যাতন সহ্য করে, বার বার মৃত্যুর মুখ দাঁড়িয়ে ১৯৭১ সালে অধিকারবঞ্চিত বাঙালীদের যেভাবে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ঠিক তেমনিভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের যেখানেই মানুষ তাঁর অধিকারবঞ্চিত হন, নিষ্পেষিত হবে মানুষ আর মানবতা, সেখানেই ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের এই দিনে মধুমতি নদী বিধৌত গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশবকাল কাটে পিত্রালয়ে। ’৫৪-এর নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা বাবা-মার সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন।

রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ছাত্রজীবন থেকে প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তিনি। শুধু জাতীয় নেতাই নন, তিনি আজ তৃতীয় বিশ্বের একজন বিচক্ষণ বিশ্বনেতা হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন নতুন ভূমিকায়। ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে ‘বিশ্ব মানবতার বাতিঘর’ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছেন বিশ্ব নেতাদের কাছ থেকে।

৪০ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় শেখ হাসিনা কেবল সেই মহান নেতার কন্যা এবং তাঁর রাজনীতির উত্তরসূরি হিসেবে গণমানুষের প্রধান নেতার আসনে স্থান পাননি, তিনি জেল-জুলুম, মামলা-হামলা, হত্যা প্রচেষ্টাসহ হাজারো হুমকির মুখে অটল থেকে নেতৃত্বের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

তিনি নব পর্যায়ের বাংলাদেশের নতুন ইতিহাসের নির্মাতা। হিমাদ্রি শিখর সফলতার মূর্ত-স্মারক, উন্নয়নের কান্ডারি। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার। সাগর সমান অর্জনে সমৃদ্ধ আওয়ামী লীগ সভাপতির কর্মময় জীবন। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রাজনৈতিক পথপরিক্রমায় ছাত্রনেত্রী থেকে জননেত্রীতে পরিণত হওয়া শেখ হাসিনার জন্মদিন পালিত হবে অতি সাধারণভাবেই। প্রতি বছর রাষ্ট্রীয় কাজে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদানের জন্য জন্মদিনের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই থাকতে হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এবারও তিনি দেশের বাইরে রয়েছে রাষ্ট্রিয় কল্যাণে।

১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। এরপর তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশের এই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিয়ে রাজনীতির মূল স্রোতধারার প্রধান নেতা হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

১৯৯৬ সালে তাঁর নেতৃত্বেই তৎকালীন বিএনপি সরকারের পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিজয় অর্জন করে আওয়ামী লীগ। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় প্রধান বিরোধী দলের নেতা হিসেবে তাঁর নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে প্রথমে ১৪ দলীয় জোট এবং পরে মহাঐক্যজোট গড়ে ওঠে। ১৪ দল ও মহাঐক্যজোটের তীব্র আন্দোলনের মুখে অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২২ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরী অবস্থা জারি করে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে ওই বছরের ১৬ জুলাই গ্রেফতার হন শেখ হাসিনা। সংসদ ভবন চত্বরের বিশেষ কারাগারে তাঁকে প্রায় ১১ মাস বন্দী থাকতে হয়। গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে এর আগেও কয়েক দফা গৃহবন্দী হয়েছেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বেই দেশে ফিরে আসে পুনরায় গণতন্ত্র, দেশের ইতিহাসে একটানা তৃতীয় মেয়াদসহ চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর পরিবারকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। তিনি পুরান ঢাকার মোগলটুলির রজনী বোস লেনে বসবাস শুরু করেন। পরে তিনি যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হন। আবাস স্থানান্তরিত হয় ৩ নম্বর মিন্টো রোডের সরকারী বাসভবনে। ১৯৫৬ সালে শেখ হাসিনা ভর্তি হন টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে।

এভাবেই শুরু হয় তাঁর শহরবাসের পালা, তাঁর নাগরিক জীবন। ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর ধানম-ির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িটির দারোদ্ঘাটন হয়। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারবর্গ মৃত্যুর পূর্বদিন পর্যন্ত এই বাড়িতেই অবস্থান করেন। ১৯৬৫ সালে শেখ হাসিনা আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ঢাকার বকশী বাজারের পূর্বতন ইন্টারমিডিয়েট গবর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারী মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে। ওই বছরই ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে কলেজ ছাত্রী সংসদের সহ-সভানেত্রী পদে নির্বাচিত হন।

রাজনৈতিক পরিবারে জম্নগ্রহণ করায় কিশোর বয়স থেকেই শেখ হাসিনার রাজনীতিতে পদচারণা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং ৬ দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। সহজ সারল্যে ভরা তাঁর ব্যক্তিগত জীবন।

মেধা-মনন, কঠোর পরিশ্রম, সাহস, ধৈর্য, দেশপ্রেম ও ত্যাগের আদর্শে গড়ে উঠেছে তাঁর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। পোশাকে-আশাকে, জীবন-যাত্রায় কোথাও তাঁর বিলাসিতা বা কৃত্রিমতার কোন ছাপ নেই। নিষ্ঠাবান ধার্মিক তিনি। নিয়মিত ফজরের নামাজ ও কোরান তেলাওয়াতের মাধ্যমে তাঁর দিনের সূচনা ঘটে। পবিত্র হজব্রত পালন করেছেন কয়েকবার।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র এবং দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায়ও ব্যাপক সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৯৬-২০০১ সালে তাঁর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি ও গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি তাঁর সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

তৃতীয় মেয়াদেই ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করেছেন। বর্তমানে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য পূরণে নিয়োজিত আছে।

দক্ষভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় সারাবিশ্বের অনেক সম্মানজনক পদকে ভূষিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর এই কন্যা। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। সমুদ্র জয়ের পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে মহাকাশও জয় করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিয়ানমার সরকারের ভয়াবহ নির্যাতনে আশ্রয়হীন ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে নাড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বকে, বিশ্ববিবেককে। আজ সারা বিশ্বেই তাঁর নাম আলোচিত হচ্ছে ‘বিশ্ব মানবতার বিবেক’, ‘মানবতার মা’ হিসেবে।

নিখাদ দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা, দৃঢ়চেতা মানসিকতা ও মানবিক গুণাবলী তাঁকে আসীন করেছে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে। তিনিই বাঙালীর জাতীয় ঐক্যের প্রতীক এবং ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল। আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক দৈন্যে আকণ্ঠ নিমজ্জিত একটি জাতি ও রাষ্ট্র কী কী প্রাজ্ঞায় এত উঁচুতে নিয়ে এসেছেন, তাঁর সফল নেতৃত্বেই উন্নয়ন-অগ্রগতি মহাসোপানে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, অতীত ও বর্তমান তুলনাতেই তা শুধু দেশের মানুষই নয়, বিশ্ব নেতাদের কাছেও বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। তাই সারাদেশে এখন শুধু একটাই স্লোগান- ‘শেখ হাসিনার হাতে থাকলে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ।’

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে