১৪ মাসে পানিতে ডুবে ৮৮৫ মৃত্যু

প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২১; সময়: ৬:১৮ অপরাহ্ণ |
১৪ মাসে পানিতে ডুবে ৮৮৫ মৃত্যু

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : গত ১৪ মাসে দেশে পানিতে ডুবে ৫০৯টি ঘটনায় ৮৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৮৩ শতাংশই শিশু। বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে গণমাধ্যম উন্নয়ন ও যোগাযোগবিষয়ক প্রতিষ্ঠান-সমষ্টি।

গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) সহযোগিতায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনা থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তবে পানিতে ডুবে মৃত্যুর সব ঘটনা গণমাধ্যমে উঠে আসে না বলেও জানায় সংস্থাটি।

মোট ঘটনা ও মৃত্যু

জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যম ও স্থানীয় পর্যায়ের অনলাইন নিউজ পোর্টালে ২০২০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫০৯টি ঘটনার কথা প্রকাশিত হয়েছে। এসব ঘটনায় সারাদেশে ৭৩৫ শিশুসহ মোট ৮৮৫ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা যান।

কোথায় কত মৃত্যু

পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে ঢাকা বিভাগে, ১৯৩ জন। এছাড়া চট্টগ্রামে ১৭২ জন, রংপুরে ১৪১, রাজশাহীতে ১১০, ময়মনসিংহে ১০০, বরিশালে ৬৬ ও খুলনা বিভাগে ৬১ জন মারা যান। এ সময়ে সবচেয়ে কম মৃত্যু ছিল সিলেট বিভাগে, ৪২ জন।

নেত্রকোনা জেলায় ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি মানুষ পানিতে ডুবে মারা যান, ৫০ জন। পরের জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা, নোয়াখালী, দিনাজপুর, গাজীপুর ও কুড়িগ্রাম। এসব জেলায় যথাক্রমে ৪৬, ৪৫, ৩৩, ৩৩ ও ২৭ জন মারা যান। শরীয়তপুর, খুলনা ও নড়াইল জেলায় কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।

বয়স

পানিতে ডুবে মৃতদের ৮৩ শতাংশই শিশু। চার বছর বা কম বয়সী ৩১০ জন, ৫ থেকে ৯ বছর বয়সী ২৮৪ জন, ৯-১৪ বছরের ১১০ জন এবং ১৫-১৮ বছরের ৩১ জন। ১৫০ জনের বয়স ১৮ বছরের বেশি।

একাধিক স্বজন হারিয়েছে ৬৩ পরিবার

৬৫ পরিবারের ১৭৪ জন সদস্য পানিতে ডুবে মারা যায়। যাদের মধ্যে শিশুর সঙ্গে ভাই অথবা বোনসহ ৫৯ জন, বাবা-মাসহ ১৭ জন, দাদা-দাদি বা নানা-নানিসহ ৪ জন, চাচাতো বা খালাতো ভাই বা বোনসহ ৮১ জন, চাচা-খালাসহ ১৩ জন মারা যান।

জেন্ডার

পানিতে ডুবে নিহতদের মধ্যে ৩২৭ জন নারী। এদের মধ্যে কন্যাশিশু ২৯৫ জন। পুরুষ মারা যান ৫৫২ জন, যাদের মধ্যে ৪৩৪ জন শিশু। প্রকাশিত সংবাদ থেকে ছয় জনের লৈঙ্গিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

দিনের কখন পানিতে ডুবছে

দিনের প্রথম ভাগে অর্থাৎ সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে ৩৫৫ জন এবং দুপুর থেকে সন্ধ্যার আগে ৩৫৬ জন মারা যান। এছাড়া সন্ধ্যায় ১৪৬ জন মারা যান। ১৭ জন রাতের বেলায় পানিতে ডোবেন। ১১ জনের মৃত্যুর সময় প্রকাশিত সংবাদ থেকে নিশ্চিত হয় যায়নি।

কোন মাসে বেশি মৃত্যু

২০২০ সালের জুন থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫৭৭ জন মানুষ পানিতে ডুবে মারা যান। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে আগস্ট মাসে, ১৭১ জন। জুন মাসে ৯১ জন, জুলাই মাসে ১৬৩ জন, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে যথাক্রমে ৭৪ ও ৭৮ জন মারা যান। সবচেয়ে কম সংখ্যক মৃত্যু ছিল ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, ১০ জন।

কারণ

৭১৬ জন কোনও না কোনোভাবে পনির সংস্পর্শে এসে ডুবে যান। বাকি ১১৬ জন মারা যান নৌযান দুর্ঘটনায়। পানিতে ডুবে মৃতদের মধ্যে ৫৫ জন বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন।

পরিবারের সদস্যদের যথাযথ নজরাদারি না থাকায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পানিতে ডোবার ঘটনা ঘটে। ৭০০ জন বড়দের অগোচরে বাড়ি সংলগ্ন পুকুর বা অন্য জলাশয়ে চলে যায় এবং দুর্ঘটনার শিকার হয়।

নৌযান দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে ২০২০ এর ২৯ জুন। বুড়িগঙ্গা নদীতে এমএল মর্নিং বার্ড নামের একটি লঞ্চ ময়ূর-২ নামের আরেকটি বড় লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায়। এতে ৩২ জন মারা যান। ৫ আগস্ট নেত্রকোনার মদন উপজেলায় হাওরে নৌকা ডুবে ১৭ জন মারা যান।

সুপারিশ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৭ সালে প্রকাশিত প্রিভেন্টিং ড্রাওনিং: অ্যান ইমপ্লিমেন্টেশন গাইডে স্থানীয় পর্যায়ের মানুষজনকে সম্পৃক্ত করে দিবাযত্ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে। এছাড়া পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি ও জাতীয়ভাবে কর্মসূচি গ্রহণ করার ওপরও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠান সুপারিশ করেছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে