ভারতে সাজা খেটে ফিরলেন রাজশাহীর ৬ জনসহ ৩০ বাংলাদেশি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২০; সময়: ৬:৫৭ অপরাহ্ণ |
ভারতে সাজা খেটে ফিরলেন রাজশাহীর ৬ জনসহ ৩০ বাংলাদেশি

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ভালো কাজের প্রলোভনে বিভিন্ন সীমান্ত পথে অবৈধভাবে ভারতে পাচার হওয়া ৩০ বাংলাদেশিকে সাজা ভোগের পর দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে ছয়জনের বাড়ি রাজশাহী বিভাগে। শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে তাদেরকে নিজ নিজ পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে তাদের হস্তান্তর করে।

এরা বিভিন্ন সময়ে পাচারকারীদের খপ্পড়ে পড়ে ভারতে পাচার হয়ে যান। পরে সেখানে পুলিশের হাতে আটক হলে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। সাজা শেষে দুদেশের সরকারের দেয়া বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে তারা আজ দেশে ফেরেন।

ফেরত আসা বাংলাদেশিরা হলেন-নওগাঁর কাথাপুকুর গ্রামের জহির আলীর ছেলে শহিদ (১৪), চাঁপাইনবাবগঞ্জের গাইপাড়া গ্রামের নাইমুল হকের ছেলে মিলন (১৪), পিরোজপুরের লক্ষনা নতুনপাড়ার শাহিন তালুকদারের ছেলে সাব্বির তালুকদার (১২), চট্টগ্রামের খানদোলার বাজার এলাকার মুজিব শেখের ছেলে ইব্রাহীম শেখ (১৪), ঠাকুরগাঁওয়ের বস্তপুর গ্রামের শুনিল রায়ের ছেলে বিপ্লব রায় (১৪), পাবনার বনগা বাড়ী গ্রামের তাহের আলীর মেয়ে মাহফুজা খাতুন (১৫), সাতক্ষীরার চম্পাপুর গ্রামের বাবুল সরদারের মেয়ে চুমকি খাতুন (১৪), রাজশাহীর গোপীনাথপুর গ্রামের আবুল কালামের মেয়ে লাবনী আক্তার (১৬), গোপালগঞ্জের খোলাথিয়া গ্রামের মুজিবর সিকদারের মেয়ে শাপলা সিকদার (১৬), খুলনার উত্তর মোকামপুর গ্রামের অহিদুলের মেয়ে নীলা খাতুন (১২)।

চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকার রশিদ হাওলাদারের মেয়ে উম্মে কুলসুম (১৩), খুলনার তেরখাদা গ্রামের আব্দুর রশিদের মেয়ে জুমিনি আক্তার (১৬) ও পারহাজি গ্রামের মুক্তার শেখের মেয়ে সায়রা খাতুন (১৯), জয়পুরহাটের ভিমপুর গ্রামের কালু শেখের মেয়ে কাকলী (১৬), মাগুরার খাসিয়ারা গ্রামের ইলিয়াছের মেয়ে আরুফা খাতুন (৩৫) ও একই এলাকার কালামিয়া মুন্সীর মেয়ে দিলারা (২২), আব্দুস সালমের মেয়ে জান্নাত আরা (৭), রিয়া আক্তার (১৪), সেলিম মিয়ার মেয়ে সাদিয়া আক্তার (১৬), মিনারা আক্তার (১৮), সালামের মেয়ে রুখসানা আক্তার (৫), ছেলে মো. সামি (৩), ঢাকার নাখালপাড়া এলাকার মমিন হোসেনের মেয়ে মুক্তা আক্তার (১৭)।

বাগেরহাটের পাথামারা গ্রামের আসলাম খানের মেয়ে তামান্না আক্তার খুশবু (১৭), বাগেরহাটের মাদারপাড়া গ্রামের হুমায়ুন কবিরের মেয়ে হুমাইরা খাতুন (১২), দিনাজপুরের মধ্য বাসুদেবপুর গ্রামের শফি আহমেদের ছেলে আমেদ আলী (১৪), নারায়ণগঞ্জের খাগানদা গ্রামের আলম মিয়ার ছেলে নুর ইসলাম (১৩), খুলনার তিপনা গ্রামের রবিন অধিকারীর ছেলে আকাশ অধিকারী (১৩) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মল্লিকপুর গ্রামের প্রতাপ ঘোষের ছেলে প্রকাশ ঘোষ (১৬)।

মানবাধিকার সংস্থা যশোর রাইটসের পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, ‌‘ফেরত আসাদের আমরা ও মহিলা আইনজীবী সমিতিসহ কয়েকটি এনজিও গ্রহণ করছি। এরা খুব ছোট বেলায় পাচারকারী চক্রের মাধ্যমে পাচার হয়ে ভারতে যান। এখন এরা অনেক বড় হয়ে গেছেন। তাই, এদেরকে এদের বাবা-মা, ভাই-বোন চিনতে পারবেন কি-না আশঙ্কা রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এদেরকে যশোরে নিয়ে আমাদের নিজস্ব শেল্টার হোমে রাখব। পরে তাদের অভিভাবক নিশ্চিত করে নিজ নিজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির এরিয়া কো-অর্ডিনেটর রেখা রানী বলেন, ‘এরা বিভিন্ন সময়ে পাচারকারীদের অপকৌশলের শিকার হয়ে ভারতে পাচার হন। পরে সেখানে পুলিশের কাছে আটক হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে জেল খাটেন। সেখান থেকে সেদেশের বেসরকারি এনজিও সংস্থা তাদেরকে ছাড়িয়ে নিয়ে শেল্টার হোমে রাখে। অবশেষে দুদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালির একপর্যায়ে বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যেমে তারা দেশে ফেরত আসতে পেরেছেন।’

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ওসি আহসান কবির বলেন, ‘ফেরত আসাদের বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানে তাদের আরও কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে।’

বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি মামুন খান বলেন, ‘ফেরত আসারা দীর্ঘদিন যাবত ভারতের জেলখানায় সাজা খাটেন। পরে দুদেশের এনজিও সংস্থা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে তাদেরকে স্বদেশে ফেরার অনুমতি নেয়। বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদেরকে কয়েকটি এনজিও সংস্থা গ্রহণ করেছে। তারা তাদেরকে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবে।’

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে