স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অভিন্ন আইনের প্রস্তাব ইসির

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২০; সময়: ১২:১২ পূর্বাহ্ণ |

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অভিন্ন আইনে করার প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য নির্বাচন কমিশন একটি অভিন্ন আইন ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান আইন, ২০২০’ প্রণয়ন করে এর খসড়া মতামতের জন্য কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অভিন্ন আইনের প্রস্তাবিত খসড়াটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। আগামী ১ নভেম্বর পর্যন্ত প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় মতামত দেওয়া যাবে। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত আইনের খসড়াটিতে মতামত গ্রহণের বিষয়ে বলা হয়েছে, মতামত, পরামর্শ ও সুপারিশ গ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত আইনের খসড়া নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট অংশিজনের কাছে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া সুবিধাভোগী এবং সুশীল সমাজের জন্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটেও তা প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় দেশের ১২টি সিটি করপোরেশন, ৩২৪টি পৌরসভা, ৬১টি জেলা পরিষদ, ৪৯২টি উপজেলা এবং ৪৫৬৯টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অভ্ন্নি আইনে করার কথা বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের অভ্ন্নি আইন প্রণয়নের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত আইন প্রণয়নকল্পে প্রশাসিনক আইনগুলো নির্বাচন বিষয়ক বিধানাবলী অক্ষুণ্ন অবস্থায় আলাদা করা হয়েছে। একই ধরণের উপাদান পুনরাবৃত্তি পরিহার করা হয়েছে। কতিপয় ইংরেজি পদ-পদবির বাংলা শব্দ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে।

এই আইন প্রবর্তন করা হলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের ভেতরে থাকা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ধারা, উপ-ধারা, দফা এবং উপ-দফাসমূহ বিলুপ্ত এবং রহিত থাকবে। ওই খসড়ায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের কাছে রাখা হয়েছে। এই আইনে বলা হচ্ছে- যদি কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয় যে কোনও প্রার্থী বা তার নির্বাচনী প্রতিনিধি বা তার নির্দেশে বা সম্মতিতে অন্য কোনও ব্যক্তি গুরুতর বেআইনি কাজ করছে, বিধান লঙ্ঘন করছে, লঙ্ঘনের চেষ্টা করছে, যার জন্য তিনি নির্বাচিত হওয়ার বা থাকার অযোগ্য হতে পারেন, তা হলে নির্বাচন কমিশন তদন্ত সাপেক্ষে তার প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবেন।

তবে এ আইন পাস হলে স্থানীয় সরকারের সব প্রতিষ্ঠানের আইনের সংশোধনী আনার প্রয়োজন হবে। ওই সংশোধনগুলো করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এছাড়া প্রস্তাবিত খসড়ায় বলা হয়েছে- স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন-২০০৯, উপজেলা পরিষদ আইন-১৯৯৮, জেলা পরিষদ আইন-২০০০, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ ও স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন-২০০৯ এ নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিভিন্ন অধ্যায় ও ধারা সংযুক্ত রয়েছে। ওইসব আইন থেকে নির্বাচন সংক্রান্ত বিধান আলাদা করতে স্বতন্ত্র আইন করা হচ্ছে।

খসড়া আইনে স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদবি ও নামেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এক্ষেত্রে ইংরেজি পদ-পদবি ও ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের পদবি পরিবর্তন করা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসারের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘নির্বাচন অধিকর্তা’, সহকারী রিটার্নিং অফিসারের পরিবর্তে রাখা হয়েছে ‘সহকারী নির্বাচন অধিকর্তা’, প্রিসাইডিং অফিসারের পরিবর্তে ‘ভোট কেন্দ্র অধিকর্তা’, পোলিং অফিসারের পরিবর্তে ‘ভোটকক্ষ অধিকর্তা’ আর নির্বাচনী এজেন্টের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘নির্বাচন প্রতিনিধি।’ স্থানীয় সরকারের কোনও প্রতিষ্ঠানে দৈব-দুর্বিপাকজনিত কারণে নির্বাচন করা সম্ভব না হলে, নির্বাচন কমিশন সুবিধা মতো সময়ে নির্বাচন করতে পারবে, এমন একটি বিষয়ও প্রস্তাবিত খসড়ায় যুক্ত করা হয়েছে।

নির্বাচনী অপরাধের কিছু কিছু ক্ষেত্রে শাস্তির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যমান উপজেলা আইনে বেআইনি কাজের জন্য সর্বনিম্ন ৬ মাস ও সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড এবং পৌরসভা আইনে সর্বনিম্ন ৬ মাস ও সর্বোচ্চ ৭ বছর সাজার বিধান রয়েছে। কিন্তু খসড়া আইনে এ অপরাধে সর্বনিম্ন ৬ মাস ও সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। নির্বাচনে ঘুষ গ্রহণের অপরাধে সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ডের বিধান খসড়া আইনে বহাল রাখা হয়েছে। জাল ভোট দেয়ার শাস্তিও আগের মতো ২ বছরই থাকছে।

ভোট গ্রহণ শুরুর আগে বা পরে সভা বা মিছিল করার অপরাধে খসড়া আইনের ৬ মাস থেকে ৭ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। একইভাবে অন্য সব ধারায় বিদ্যমান আইনগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাজার প্রস্তাব করা হয়েছে।

  • 91
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে