পরীক্ষা নেয়া অসম্ভব, তাই অটোপ্রমোশন : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২০; সময়: ৩:২১ অপরাহ্ণ |
পরীক্ষা নেয়া অসম্ভব, তাই অটোপ্রমোশন : প্রধানমন্ত্রী

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : যেহেতু এ বছর পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না, তাই প্রমোশন দিয়ে শিক্ষার্থীদের পরের শ্রেণিতে পড়াশোনা শুরু করার ব্যবস্থা নিতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (০৮ অক্টোবর) ইটনা মিঠামইন অষ্টগ্রাম অলওয়েদার সড়ক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালিত ভার্চুয়াল পাঠেও শিক্ষার্থীদের মনোযোগী হতে হবে। করোনাজয় করেই এগিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পণ্য পরিবহন ও মানুষের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা নিশ্চিত করতে তার সরকার সারাদেশে ‘যোগাযোগ নেটওয়ার্ক’ গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “সারা বাংলাদেশে একটা সড়কের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছি; যাতে করে যোগাযোগ ব্যবস্থাটা নৌপথগুলো সচল করা সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। রেলপথ সংযোগ পুনরায় স্থাপন করে এবং আরো নতুন নতুন অঞ্চলে রেললাইন সম্প্রসারণ করে রেলে যোগাযোগের সুযোগটা বাড়াচ্ছি। নৌপথে যোগাযোগ বাড়াচ্ছি, সড়ক পথে যোগাযোগ বাড়াচ্ছি।

যখন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হবে, মানুষের পণ্য পরিবহনের সুবিধা হবে। সেখানে মানুষের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বিতা ফিরে আসবে এবং বাংলাদেশ হবে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ।

কিশোরগঞ্জ জেলায় হাওরের বুকে ইটনা থেকে মিঠামইন হয়ে অষ্টগ্রাম পর্যন্ত ২৯.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৮৭৪.০৮ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এ সড়কের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছিলেন।

কর্মকর্তারা বলছেন, এ সড়ক নির্মাণের ফলে হাওরবাসীর চলাচলের দুর্ভোগ কমেছে, সৃষ্টি হয়েছে নতুন কর্মসংস্থানের। হাওরের বিশাল জলরাশির মাঝখানে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক এখন একটি আকর্ষণীয় পর্যটনস্থলে পরিণত হয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মহামান্য রাষ্ট্রপতিতে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। মহামান্য রাষ্ট্রপতি যদি এই উদ্যোগটা না নিতেন, আর বারবার আমাদেরকে না বলতেন, তাহলে তো এই অঞ্চলে যে এই রকমভাবে রাস্তা করা যায়, এটা হয়ত চিন্তারই বাইরে ছিল। কিন্তু আজকে তার অনুপ্রেরণা এবং তারই উদ্যোগে এই রাস্তাটি আমরা করতে পেরেছি। এই সড়ক হওয়ায় কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলের মানুষের এখন আর সেই ‘আগের মতো দুঃখ থাকবে না’ বলে আশা প্রকাশ করেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ইটনা মিঠামইন অষ্টগ্রামৃ ওই অঞ্চলের মানুষ বর্ষকালে যখন পানি, তখন নৌকায় যতায়াত করতে পারত । কিন্তু শুকনো মৌসুমে যাতায়াতের সুযোগ সুবিধা তেমন ছিল না পায়ে হাঁটা ছাড়া। সেই জন্য এলাকায় একটা কথা প্রচলিতই ছিল যে বর্ষায় নাও, শুকনায় পাও। আজকে আর সেটা না। এখন আর শুধু দুই পায়ে হাঁটতে হবে না। এখন গাড়ি ঘোড়া সবই চলবে, সেই ব্যবস্থাটা করা হয়েছে।

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমারও মনটা পড়ে থাকল এই রাস্তা দিয়ে কবে আমি একটু গাড়িতে চড়ে যাব। ইনশাল্লাহ এই করোনাভাইরাস শেষ হলে আমি আসব। অবশ্যই আমি আসব, এতে কোনো সন্দেহ নাই। কারণ আমারও ইচ্ছা ছিল এখানেৃ মহামান্য রাষ্ট্রপতিও বারবার চাচ্ছিলেন, আমি যেন সশরীরে যাই। কিন্তু আসলে এই করোনার কারণে তো যাওয়া হল না।

এই দুর্দিন কেটে যাবে- সেই আশা প্রকাশ করে সরকারপ্রধান বলেন, যখনই সুযোগ পাব, সবার আগে আমি এই জায়গায় আসব, এই রাস্তায় আসব; ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রামে আমি যাব। শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে তাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনাও এ অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার সাথে সাথে বাংলাদেশের মানুষের ভবিষ্যত আশা আকাঙ্ক্ষা সবই শেষ হয়ে যায়। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারে আসে। আমি ধন্যবাদ জানাই, বাংলাদেশের মানুষ আমাদের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল বলেই তাদের সেবা করার সুযোগ পাই।

আর বিশেষ করে এই অঞ্চলটাৃ বিশেষ করে ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রামের মানুষ চিরদিন নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছে। যত বাধা বিঘ্ন- যাই আসুক না কেন, সব সময় তারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে গেছে। আমি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের মানুষের জীবন জীবিকার উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে আমাদের এটাই লক্ষ্য যে মুজিবর্ষে আমরা এদেশের মানুষের দুঃখ, দুর্দশা দূর করে এদেশের মানুষকে একটা সুন্দর জীবন দেব।

কিন্তু এই মহামারী দেশের উন্নয়নের ধারা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব থেকে কষ্টের বিষয় হচ্ছে আমাদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না, কলেজে যেতে পারছে না, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। তাদের পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারপরও তাদের পড়াশোনা যাতে চলতে পারে, সেজন্য সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা যেন অব্যাহত থাকে। আর সেই সাথে কিছু খোলা বাতাসে থাকা বা রোদে থাকাৃ এটা করোনাভাইরাস রোধ করার জন্য একান্তভাবে প্রয়োজন। আপনারা সেটা মেনে চলবেন। আপনারা স্বাস্থ্য সুরক্ষাটা মেনে চলবেন, যাতে এই করোনাভাইরাসে আমাদের ছেলেমেয়েরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

অনুষ্ঠানের গণভবন প্রান্তে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর সচিব মো.তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।

আর কিশোরগঞ্জের মিঠামইন প্রান্তে ছিলেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, ডিসি মো.সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী।

  • 58
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে