বিকাশ প্রতারণার সদর দপ্তর ফরিদপুরের মধুখালী

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২০; সময়: ৭:৫২ অপরাহ্ণ |
খবর > জাতীয়
বিকাশ প্রতারণার সদর দপ্তর ফরিদপুরের মধুখালী

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : কল সেন্টারের নাম্বার ক্লোন করে প্রতারণা, অংকের ধাঁধায় ফেলে গ্রাহকের কাছ থেকে নেয়া হয় পিন নম্বর।

বিকাশ প্রতারণার সদর দপ্তর ফরিদপুরের মধুখালী। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতারণা কর্মকাণ্ডের পুরোটাই তদারকি করা হয় সেখান থেকে। বিকাশ কল সেন্টারের নাম্বার ক্লোন করা ছাড়াও ধাঁধায় ফেলে গ্রাহকের গোপন পিন নাম্বারও বের করে নিচ্ছে এই প্রতারক চক্র। মধুখালী থেকে চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ।

শুরুতেই বিকাশ দোকানদার সেজে গ্রাহকের কাছে ফোন করে জানতে চাওয়া অতিরিক্ত কোনো অর্থ তার বিকাশ অ্যাকাউন্টে গিয়েছে কি না। এ সময় না বুঝে অনেকেই টাকাও দিয়ে দেন। আর যারা বিষয়টি বুঝে ফেলেন তাদেরকে বলা হয় বিকাশ অফিস থেকে তাকে ফোন করা হবে। সঙ্গে এসএমসে জানানো হয় তার অ্যাকাউন্টটি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।

এবার বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করে বিকাশের কল সেন্টার থেকে ফোন। মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে বিকাশ কল সেন্টারের নাম্বার। কিন্তু এখানেও শুভঙ্করের ফাঁকি। যা একটি বড় কৌশল। বিকাশের কল সেন্টারের নাম্বার ১৬২৪৭। তবে, ফোনটি যে নাম্বার থেকে আসে তার সামনে থাকে প্লাস ও একটি শূন্য। আসল ও নকল বিকাশ কল সেন্টারের নাম্বারের সামান্য এই পার্থক্য ধরতে পারেন না অনেকেই।

এবার কথিত কল সেন্টার থেকে পাঠানো ওটিপি বা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড জানতে চাওয়া হয়। প্রতারিত হয়ে অনেকেই ওটিপি এবং পিন নাম্বার বলে দেন। তবে, কেউ ওটিপি এবং পিন নাম্বার বলতে না চাইলে একটি সহজ অংক করার কথা বলা হয় যা পিন নাম্বার হাতিয়ে নেয়ার অন্যতম কৌশল।

১৬২৪৭ কে তার পিন নাম্বারটি দিয়ে গুণ করতে বলা হয়। ধরা যাক কারো পিন নাম্বার ১২৩৪। এর সাথে ১৬২৪৭ দিয়ে গুণ করলে যে সংখ্যা আসে সেটি জানতে চাওয়া হয়। গ্রাহক এই সংখ্যাটি বলে দেয়ার পর হ্যাকাররা ১৬২৪৭ দিয়ে সংখ্যাটিকে ভাগ দেয়। বেরিয়ে আসে একেবারে আসল পিন নাম্বার। গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় হ্যাকারের কাছে।

প্রতারণার প্রাথমিক কাজ বিকাশের বিভিন্ন দোকানে ঘুরে ঘুরে ক্যাশ ইন রেজিস্ট্রারের ছবি তোলা। সেই ছবি হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা অন্যকোনো মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হয় মূল হ্যাকারদের কাছে।

এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন সরকারের এক উপসচিব এবং তার ছেলে। পুলিশের কাছে আসছে বিস্তর অভিযোগ। আর এই প্রতারণার কাজে হ্যাকাররা ব্যবহার করে আইফোন। অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর প্রতারকদের একটি দল ভুক্তভোগীর অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা তুলে নিয়ে কমিশন রেখে পাঠিয়ে দেন মূল হ্যাকারদের কাছে।

ফরিদপুরের মধুখালীর ডোমাইন গ্রামে বসে হ্যাকার সালমান আর টিটু নিয়ন্ত্রণ করে চক্রটি। সেখানে তাদের এই কাজে সহযোগিতা করে আকাশ আর নয়ন। মোহাজ্জেল আর লিটন ঢাকা থেকে টাকা তুলে পাঠিয়ে দেন ফরিদপুরে। আর বিকাশের বিভিন্ন দোকান থেকে রেজিস্ট্রার খাতার ছবি তুলে পাঠান রানা।

বিকাশ প্রতারণায় জড়িত ৭ জনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, বিকাশ কর্তৃপক্ষ কিছুতেই এসব প্রতারণার দায় এড়াতে পারেনা। আর গ্রাহককেও সচেতন হওয়ার পরামর্শ তাদের। পুলিশ বলছে বিকাশের প্রতারণা অনেক পুরানো। তবে এ কৌশলটি একেবারে নতুন। আর অংকের ধাঁধায় ফেলে পিন নাম্বার হাতিয়ে নেয়ার ধরনটি আরো নতুন।

  • 17
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে