ধর্ষকদের ‘ক্রসফায়ার’ দেয়ার দাবি সংসদে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২০; সময়: ১০:১২ পূর্বাহ্ণ |
ধর্ষকদের ‘ক্রসফায়ার’ দেয়ার দাবি সংসদে

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : দেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগের মধ্যেই ধর্ষককে ‘ক্রসফায়ারে’ মেরে ফেলার দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদে।

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির একজন সদস্য সংসদে এ প্রস্তাব তুলেছেন, তার দলের এক নেতার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতাও তাতে সমর্থন জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন সাংসদরা।

বিতর্কের সূত্রপাত করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াস সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হলো। ধর্ষণের পর যদিও সরকারের পক্ষ থেকে জরুরিভাবে সেই ধর্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তার করার পরও জনমনে অনেক প্রশ্ন উঠেছে এটার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের পর পরই সাভারে একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। এরপর ধামরাইতে একই ঘটনা ঘটে।

পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ২০১৯ সাল ধর্ষণের মহাৎসব ঘটেছে। কেন ধর্ষণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে? এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?

এ বিষয়ে সংসদে দুই ঘণ্টার জন্য সাধারণ আলোচনার সুযোগ দিতে স্পিকারের কাছে দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দলের প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ যখন ক্ষমতায় ছিলেন, ওই সময় এসিড নিক্ষেপ করে হত্যাকাণ্ড বেড়ে যায়। তখন এরশাদ সাহেব এটা প্রতিরোধে এসিড মারার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করেছিলেন। এখন ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। কিন্তু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে এটা কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না। তাই সময় এসেছে চিন্তা করার, ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হোক।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, এতো ঘটনা ঘটছে, মাদকের জন্য এতো ক্রসফায়ার হচ্ছে। সমানে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়। কিন্তু এই ধর্ষণের মতো জঘণ্য অপরাধ, এখন পর্যন্ত কেন একজন ধর্ষক বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় না? বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে যদি ব্যবস্থা না নেওয়া যায়, তবে কোনক্রমেই এটা কন্ট্রোল করা যাবে না। এজন্য প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে।

একই দাবি জানিয়ে জাতীয় পার্টির অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, টাঙ্গাইলে বাসে ধর্ষণের পর পর পুলিশ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করলো। সেদিন যদি পুলিশ ওই পাঁচ ধর্ষককে মধুপুরে নিয়ে গুলি করে মারত, তাহলে কিন্তু অন্য কেউ আবার ধর্ষিত হতো না।

তিনি বলেন, একটার পর একটা ধর্ষণ হচ্ছে। মেয়েরা বাসে ওঠে, ওই বাসে আগে থেকেই ৪-৫ জন থাকে। নারীরা ওঠার পর দেখা যায় ওরা যাত্রী না, ওরা ধর্ষক। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের পর একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হোক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য, সেখানে গুলি করে মারা হোক।

তিনি আরো বলেন, ধর্ষকদের একমাত্র শাস্তি হওয়া উচিত এনকাউন্টারে দিয়ে মেরে ফেলা। যাতে আর কোনো ধর্ষক যেন সাহস না পায়। ধর্ষক গ্রেপ্তার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে ওইখানে গুলি করে মেরে ফেলা হোক।

কাজী ফিরোজ রশীদ ও মুজিবুল হক চুন্নুর এমন দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, তোফায়েল আহমেদ বলেন, ভারতে একবার বাসে এক নারীকে ধর্ষণ করা হয়। পরে সেখানে ওই ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার করে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলা হয়। তারপর ভারতে ধর্ষণের ঘটনা কমে যায়। আমাদের নাতি-নাতনি আছে। যাদের নিয়ে আমরা প্রতিদিন চলি। এটা হতে পারে না। প্রথমত, এখানে আইনমন্ত্রী আছেন। তিনি এ বিষয়ে কঠোর আইন করবেন। আর দ্বিতীয়ত, যারা এ কাজ করেছেন তাদের এই পৃথিবীতে থাকার কোনো অধিকার নেই। এজন্য আমি চুন্নুর প্রস্তাবকে সমর্থন করি।

এরপর তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, আমি টুপি মাথায় দিয়ে আল্লাহকে হাজির-নাজির করে বলছি এদের ক্রসফায়ারে দিলে কোন পাপ হবে না বরং বেহেশতে যাওয়া যাবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে