কোরবানির হাটে ৫ ফুট দূরত্বে থাকবে পশু

প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২০; সময়: ৯:২২ অপরাহ্ণ |
খবর > জাতীয়
কোরবানির হাটে ৫ ফুট দূরত্বে থাকবে পশু

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমনে টালমাটাল গোটা বিশ্ব। এপরিস্থিতির মধ্যেই দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এক্ষেত্রে পশু বেচা কেনার জন্য বরাবরের মতোই বসবে হাট। তবে ঝুঁকি এড়াতে এবার হাটগুলোতে মানতে হবে একটু ব্যতিক্রম নিয়মকানুন।

অর্থাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন কোরবানির পশুর হাটে একটি পশু থেকে আরেকটি পশুর দূরত্ব পাঁচ ফুট রাখাসহ বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোরবানির পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধির প্রয়োগ বলতে গেলে অসম্ভব। সেক্ষেত্রে ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে’ পশুর হাট বসানো হলেও দেশে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা জানায়, সরকারি পরামর্শ ও নির্দেশনা অনুযায়ী চলবে সারাদেশের পশুর হাট। এক্ষেত্রে একটি পশু থেকে আরেকটি পশুর দূরত্ব রাখতে হবে পাঁচ ফুট। পাশাপাশি পশুর হাট বসানোর জন্য পর্যাপ্ত খোলা জায়গা নির্বাচন, মুখে মাস্ক না থাকলে ক্রেতা-বিক্রেতাকে হাটে প্রবেশ করতে না দেয়া, হাটের প্রবেশ পথে তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণকারী যন্ত্র স্থাপন, শুধুমাত্র স্বাভাবিক তাপমাত্রা (৯৮ দশমিক ৪ ফারেনহাইট) সম্পন্ন ব্যক্তিদের হাটে প্রবেশ করতে দেয়া এবং অনলাইনে কোরবানির পশু কেনাবেচায় উদ্বুদ্ধ করাসহ বিভিন্ন পরামর্শ তৈরি করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন শীর্ষ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, আসন্ন পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। পরামর্শগুলো চূড়ান্ত হলে তা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও অনলাইনে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশিত হবে। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পবিত্র ঈদ-উল-আজহায় সারাদেশে কোরবানির পশুর হাট থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি ও পরামর্শ মেনে চললে হয়তো সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যাবে।

তবে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাট বসানো সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাংলাদেশে কোরবানির পশুর হাট বসানো সম্ভব না। তাছাড়া গত ঈদে (ঈদুল ফিতর) মানুষের অবাধ চলাচলে কারণে সংক্রমণ বেড়েছে। এই ঈদে সেই সুযোগ দেওয়া যাবে না। কারণ গরুর হাটই তো শেষ কথা নয়। দেখা যায় কোরবানি দেওয়ার সময়েও পাঁচ থেকে ১০ জন লোককে কাছাকাছি থেকে কাজ করতে হয়। এরপর আছে বিতরণ। তার ওপর এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে নিম্ন আয়ের মানুষরা কিন্তু সেদিন অল্প কিছু মাংস পাওয়ার আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরতে পারেন। ঈদে শহর-গ্রামের মধ্যে মানুষের যাতায়াতও বাড়বে। সব মিলিয়ে দেশে যখন সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী, তখন ঈদুল আজহা ও পশুর হাটের কারণে সংক্রমণের হার আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছেই।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, কোরবানির ঈদ মানেই বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। এই ঈদ উপলক্ষে পশুর হাট বসা মানেই কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া। কারণ এখানে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ গবাদি পশু বেচাকেনায় যুক্ত থাকেন কয়েক লাখ খামারি-ব্যবসায়ী। তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মধ্যে চলাচল করেন। হাটে গরু কিনতে যান দুই থেকে তিন কোটি মানুষ। সুতরাং দেখা গেল, ক্রেতারা বিভিন্ন স্থান থেকে সংক্রমণ নিয়ে হাটে আসতে পারেন। খামারি বা গরু ব্যবসায়ী হয়তো সেই সংক্রমণ নিয়ে গ্রামে ফিরে যাবেন। বিক্রেতাদের কাছ থেকেও ক্রেতাদের মধ্যে ছড়াতে পারে। আসলে পুরো বিষয়টিই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

স্বাস্থ্যবিধি মেনেই তো হাট বসানোর কথা বলা হয়েছে, সেক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. বেনজির বলেন, গরু-ছাগলের হাট কিন্তু কঠিন জায়গা। এখানে যারা যুক্ত থাকেন, তাদের প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। সুতরাং তাদের পক্ষে আসলে স্বাস্থ্যবিধি মানা কতটুকু সম্ভব, সেটা বিবেচনা করার বিষয়। সেখানে চিৎকার, হৈ চৈ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কিছু হবে। এ সময়ে আসলে ড্রপলেটের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকবে অনেক বেশি। কেবল বিক্রির সময়েই এভাবে তিন থেকে চার কোটি মানুষ বাড়তি ঝুঁকির মধ্যে ঢুকে পড়বেন। পশু কোরবানির ক্ষেত্রেও একই কথা, স্বাস্থ্যবিধি মানা কি সম্ভব হবে?

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, আক্রান্তের হার আগে যেসব এলাকায় কম ছিল, সেসব এলাকায় কিন্তু সংক্রমণ বাড়ছে। কারণ গত ঈদে আমরা আসলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। খুলনা বিভাগ, রংপুর বিভাগ, রাজশাহী বিভাগে ওই ঈদের আগ পর্যন্তও সংক্রমণ যথেষ্ট কম ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি বলে এসব এলাকায় সংক্রমণ বাড়ছে। সিলেটেও আক্রান্ত বাড়ছে। এর অর্থ— রোজার ঈদের আগে আমাদের যেসব অনাক্রান্ত এলাকা ছিল, সেসব এলাকা আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারণে আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ চক্রে ঢুকছি। সেটার লক্ষণই এখন প্রকাশ পাচ্ছে। তাই কোরবানির বাস্তবতা মেনে নিলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় এ বিষয়ে বিজ্ঞানসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত প্রয়োজন, যার অভাব অভাব প্রকটভাবে দেখা যাচ্ছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে