সামনে ভয়ংকর দিন!

প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০২০; সময়: ৩:৩৭ পূর্বাহ্ণ |
সামনে ভয়ংকর দিন!

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বাংলাদেশের সামনে আরো ভয়ংকর দিন আসছে। দেশ জুড়ে করোনার সুনামি বয়ে যেতে পারে। এখন থেকে মানুষকে ঘরে রাখা না গেলে আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। তাই মানুষকে ঘরে রাখতে কঠোর হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে যেহেতু বলা হয়েছে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাই রোগ হওয়ার আগেই ব্যারিকেড দিতে হবে। এক্ষেত্রে মানুষকে ঘরে রাখতে অ্যাকশনে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। এমনিতে সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে আসছে, তার ওপর দেশের গার্মেন্টসগুলো খুলে দেওয়া হচ্ছে। এতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে।

এ পর্যন্ত দেশের ১০ জেলার মানুষ করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। জেলাগুলো হলো ঢাকা, মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাইবান্ধা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, কুমিল্লা, রংপুর, চুয়াডাঙ্গা ও কক্সবাজার। করোনা ভাইরাস পরীক্ষার আওতা বাড়ানোর পর এক দিনেই নতুন করে নয়জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে আরো দুই জনের। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আটজনে, আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭০।

দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর এক দিনে নতুন রোগীর এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যা। আক্রান্তদের মধ্যে আরো চার জন সুস্থ হয়ে ওঠায় এ পর্যন্ত মোট ৩০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

এদিকে, করোনা নিয়ে এখনো সচেতন নন দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন। করোনা সংক্রমণের ভয় উপেক্ষা করে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় জনসমাগম অব্যাহত রয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহলের মধ্যেও রাস্তার মোড়ে মোড়ে জটলা পাকাচ্ছে অনেকেই। সরকারি নিষেধাজ্ঞা না মেনে গ্রামের হাট-বাজারে চলছে কেনাকাটা। আবার হোম কোয়ারেন্টিন না মেনে চলছে জুয়ার আসর, চায়ের আড্ডা ও গল্প। কোথাও কোথাও লকডাউন উপেক্ষা করেই চলছে গণজমায়েত।

অনেক জায়গায় ত্রাণ বিতরণের কার্যক্রমে ব্যাপক জনসমাগমের ঘটনাও ঘটছে। ঘরের বাইরে আসা এসব সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়া গার্মেন্টস খোলার ঘোষণার পর ঢাকামুখী হচ্ছে অসংখ্য মানুষ।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ জানান, অনেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন না। এর জন্য সামনে ভয়ংকর দিন অপেক্ষা করছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, ‘আমাদের জন্য সামনের দিনগুলো খুবই ভয়ানক। ইউক্রেনে সম্প্রতি আক্রান্তের সংখ্যা স্বল্প মাত্রায় দেখা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সেদেশে শত শত কবর খোঁড়া হচ্ছে আর আমরা গার্মেন্টস খুলে দিচ্ছি। এর মাধ্যমে আরা উলটো পথে হাঁটছি। জনসাধারণের ঘরে থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কিন্তু অনেকে মানছেন না।

বাংলাদেশের মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, বিজ্ঞানের ভাষা অনুযায়ী দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সামনে বাড়বে। সম্প্রতি বিশ্বের যেসব দেশ আক্রান্ত হয়েছে, সেসব দেশে প্রথমে অল্প মানুষ সংক্রমিত হলেও পরে ব্যাপক হারে দেখা দিয়েছে। এটাই করোনা ভাইরাসের চরিত্র।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও বিএমএর কার্যকরী সদস্য ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, সামনে ভয়ংকর দিন আসছে, ঝুঁকি আছে। জরুরি প্রয়োজনে গার্মেন্টসগুলো খোলার প্রয়োজন হলে অবশ্যই তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, অত্যাবশ্যকীয় ও জরুরি প্রয়োজনে গার্মেন্টস খোলা রাখা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে গার্মেন্টসগুলো চালাতে হবে। আগের নিয়মে চালালে ঝুঁকি আছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে