আমার কি করোনা হয়েছে, বুঝব কী উপায়ে?

প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২০; সময়: ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ |
আমার কি করোনা হয়েছে, বুঝব কী উপায়ে?

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। বদলে যাচ্ছে উপসর্গের ধরন। পরিচিত অনেকেই করোনা আক্রান্ত। ব্যাপারটাকে অনেকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। অনেকে আবার আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে যাদের কাজের প্রয়োজনে নিয়ম করে বাইরে বের হতে হচ্ছে তাদের অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে ভাবছেন তারা করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন কিনা।

এমন পরিস্থিতে এ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিলেন কয়েকজন চিকিৎসক। তারা জানালেন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর, কোন পরীক্ষা ছাড়াই আক্রান্ত হয়েছেন কি না। সেটা সম্পূর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যাবে।

তাদের মধ্যে চিকিৎসক জ্যোতিষ্ক পাল জানালেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ হলে শুরুর দিকে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও গলা ব্যথার মতো উপসর্গ নিয়ে রোগীরা এলে কোভিড টেস্ট করে রোগ নির্ণয় করা হচ্ছিল। এর পর হাসপাতালে এমন কিছু রোগী আসতে শুরু করলেন যাদের সিনকোপ, অর্থাৎ সাময়িক ভাবে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ইতিহাস ছিল। এদের অনেকের শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে কমে যাওয়ায় ঝিমিয়ে পড়েন। রুটিন মতো এদের কোভিড টেস্ট করে কোভিড-১৯ ভাইরাস পাওয়া গেল।

তিনি জানান, ইদানিং বেশ কিছু কোভিড রোগী আসছেন নিউরোলজিক্যাল, অর্থাৎ নার্ভের সমস্যা নিয়ে। একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক স্ট্রোক নিয়ে ভর্তি হওয়ার পর দেখা গেল তার স্ট্রোকের কারণ কোভিড-১৯। হার্ট ব্লক বা অ্যারিদমিয়া অর্থাৎ হৃদ্স্পন্দনের ছন্দ বিঘ্নিত হলেও কোভিড পজিটিভ হতে পারে।

জ্যোতিষ্কবাবু জানালেন হার্ট অ্যাটাক, ব্রেন স্ট্রোক, সিনকোপ বা সাময়িক জ্ঞান হারানোর মতো উপসর্গ নিয়েও করোনার রোগীরা আসছেন। এছাড়া শরীরে এমন কোনও অস্বস্তি হচ্ছে যা আগে কখনও হয়নি। সেই ধরণের উপসর্গ থাকলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বললেন জ্যোতিষ্ক পাল। আসলে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণে মাইক্রোভেসেলস, অর্থাৎ শরীরের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম রক্তজালিকাতে রক্তের ডেলা আটকে যায়। ফলে অক্সিজেনযুক্ত রক্তের অভাবে নানান বিপত্তি দেখা যায়। ফুসফুসে হলে শ্বাসকষ্ট, হৃদপিণ্ডে হলে হার্ট অ্যাটাক ও মস্তিষ্কে হলে স্ট্রোক হয়।

এবিষয়ে মেডিসিনের চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় জানালেন, করোনা আক্রান্তদের কী ধরনের উপসর্গ দেখা যাবে তা কিছুটা নির্ভর করে ভাইরাল লোডের উপর। অর্থাৎ যার শরীরে ভাইরাল লোড কম, তিনি সাধারণত অ্যাসিম্পটোম্যাটিক থাকবেন, অর্থাৎ উল্লেখযোগ্য কোনও উপসর্গ দেখা যাবে না। মাঝারি মানের ভাইরাল লোড হলে অল্প জ্বর, গা ম্যাজ ম্যাজ করা, সামান্য গলাব্যথার মতো সমস্যা হতে পারে, আর ভাইরাল লোড বেশি হলে শরীর বেশি খারাপ হবে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কোভিড টেস্ট করানো উচিত।

এই দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, অসুখটাকে কোনওমতেই উপেক্ষা করা উচিত নয়। আক্রান্ত এলাকার বাসিন্দাদের প্রত্যেকেই সংক্রমিত হতে পারেন। ছোটখাট কোনও রকম লক্ষণ দেখলে অবশ্যই ক্লিনিশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

এক নজরে জেনে নেওয়া যাক কী কী লক্ষণ দেখলে করোনার আশঙ্কা করতে পারেন।

১. গলা ব্যথা, সর্দি

২. শুকনো কাশি

৩. জ্বর জ্বর ভাব

৪. দুর্বলতা, গা ম্যাজম্যাজ করা

৫. মাথা, গা, হাত-পা ব্যথা করা

৬. জিভের স্বাদ ও গন্ধের বোধ চলে গিয়ে খাবার খেতে অনীহা

৭. মাথা ব্যথা

৮. চোখ লাল হয়ে জল পড়া

৯. ডায়ারিয়া ও পেটে ব্যথা

১০. হাত ও পায়ের আঙুলের রং বদলে যাওয়া

১১. ত্বকে র‍্যাশ ও চুলকানি

১২. বুকে চাপ ধরা ভাব ও যন্ত্রণা

১৩. নিঃশ্বাসের কষ্ট, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে যাওয়া

১৪. আচমকা কয়েক মিনিটের জন্যে ব্ল্যাক আউট হয়ে যাওয়া

১৫. কথা বলতে অসুবিধে হওয়া।

উপরের উপসর্গের কোনও একটি দেখলেই যে আতঙ্কিত হয়ে হাসপাতালে দৌড়াতে হবে তা নয়। লক্ষণগুলি যদি থেকেই যায়, সমস্যা বাড়তে শুরু করে তখন অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। বাড়িতে থাকুন, দূরত্ববিধি মেনে মাস্ক পরে কোভিড ১৯ কে দূরে রাখুন।

  • 57
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে